বলিউডের জনপ্রিয় যত নকল সিনেমা

‘বাংলাদেশিরা সিনেমার কি বুঝে? তারা শুধু পারে ভারতীয় ছবির নকল বানাতে’ – সিনেমা নিয়ে এটা খুব কমন একটা অজুহাত। অনেকের মতে, ভালো ও আসল সিনেমার আঁতুড়ঘর হচ্ছে বলিউড। সত্যিই কি তাই? বলিউড কি সর্বদা আমাদের নিষ্কলুষ মৌলিক সিনেমা উপহার দিচ্ছে। আসুন জেনে নিই ওরকমই কিছু নকল বলিউডের সিনেমা সম্পর্কে !

বলিউডের জনপ্রিয় যত নকল সিনেমা

হলিউড সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্বল্প জনপ্রিয় কিছু সিনেমা থেকে নকলকৃত বলিউড সিনেমাগুলোর তালিক‍া এখানে দেয়া হলো।

কুচ কুচ হোতা হ্যায়

মৃত মায়ের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী বিপত্নীক বাবাকে তার কলেজের বান্ধবীর সঙ্গে মিলিয়ে দিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ আট বছরের অঞ্জলি। এমনই গল্প নিয়ে করন জোহর নির্মাণ করেন রোমান্টিক ড্রামা মুভি ‘কুচ কুচ হোতা হ্যায়’। তবে ছবিটি নোরা এফ্রন পরিচালিত ১৯৯৩-এর আমেরিকান মুভি Sleepless in Seattle এর আদলে নির্মিত। মূল পার্থক্য হলো আমেরিকান সিনেমাটিতে নায়কের আট বছরের ছেলে থাকে, আর হিন্দিটায় মেয়ে।

ধামাল

মৃত্যুর আগে এক পলাতক আসামি তার লুকায়িত সম্পদের সন্ধান দিয়ে যায় কিছু লোভী মানুষের কাছে। সেই সম্পত্তি হাসিলের জন্য শুরু হয় তাদের পাগলাটে অভিযান। এমনই গল্প নিয়ে ইন্দ্র কুমার নির্মাণ করেন কমেডি এডভেঞ্চার মুভি ‘ধামাল’। তবে এই ছবিটিও মৌলিক গল্পের নয়। ছবিটির প্লট কপি করা হয়েছে স্ট্যানলি ক্র্যামার পরিচালিত ১৯৬৩ সালের মাস্টারপিস আমেরিকান মুভি It’s a Mad, Mad, Mad, Mad World থেকে। কিছু কিছু দৃশ্য তো ফ্রেম টু ফ্রেম হুবহু কপি করা হয়েছে।

থ্রি ইডিয়টস

দুই বন্ধু রাজু আর ফারহান তাদের তৃতীয় বন্ধু রাঞ্চোর সন্ধানে বের হয়, যে তাদের ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে সবচেয়ে মেধাবী ও প্রাণচঞ্চল ছাত্র ছিল। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সমাবর্তনের দিন সে কাউকে কিছু না বলে হারিয়ে গিয়েছিল। এমনই গল্প নিয়ে রাজকুমার হিরানি নির্মাণ করেন কামিং অব এইজ কমেডি ড্রামা মুভি ‘থ্রি ইডিয়টস’। অনেকেই হয়তো বলবেন ছবিটি তো ভারতের জনপ্রিয় লেখক চেতন ভগতের রেকর্ড সৃষ্টিকারী উপন্যাস Five Point Someone অবলম্বনে নির্মিত। এটাকে নকল বলছি কোন সাহসে? তাদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, ছবির মেইন প্লট উক্ত উপন্যাস থেকে নেওয়া হলেও ছবিটিতে ‘বাণিজ্যিক মসলা’ দেওয়ার জন্য রাজকুমার হিরানি আশ্রুয় নেন একটি বিদেশি সিনেমার।

মুন্না ভাই এমবিবিএস

পিতার অপমানের প্রতিশোধ নিতে ডাক্তার হতে মুন্না নামের এক গুন্ডা ভর্তি হয় মেডিকেল কলেজে। ধীরে ধীরে সে প্রমাণ করে সহানুভূতি ও ভালোবাসা হচ্ছে সবচেয়ে বড় চিকিৎসা। এমনই গল্প নিয়ে রাজকুমার হিরানি নির্মাণ করেন কমেডি ড্রামা মুভি ‘মুন্না ভাই এমবিবিএস’। মজার ব্যাপার হচ্ছে এই কালজয়ী সিনেমাটিও টম শ্যাডিয়াক পরিচালিত ১৯৯৮ সালের আমেরিকান মুভি Patch Adams -এর অনুকরণে নির্মিত।

ম্যায় হু না

দুটি গুরুত্বপূর্ণ মিশন সফল করার জন্য আন্ডাকভার ছাত্র হিসেবে সেইন্ট পল’স কলেজে ভর্তি হন মেজর রাম। এরপর থেকেই ঘটতে থাকে একের পর এক চমকপ্রদ ঘটনা। এমনই গল্প নিয়ে ফারাহ খান নির্মাণ করেন অ্যাকশন কমেডি মুভি ‘ম্যায় হু না’। সিনেমাটি শুধু শাহরুখ খানেরই নয়, বরং ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক নিয়ে নির্মিত সেরা সিনেমাগুলোর একটি। দুঃখের ব্যাপার এই সিনেমাটিও মৌলিক নয়। ছবিটি রাজা গোসনেল পরিচালিত ১৯৯৯-এর আমেরিকান মুভি Never Been Kissed -এর আদলে নির্মিত।

ফির হেরা ফেরি

লোভে পড়ে তিন সঙ্গীর দেউলিয়া হওয়া এবং টাকা পুনরুদ্ধারের জন্য বিভিন্ন কা- করে অনেক বড় ঝামেলায় ফেঁসে যাওয়ার গল্প নিয়ে নীরাজ ভোরা নির্মাণ করেন ক্রাইম কমেডি মুভি ‘ফির হেরা ফেরি’। এটি বলিউডের ইতিহাসে অন্যতম সফল কমেডি সিনেমা। অনেকে হয়তো জানেন না এই কাল্ট সিনেমাটির গল্পও হলিউড থেকে ধার করা। ছবিটি নির্মাণ করা হয়েছে গাই রিচি পরিচালিত ১৯৯৮-এর ব্রিটিশ মুভি Lock, Stock and Two Smoking Barrels -এর অনুকরণে। পার্থক্য হলো মূল সিনেমায় নায়কেরা চার বন্ধু থাকলেও হিন্দিটায় ছিল তিনজন। যেখানে অক্ষয় কুমার নিক মোরানের, সুনীল শেঠি জ্যাসন ফ্লেমিংয়ের এবং পরেশ রাওয়াল ডেক্সটার ফ্লেচারের করা চরিত্রে অভিনয় করেন।

আশিকি ২

বারের গায়িকা আরোহীকে ভালোবেসে ফেলে মদ্যপায়ী সফল শিল্পী ও সুরকার রাহুল। তার হাত ধরে মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে শুভাগমন ঘটে আরোহীর। এমনই গল্প নিয়ে মোহিত সুরি নির্মাণ করেন রোমান্টিক মিউজিক্যাল ড্রামা মুভি ‘আশিকি ২’। তবে জর্জ কিউকর পরিচালিত ১৯৫৪ সালের আলোড়ন সৃষ্টিকারী আমেরিকান মুভি A Star is Born -এর আদলে নির্মিত।

মোহাব্বাতে

গুরুকুল নামক এক বয়েজ কলেজের এক কঠোর প্রিন্সিপাল ও এক কোমল তরুণ মিউজিক টিচারের আদর্শগত দ্বন্দ্বের মাঝে তিন জোড়া নিষ্পাপ প্রেমের জয়ের গল্প নিয়ে আদিত্য চোপড়া নির্মাণ করেন রোমান্টিক ড্রামা মুভি ‘মোহাব্বাতে’। এই সিনেমাটি কিন্তু পিটার উইয়ার পরিচালিত ১৯৮৯ সালের আমেরিকান মুভি Dead Poets Society -এর অনুকরণে নির্মিত।

দৃশ্যম

নিজের পরিবারের হাতে হওয়া একটি অপ্রত্যাশিত খুনকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য একের পর এক বেপরোয়া পদক্ষেপ নেয় এক ব্যক্তি। শেষ পর্যন্ত খুব চতুরতার সঙ্গে রক্ষা করেন নিজের পরিবারকে। এমনই গল্প নিয়ে নিশিকান্ত কামত নির্মাণ করেন থ্রিলার মুভি ‘দৃশ্যম’। কিন্তু অনেকেই জানেন না এই ছবিগুলোর আদি উৎস হচ্ছে একটি জাপানি মুভি। Suspect X নামের ২০০৮ সালের সেই সিনেমাটির পরিচালক ছিলেন হিরোশি নিশিতানি।

প্রেম রতন ধন পায়ো

নিজের জীবন বাজি রেখে রাজার মতো দেখতে এক সাধারণ যুবক রাজার পদে আসীন হয়। যাকে সামনে গিয়ে মোকাবিলা করতে হয় পারিবারিক ও রাজসিক সব দ্বন্দ্বের। এমনই গল্প নিয়ে সূরাজ বাড়জাত্যা নির্মাণ করেন রোমান্টিক ড্রামা মুভি ‘প্রেম রতন ধন পায়ো’। ছবিটি সমালোচকদের কাছে মিশ্রু প্রতিক্রিয়া পেলেও ব্যবসায়িক সফলতা পায়। এই ছবিটির গল্পও ধার করা। চু চ্যাং-মিন পরিচালিত ২০১২-এর সাউথ কোরিয়ান মুভি Masquerade কে কপি করে ছবিটি নির্মিত। যেখানে সালমান খান লি ব্যুং-হুনের ও সোনম কাপুর হ্যান হ্যো-জু’র করা চরিত্রে অভিনয় করেছেন।

‘মিনসারা কান্না’র নকল ‘প্যারাসাইট’

প্রথম এশীয় ছবি হিসেবে অস্কারের ৯২তম আসরে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে ‘প্যারাসাইট’। সামাজিক বৈষম্য নিয়ে নির্মিত দক্ষিণ কোরিয়ার এই ছবিটি সেরা ছবিসহ মোট চার ক্যাটাগরিতে অস্কার জিতেছে। সেরা পরিচালকের পুরস্কার উঠেছে বং জো হুয়ের হাতে। এমনকি ‘অরিজিনাল স্ক্রিনপ্লে’র জন্যও পুরস্কৃত হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার এই ছবিটি। তবে ছবিটির চিত্রনাট্যই না কি চুরি করা হয়েছে! দক্ষিণী প্রযোজক পি এল থেনাপ্পন দাবি করেছেন ‘প্যারাসাইট’ তাদের তামিল ছবি ‘মিনসারা কান্না’ থেকে অনুপ্রাণিত। তামিল সেই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন বিজয় ও খুশবু। কাহিনি চুরি করায় প্রযোজক মামলা দায়ের করার কথা ভাবছেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম তাদের প্রতিবেদনে হাস্যকর এ তথ্যটি জানিয়েছে।