বাংলাদেশ থেকে খুব বেশি দুরে নয় লাওস ! যদিও দেশটির নাম অনেকেরই অজানা। এই লাওসকে বলা হয় দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে প্রাচীন ভূমি। উত্তর লাওসের আন্নামিতে পর্বতমালার মধ্যে একটি তামিল পাং গুহা থেকে একটি প্রাচীন মানব খুলি উদ্ধার করা হয়েছিল। যা কিনা কমপক্ষে ৪৬,০০০ বছরের পুরনো ! চলুন জেনে নেয়া যাক লাওস দেশটি সম্পর্কে কিছু চমৎকার তথ্য…
লাওস (লাও ভাষায় : লাউ) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। দেশটি পূর্বে ফরাসি ইন্দোচীনের অংশ ছিলো। ১৯৫৩ সালে লাওস স্বাধীনতা লাভ করে। এরপর ১৯৬০ এর দিকে তারা আবারো ভিয়েতনাম যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে।
১৯৭৫ সালে একটি সাম্যবাদী বিপ্লব দেশটির ছয় শতাব্দী প্রাচীন রাজতন্ত্রের পতন ঘটায় এবং একটি গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে দেশটি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। লাওস একটি পর্বতময়, স্থলবেষ্টিত দেশ। এর উত্তরে চীন, পূর্বে ভিয়েতনাম, দক্ষিণে ক্যাম্বোডিয়া, এবং পশ্চিমে ও উত্তর-পশ্চিমে থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার। লাওস খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ এবং জাতিগতভাবে বিচিত্র। লাও ভাষা তাদের সরকারী ভাষা। ভিয়েনতিয়েন বা ভিয়াং চান দেশের বৃহত্তম শহর ও রাজধানী।
লাওস সম্পর্কে যত বিস্ময়কর তথ্য
১. লাওসে কোনো সাগর নেই ! ব্যাপারটা বিস্ময়কর হলেও হতাশ হবার কিছু নেই। দেশটিতে সাগর না থাকলেও রয়েছে অসংখ্য দ্বীপ ! ছুটি কাটাতে সেখানেই দুরদুরান্তের দেশ থেকে পর্যটকরা এসে ভিড় জমান। ভ্রমণের জন্য লাওস ভারত কিংবা বাংলাদেশের চেয়েও অধিক জনপ্রিয় !
২. মৃৎশিল্পের জন্য লাওস বিখ্যাত। লাওসের এত এত গুণ সম্পর্কে প্রায় সবারই অজানা থাকলেও বিশ্পব্যাপী বিক্রয় হওয়া মাটির অসংখ্য জিনিসপত্র লাওসের তৈরি। লাওসে হাঁটার সময় আপনি পথেঘাটে অবহেলায় ফেলে রাখা অসংখ্য মাটির শোপিস/নির্মাণ দেখতে পাবেন।
৩. লাওস এবং থাইল্যান্ড একই ভাষায় কথা বলে। এমনকি দুই দেশের মানুষ একই রকম খাবার খায়। তবে তাদের কিছু অদ্ভুত অদ্ভুত খাবারও রয়েছে। এই প্রতিবেদনের শেষের দিকে ছবি সহ সেগুলোর তালিকা পাবেন।
৪. লাওসে গেলে প্রথমেই আপনার মনে হবে, আপনি এশিয়ায় নেই। ইউরোপের কোথাও অবস্থান করছেন। হ্যাঁ, লাওসের ঘরবাড়িগুলো দেখতে হুবহু ফ্রান্সের মত। সেখানকার প্রতিটা নির্মাণই ফ্রান্স সহ ইউরোপের অন্যান্য কিছু দেশের আদলে স্থাপন করা হয়েছে, যা কিনা পুরো এশিয়ায় বিরল।
৫. লাওসকে বলা হয় সম্পদের ভান্ডার। এশিয়ার মধ্যে একমাত্র লাওসের পাহাড় পর্বত ও বন জঙ্গলগুলোই অক্ষত অবস্থায় আছে। সেখান থেকে তারা পরিমিত স্বর্ণ, নীলকান্তমণি, নীলা, পান্না, মার্বেল, খনিজ লবণ, গ্র্যানিত্শিলা উত্তোলন করেন।
৬. ভিয়েতনামের সাথে যু লাওসের উপর আমেরিকা প্রায় ২০ লক্ষ টন বোমা উৎক্ষেপন করে, যার ৩০% বোমাই তখন বিস্ফোরিত হয়েনি। সেগুলো এখনো মাটির নিচে চাপা পরে আছে। এদিক থেকে লাওস মুক্ত চলাফেরার জন্য কিছুটা বিপদজনক।
৭. হাতির দেশ লাওস। দেশটির গ্রামাঞ্চলের প্রতিটি পরিবারই গরু বা গবাদিপশুর মত করে হাতি পালেন। অনেক ক্ষেত্রে হাতিকে তারা ঈশ্বরের আশির্বাদ বা ভাগ্যদেবতা বলেও মান্য করেন।
লাওসের যত অদ্ভুত খাবার
1. জায়ান্ট ওয়াটার ব্যাটল (Giant Water Beetles) : লাওসের বিখ্যাত একটি খাবার। এই পোকাটি দেহে প্রচুর পরিমাণে মিষ্টি পানি সংরক্ষণ করে রাখতে পারে। তাই এটা খাওয়ার জন্য উপযুক্ত। দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশের মানুষই এই পোকাটি খাওয়ার জন্য সংরক্ষণ করেন। মরুভূমির লোকেরা এই পোকাটির খোলস ছাড়িয়ে ভেতরের অংশটুকু খেয়ে ফেলেন। তবে লাওস ও থাইল্যান্ড সহ অন্যান্য দেশে এটাকে আরো সুস্বাদু করার জন্য তেলে ভেজে অথবা রোস্ট করে খাওয়া হয়। দেখতে তেলাপোকার মত হলেও এই পোকাটি মোটেই নোংরা বা অতটা বিষাক্ত নয় !
২. গুটিপোকার মল চা (Slik Worm Poo Tea): লাওসের আরেক অদ্ভুত খাবার হচ্ছে সিল্ক ওর্ম পু টি। গুটিপোকার মল দিয়ে বানানো চা নাকি সেখানকার সবচেয়ে সুস্বাদু চা !
৩. সবজি ও সালাদের সাথে ব্যাঙের মাংস (Frog Meat): এক্সোটিক ফুড নিয়ে যদি আপনার সমস্যা থাকে, তাহলে লাওস ভ্রমণে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। ব্যাঙ সেখানে খুব স্বাভাবিক একটি খাবার। লাওসের বাসাবাড়ি ও রেস্তোরাগুলোয় প্রায় সবধরণের সবজির সাথেই ব্যাঙের মাংস মেশানো হয়।
৪. পাডেক (Padek): পাডেক একপ্রকার ফার্মেন্টেড ফিশ। মাছের মতই দেখতে এই জীবগুলো হাওড় থেকে ধরার পর কুচি কুচি করে ১৪ দিন পর্যন্ত গাঁজন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নেয়া হয়। পরবর্তীতে স্যুপ সহ বিভিন্ন প্রকার কারি’র সাথে এটি মেশানো হয়্ বা চাটনী হিসেবেও খাওয়া হয়।
৫. বাঁশের চীড় (Bamboo Worms): বাংলায় চীড় বা কৃমি বলতে বিদঘুটে শোনালেও ইংরেজিতে ওর্ম কিন্তু বেশ ভালোই শোনায়। অন্যান্য দেশে কাঠ বা গাছের ভেতর পাওয়া ওর্মগুলোর কথা আগেও নিশ্চয়ই শুনেছেন। সেগুলো খেতে থলথলে, ক্রিমের মত হয়। তবে লাওসের এই বাঁশের চীড় বা ব্যাম্বু ওর্ম গুলো খেতে কিছুটা কুড়মুড়ে, মচমচে। বলা যায় একেবারে বোম্বে পটেটো স্টিকস চিপসের মতই !