লিখাটি একজনের ফেসবুক একাউন্ট থেকে সংগ্রহ করা। এর সত্য-মিথ্যার দায় ছারপোকা ম্যাগাজিন কর্তৃপক্ষের না…
“আমাকে সবাই ক্ষমা করবেন”
এই দেশ এই দেশের সিস্টেম একজন নাগরিক হিসেবে কি আমার? গত ১২ দিন ধরে আমি জ্বর, প্রচন্ড গলা ব্যথা, শুকনা কাশি, কফ, প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট এবং ফাইনালি তীব্র পেট ব্যথায় ভুগছি। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সকল লক্ষণ নিয়ে যখন অপেক্ষা করছিলাম তখন বন্ধুরা জোর করে যোগাযোগ করে IEDCR এর হেল্প লাইনে। তার মধ্যে ইন্ডিয়া থেকে গেস্ট এসেছিল। তাদেরকে এয়ারপোর্টে পৌঁছে দিতে গিয়ে তারা বৃদ্ধ মানুষ হওয়ায় তাদের লাগেজের ট্রলিটা খালি হাতে ধরে বোর্ডিং পাসের জন্য ট্রলি ঠেলে নিয়ে গেছিলাম। এরপর ইমিগ্রেশনের গেট পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে ফিরে এসেছি।
তখন প্রতিদিন চায়নায় মানুষ মরছে করোনা ভাইরাসের প্রকোপে। কিন্তু আমার তা মাথায় ছিল না। এয়ারপোর্টের ট্রলি জীবন কেড়ে নেয়ার ক্ষমা রাখতে পারে ভাবিনি। এরপর যা হওয়ার হয়েছে।
এটা ছিল ১০ মার্চের ঘটনা। ১২ তারিখে একটা আইসক্রিম খেয়েছিলাম শখ করে, প্রায় সাথে সাথেই গলা ব্যথা শুরু হয়েছিল। এরপর ১৪ তারিখে তীব্র গলা ব্যথা আর শরীর কাঁপিয়ে জ্বর। জ্বরে তেমন কিছু মনে হয়নি, কিন্তু এরকম গলা ব্যথা আমার জীবনে আগে কখনও হয়নি। মনে হয়েছিল কেউ গলা চেপে ধরেছে এবং নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। অথচ আমার চেস্ট পরিষ্কার। দীর্ঘদিন এজমা থাকায় আমি জানি কোনটা এজমার এট্যাক। কিন্তু এটা ঠিক সেরকম ছিল না। তীব্র গলাব্যথার জন্য ছিল এই শ্বাসকষ্ট। আমার খালাতো বোন বারডেমের মেডিসিনের ডাক্তার। আমার ডায়াবেটিসের চিকিতসাও উনি করেন। ওনাকে জানানো মাত্র এন্টিবায়োটিক দেন। খেতে শুরু করি।
কিন্তু শ্বাসকষ্ট থামে না, থামে না তীব্র গলা ব্যথাও। এভাবে ৯ দিন যাবার পর অবস্থা দিনকে দিন খারাপ হতে শুরু করে। যুক্ত হল নেবুলাইজার। দিনে ৬ বার ইনহেলারের সাথে যুক্ত হয় ৬ বার নেবুলাইজার। কিন্তু এগুলো সবই সাময়িক। একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ভাল থাকা যায় তারপর যে কে সেই। তীব্র গলা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, পেট ব্যথা, কাশি মাঝে মাঝে জ্বর।
ভাইয়া তার এক বন্ধুর কাছে নিয়ে গেল। সেই ডাক্তার খুবই ইয়ার্কির মুডে জানাল এটা সিম্পল ঠান্ডা জ্বর, করোনা টরোনা নয়। আমার বন্ধু রানু আমার অবস্থা দেখে রেগে টেগে সমস্ত শক্তি দিয়ে IEDCR. এর হেল্পলাইনে যোগাযোগ করে পুরো ইতিহাস বলল। IEDCR কুর্মিটোলা হাসপাতালের এক প্রতিনিধি নাম ফারহা চৈতি উদ্বিগ্ন হয়ে ফোন করলেন। সব শুনে জানালেন ঐদিন রাতেই তারা আমাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাবে কারন আমি করোনা ভাইরাস সাসপেক্টটেড। আমি রাত টুকু সময় নিলাম সব কিছু গোছানোর জন্য। ঠিক হল সকাল ৮ টায় ওনাদের এম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাবে একটা টিম এসে। সারা রাত ঘুমাতে পারলাম না নানান চিন্তায়। সকাল ৮ টার আগে নিজেকে পুরোপুরি প্রস্তুত করলাম। নাহ তাদের কোন খবর নেই। নেই তো নেই। নিজেই সকাল ৯ টার দিকে চলে গেলাম কুর্মিটোলা হাসপাতালে। গিয়ে ডাক্তার ফারহা চৈতিকে ফোনের পর ফোন করলাম। উনি ধরলেন না। কি করবো কিচ্ছু জানিনা। এখান থেকে সেখান ছুটে বেড়ালাম সেই অসুস্থ শরীরে। ডাক্তার চৈতি ফোন করলেন বেলা ১১:৩০ এ। উনি যে আনতে যাননি বা যাবার কথা ছিল তার ধারপাশ দিয়েও গেলেন না। এদিকে হাসপাতালে প্রচন্ড ভীড়। লোকে লোকারণ্য। গায়ে গায়ে মানুষ বসে আছে এমারজেন্সির সামনে। কোন ডাক্তার নাই। এমার্জেন্সির টিকিট কেটে আমি দূরে দাঁড়িয়ে থাকলাম। আমার প্রচন্ড শ্বাস কষ্ট আর তীব্র শীতের অনুভূতি হল। আমি উইন্ডব্রেকার পরে যাবার পরও ঠান্ডায় ঠকঠক করে কাঁপছিলাম। কিন্তু এমার্জেন্সি সার্ভিস বলে সেখানে কিছু নেই। নেই একজনও ডাক্তার। এদিকে অপেক্ষা করছে শত শত নারী পুরুষ শিশু। আর তাদের যা তা ভাষায় ধমক দিয়ে যাচ্ছে আনসার সদস্যরা। আমি দূর থেকে সব দেখছি এবং মনে মনে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি কোন ভাবেই এখানে থাকা যাবে না। লোকে উন্মুক্ত ভাবে হাঁচি কাশি দিচ্ছে, থক থক করে থুতু ফেলে ভরিয়ে দিচ্ছে।
আমার খালাতো ভাই ফোন করলেন এবং অবস্থা জানতে চাইলেন। IEDCR এর চিফ মীরজাদি সেবরিনা ফ্লোরা ওনার পরিচিত। ওনার সাথে যোগাযোগ করলেন। ফ্লোরা ম্যাডাম সাথে সাথে কুর্মিটোলা থেকে বেরিয়ে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে যেতে বললেন আমাকে। ততোক্ষণে আমি ভীষণ ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত, ক্ষুধার্ত এবং হতাশ। সময় চেয়ে নিলাম। বাসায় ফিরে আমাকে গোসল করতেই হবে এবং খেতে হবে। তারপর যেতে হবে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে। সেখানে ফ্লোরা ম্যাডাম আমার জন্য সকল ব্যবস্থা করে রেখেছেন।
বাসায় ফিরে ঘন্টাখানিক গোসল করলাম এমন ঘিনঘিনে অনুভূতি হয়েছে কুর্মিটোলা হাসপাতালে। সুস্থ মানুষ সেখানে অসুস্থ হতে বাধ্য। এরপর তৈরি হচ্ছি কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে যাবার জন্য, কিন্তু মন কোন ভাবেই সায় দিচ্ছে না। কারন IEDCR এর প্রস্তুতি নিয়ে আমি ভীষণ সন্দিহান। এরা ঠিক ভাংগা কলসির মত। এরপর মীরজাদি সেবরিনা ফ্লোরা আমার খালাতো ভাইকে জানালেন আমাকে করোনা ভাইরাস সম্ভবত এটাক করেনি। বাইরে বা হাসপাতালে থাকলে আমাকে ভাইরাস এটাক করবে। তাই হাসপাতালে থাকার দরকার নাই। আগে ব্লাড টেস্ট হোক। আমি হাসপাতালে থাকার ব্যাপারে একটুও আগ্রহী ছিলাম না নোংরা পরিবেশ এবং তাদের সার্ভিস কোয়ালিটি দেখে। মনে হয়েছিল ওখানে থাকলে আমি মারা যাব। আমি বাসায় থাকতে চাইলে ফ্লোরা ম্যাডাম রাজি হলেন। সিদ্ধান্ত হল বাসা থেকে আগে টেস্টের জন্য স্যাম্পল কালেক্ট করা হবে এবং আমাকে বাসার ভেতরে ১০০% isolation এ থাকতে হবে। পরের দিন অর্থাত গতকাল বাসা থেকে IEDCR এর লোকজন এসে ব্লাডের স্যাম্পল নিয়ে যাবে। সারাদিন অপেক্ষা। এই আসছি সেই আসছি বলে এখন পর্যন্ত কোন খবর নাই। গতকাল এবং পরশুদিন একাধিক বার তাদেরকে একই তথ্য বার বার দিয়েছি। আসছি আসবো বলে তাদের কোন খবর নাই।
গতকাল সারাদিন রাত তীব্র শ্বাস কষ্টে ভুগেছি। ৮/১০ বার নেবুলাইজ করেছি, ইনহেলার দিয়েছি আর অপেক্ষা করেছি একটা সঠিক ডায়াগনোসিস হোক। জানি কেন এমন সমস্যা হচ্ছে। গলার ব্যথা, শ্বাসকষ্ট পেট ব্যথা কিছুই ঠিক হচ্ছে না।
সর্বোচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগের ফলাফল যদি এই হয়, তবে ধরেই নিচ্ছি বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কেউ নেই। IEDCR একটা স্টুপিড প্রতিষ্ঠান এবং তাদের চিফ মীরজাদি সেবরিনা ফ্লোরা হলেন সেই স্টুপিড নেতা। আপনারা হেল্প লাইনে ফোন করে দেখেন কি ধরণের ব্যবহার করে এরা। স্যাম্পল কালেকশনের জন্য এই নম্বরে কল করেন 01550064901 দেখবেন একই তথ্য আপনাকে কতবার দিতে হচ্ছে। প্রতিটা হেল্পলাইনে কি ভাবে কথা বলছে এক একজন। ফোন করেন কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে এই নম্বরে Control room Kuwait Bangladesh hospital-01830 769803 দেখেন কেমন ব্যবহার করবে আপনার সাথে।
গতকাল থেকে তীব্র শ্বাস কষ্টে ভীষণ কষ্ট পাচ্ছি। নিজে নিজে নেবুলাইজ করছি। হ্যাঁ আমি আর কারো কাছে যাব না। আমার কোন চিকিতসার দরকার নেই। IEDCR এবং মীরজাদি সেবরিনা ফ্লোরার উপর ওহি নাজিল হইসে আমি সুস্থ আছি। তারা এখন বিভিন্ন জায়গার চাপে পরে ব্লাড নিতে আসলে আমি দেব না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারন টেস্টের রিপোর্ট কি হবে আমি জানি। এবং এও বিশ্বাস করি এই ব্লাড ড্রেনে ফেলে দেয়া হবে এবং বলা হবে আল্লামা মীরজাদি সেবরিনা ফ্লোরাতো আগেই টেস্টের রিপোর্ট জানতেন।
হ্যাঁ আমার কিছুই হয়নি। আমি একদম সুস্থ আছি। এই কয়দিন অসুস্থ হওয়ার নাটক করলাম। নাটকের অংশ হিসেবে দিনে রাতে নিজে নিজে নেবুলাইজ করলাম, ইনহেলারের পর ইনহেলার দিলাম। নাটকের অংশ হিসেবে এখনও ভুগছি, শ্বাসকষ্ট, গলা ব্যথা পেট ব্যথা নিয়ে। IEDCR একটা আল্লা প্রদত্ত প্রতিষ্ঠান। ওনাদের ওপর নিয়মিত ওহি নাজিল হচ্ছে। আর করোনা ভাইরাস তেমন কোন ঘটনা না। এই দেশে জন্মাইসেন এইতো বেশী। এখনও বেঁচে আছেন এইটা বোনাস।
আমি ভীষণ ভাবে বিপর্যস্থ। এরকম দীর্ঘ শ্বাসকষ্ট এবং মানসিক যন্ত্রণায় অনেক দিন ভুগিনি। আমি যদি কোন কারনে মরে যাই সেই দায় আমার, তা রাষ্ট্রের না, IEDCR এর না এবং মীরজাদি সেবরিনা ফ্লোরার মত একজন সুপার ওহিপ্রাপ্ত নারীরও না। মীরজাদি সেবরিনা ফ্লোরা সিম্পিলি একটা সরকারের পা চাটা গোলাম, এটুকু মনে রাখবেন।
বল্টু ভাইরাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় কনসার্ন। তাদের ব্যবস্থা করে রেখেছি। পৃথিবীর আর কোন কিছুর প্রতি আমার কোন দায় নেই। আমি এতটা মানসিক ভাবে এবং শারীরিক ভাবে বিপর্যস্থ যে ঠিক জানিনা কি কি ভুল করতে পারি কারন সঠিক ভাবে ভাব্বার মত মানসিক অবস্থায় আমি নেই।
উইশ ইউ হ্যাপি করোনা লাইফ। এই মিথ্যাবাদী, ইতর মানুষের দেশে জন্মে আমি ভীষণ লজ্জিত। এই দলকানা ধর্ম কানা মানুষের দেশে জন্মে আমি লজ্জিত। আমাকে সবাই ক্ষমা করবেন।
পুনশ্চ: লেবু চা গরম চায়ের বয়ান কেউ দিতে আইসেন না। এগুলাই করতেসি। আমি বলতে চেয়েছি একজন নাগরিক হিসেবে আমার সঠিক চিকিতসা পাওয়ার অধিকারের কথা। আজাইরা জ্ঞান দিবেন না। মাথা ভয়াবহ গরম আছে। যা কিছু ঘটায় ফেলতে পারি। কারন এখন আর আমি কিচ্ছু মানবো না। সেই সব ডাক্তারদের জন্যও করুণা যারা ডায়াগনোসিস ছাড়া রোগ নির্ধারণ করে। ঘেন্না ঘেন্না ঘেন্না।
(Atiqua Roma ফেসবুক আইডি থেকে নেওয়া)