বাবার মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পরও ব্যাট হাতে বাইশ গজে নেমেছিলেন শচিন রমেশ টেন্ডুলকার। কেনিয়ার বিরুদ্ধে শতরান করে পরলোকগত বাবাকে উৎসর্গ করেছিলেন। গোটা দুনিয়ার কাছে আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন মাস্টার ব্লাস্টার। বিরাট কোহলির কেরিয়ারেও একসময় একই ঘটনা ঘটেছে। বাবার মৃত্যুসংবাদও কর্তব্যচ্যুত করতে পারেনি ভারত অধিনায়ককে। এবার ক্রিকেট বিশ্ব স্যালুট জানাল বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বজয়ী অধিনায়ক আকবর আলীকে। দিনকয়েক আগেই প্রিয় রোনকে চিরতরে হারিয়েছেন আকবর। বিশ্বকাপের মঞ্চে তা কাউকে বুঝতেই দিলেন না তিনি। শুধু বুঝতেই দেননি তা না, বিশ্বকাপ জয় করেই ঘরে ফিরেছেন এই বীর।
২২ জানুয়ারি যমজ সন্তান প্রসবের সময়ই প্রাণ হারান অনূর্ধ্ব–১৯ বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক আকবরের বোন খাদিজা খাতুন। ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত টিভির পর্দায় যিনি লাগাতার চোখ রেখেছিলেন ভাইয়ের খেলা দেখতে। কিন্তু আকবরের বিশ্বজয়ের ইতিহাস গড়া দেখে যেতে পারলেন না। দেখে যেতে পারলেন না দাঁতে–দাঁত চেপে ফাইনালে তার অনবদ্য ব্যাটিং। গোটা বিশ্বকে আকবর বুঝতেই দিলেন না, কোনো মানসিক চাপ নিয়ে লড়াই করলেন তিনি। কিছুই দেখতে পারেননি কিন্ত ওপার থেকে নিশ্চয় খুশি হয়েছেন তিনি।
ছেলে বাড়ি থেকে বহুদূরে দক্ষিণ আফ্রিকায় বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এমন খবর পেলে ভেঙে পড়বেন। এই ভেবেই আকবরের থেকে দুঃসংবাদটা লুকিয়ে রেখেছিল পরিবার। কিন্তু কোননোভাবে বিষয়টা জানতে পারেন তিনি। আকবরের বাবা বলেছেন – ও আপুর খুব কাছের ছিল। আমরা প্রথমে ওকে কিছু বলিনি। পাকিস্তান ম্যাচ ভণ্ডুল হয়ে যাওয়ার পর ফোনে ভাইকে জিজ্ঞেস করেছিল। জানতে চেয়েছিল, কেন এত বড় খবরটা ওর কাছ থেকে লুকানো হলো। ওকে কী বলব বুঝতে পারছিলাম না।’
বুকের মধ্যে আপুকে হারানোর যন্ত্রণা চেপে রেখে এরপর একে একে দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড ও ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে ইতিহাস রচনা করেছে ১৮ বছরের আকবর। আপুকে শেষবারের মতো দেখতে না পাওয়ার কষ্টই তার বুকে যেন আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল। সেই জেদই হয়ে উঠেছিল তার শক্তি। আর তাতেই গোটা বিশ্বকে চমকে দিলেন ঠাণ্ডা মাথার আকবর।