পৃথিবীর অন্যতম শ্বাসরুদ্ধকর খেলা ফুটবল। মুহূর্তে মুহূর্তে যে খেলা রং বদলায়, সেখানে উত্তেজনা থাকাটাই স্বাভাবিক। ফুটবল মাঠে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের মত ধাক্কাধাক্কিটাও খুব সাধারণ একটা ঘটনা! খেলা চলাকালে কখনো কখনো মাঠের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে গ্যালারিতে। শুরু হয়ে যায় লঙ্কাকাণ্ড। ফলে জন্ম নেয় মৃত্যুর মত অনেক অনাকাঙ্খিত ঘটনা। তাই বলে এক ম্যাচের উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে ১৭ জনের মৃত্যু মেনে নেয়াটা সহজ কথা নয় !
ঘটনাটা ২০২০ সালের পহেলা জানুয়ারী, মেক্সিকোর জাকাটিকাস প্রদেশের সাইনগুইলাস কারাগারের। এটি মেক্সিকোর কুখ্যাত কারাগার বলে পরিচিত। এখানে হাজারের উপরে ভয়ংকর দাগী আসামী রয়েছে। এরা ছিলেন ভয়ংকর সব অপরাধের সাথে যুক্ত। এই কারাগারটি এতটাই ভয়ংকর ও বিপদজনক ছিলো যে যে, বন্দীদের কাছে অহরহ চাকু ও আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়া যেত। সেদিনের ওই ঘটনাটি ‘Cieneguillas prison riots’ নামে পরিচিত…
সাইনগুইলাস প্রিজন রিয়টস
নতুন বছর উপলক্ষে কারা কর্তৃপক্ষ সেদিন বন্দীদের জন্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। সেই অনুষ্ঠানেরই একটি অংশ ছিলো ফুটবল খেলা। সারাদিন পরিবার পরিজনের সাথে মিলিত হবার পর বিকালে বন্দীরা কারাগারের মাঠে ফুটবল খেলায় মেতে ওঠে। দুই পক্ষের একটি ছিলো লস জিটাস এবং প্রতিপক্ষ গালফ কার্টেল। কারাগারে এই দুটি পক্ষের মধ্যে প্রায়ই মারামারি হত। ফলে ফুটবল মাঠেও যে এর ব্যতিক্রম হবেনা এমনটা সবারই ধারণা ছিলো। আর তাই কারা কর্তৃপক্ষও নিয়েছিলো বাড়তি সতর্কতা। সবাইকে তল্লাশির পর মাঠে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছিলো…
টানটান উত্তেজনার মধ্যে খেলা শুরু হয়। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে খেলা বেশ জমে ওঠে। কিন্তু বিপত্তি বাধে গালফ কার্টেলের পেনাল্টি বক্সের কাছে লস জিটাসের খেলোয়াড় কর্তৃক মারাত্মক ফাউলের পর। উভয় পক্ষের খেলোয়াড়রা উত্তেজিত হয়ে ওঠে। শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে গ্যালারিতে। এর পরপরই হঠাৎ শুরু হয় গোলাগুলি। কেউ কারো চেয়ে কম নয়। বন্দুক, ছুরি, হাতুড়ি পেটা মিলিয়ে পুরো মাঠ পরিণত হয় রণক্ষেত্রে।
ফলাফল ১৭ জন বন্দীর মৃত্যু এবং আহত প্রায় একশ। ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে পড়ে পুলিশ। একসময় তারাও মারমুখী হয়ে ওঠে। কারারক্ষীদের প্রাণপণ প্রচেষ্টায় প্রায় ৩ ঘণ্টা পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
সময়ের আবর্তে এখন কারাগারেও নানা রকম বদল এসেছে। কারাগারগুলোকে এখন বলা হয় সংশোধনাগার। সেখানে এখন নানারকম সৃজনশীল কাজ ও খেলাধুলার আয়োজন করে বন্দীদের মুক্ত জীবনের স্বাদ দেয়া হয়। সাইনগুইলাস কারা কর্তৃপক্ষও চেয়েছিলেন তেমন কিছু করতে। এ কারণেই তারা প্রীতি ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করেছিলেন। কিন্তু তখন কে জানত, সেখানে ঘটবে এমন বিষাদময় ঘটনা !