আপনার কি উচ্চতা ভীতি আছে? তাহলে পেরুর লা রিঙ্কোনাডা আপনার জন্য নয়। কেননা শহরটি সমতল থেকে প্রায় ৫ হাজার ১০০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। এই শহরের বাসিন্দাদের পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচুতে বসবাসকারী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। আর অবাক করা বিষয় হচ্ছে, এ শহরে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের বসবাস। এখানকার মানুষজন মাত্র একটি কাজেই সারাদিন লেগে থাকেন। সেটা হচ্ছে স্বর্ণের খোঁজ (Gold Mining) !
বিশাল আন্দিজ পর্বতমালার যে অংশটুকু পেরু অঞ্চলে পড়েছে, তার একদম শেষের দিকে গড়ে উঠেছে এই শহর। যদিও এটি শুধু নামেই শহর। এমনিতে শহরের কোনো সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায় না এখানে। খুব রুক্ষ আর কঠোর জীবন কাটাতে হয় তাদের। অনেক উঁচুতে অবস্থিত বলে এখানে অক্সিজেনের পরিমাণ কম এবং প্রচণ্ড ঠান্ডা।
প্রথম দিকে এখানকার অবস্থা মোটেও এমন ছিলো না। সামান্য কয়েকটি পরিবার এই অঞ্চলে বাস করত। পরবর্তী সময় যখন এখানে স্বর্ণ পাওয়া যেতে শুরু করল, তখন বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ স্বর্ণের লোভে এখানে আসতে থাকেন। তবে বাইরে ঠান্ডা হলেও স্বর্ণের খনির মধ্যে বেশ গরম। যে কারণে গরম এবং ঠান্ডা দুই পরিবেশেই এই শহরের মানুষদের থাকতে হয়।
এছাড়া এখানে যারা শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন, তারা অদ্ভুত একটি চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ পান। মজার ব্যাপার হলো, কোম্পানির কোনো বেতন গুনতে হয় না শ্রমিকদের জন্য। মাসে একদিন শ্রমিকদের স্বাধীনতা দেয়া হয়। অর্থাৎ বেতনস্বরূপ মাসে একদিন তারা খনি থেকে যে পরিমাণ স্বর্ণ উদ্ধার করতে পারবে, সেটুকু তাদের হয়ে যায়।
এই শহরের মানুষের মূল সমস্যা আবর্জনা নিয়ে। নিজেদের ময়লাগুলো তারা শহরের পাশেই এক জায়গায় রাখা শুরু করেছিল। এখন সেই জায়গায় এত ময়লা জমেছে যে, পরিষ্কার করা রীতিমতো দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। তাছাড়া পরিষ্কার করবেই বা কে?
তবে এখানকার সবচেয়ে বড় যে সমস্যাটি আছে, তা হচ্ছে হৃদরোগ। লা রিঙ্কোনাডা শহরকে বলা হয় হৃদরোগের শহর ! এ শহরের প্রায় প্রতিটা মানুষই একটা না একটা সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। কারণ এত উঁচুতে বসবাস করার কারণে তারা যথেষ্ট পরিমাণে অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে না। তারপরও মানুষগুলো শুধু স্বর্ণের লোভে বছরের পর বছর এখানেই পড়ে থাকে।