মনে পড়ে ‘ম্যায় হু না’ সিনেমায় শাহরুখ খানের ছোটভাই চরিত্রে অভিনয় করা লম্বা চুলওয়ালা ছেলেটার কথা? দুঃখজনক হলেও এই ম্যায় হু না সিনেমার উদাহরণ দিয়েই লেখাটি শুরু করতে হলো। কারণ একটা সময় জায়েদ খানের নাম শুনলে অনেকেই হা করে তাকিয়ে থাকতেন। আরে, এটা আবার কোন জায়েদ খান ! আর এখন জায়েদ খান নামটা শুনলে অনেকেই ধরে নেন, এইটা মনে হয় এফডিসির পরিচালক সমিতির নায়ক জায়েদ খান।
ম্যায় হু না সিনেমায় শাহরুখ খানের সহোদর বা ছোটভাই চরিত্রে অভিনয়ের কারণে জায়েদ খানকে না চেনাই ভালো। জায়েদকে চিনতে হলে আপনি তার অন্য সিনেমাগুলো দেখা শুরু করেন। Rocky দেখুন, Vaada দেখুন, Dus দেখুন। কিছুটা হলেও বুঝতে পারবেন একজন তথাকথিত ফ্লপ হিরোকে নিয়ে কেনো এতগুলো লাইন লিখছি। ২০০৪ সালে ‘ম্যায় হু না’ সিনেমায় শাহরুখ খানের ভাইয়ের চরিত্রে অভিনয় করাটা জায়েদ খানের জন্য কোনো আশির্বাদ ছিলো না। বরং এটা ছিলো তাঁর জন্য একপ্রকার অভিশাপ। জায়েদের ক্যারিয়ার শুরু হয় মূলত ২০০৩ সালে ‘চুরা লিয়া হ্যায় তুমনে’ সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে। পরের বছর ঋত্বিক রোশন ‘ম্যায় হু না’ নামে একটি সিনেমায় শাহরুখের সহোদর চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে তার বাবা রাকেশ রোশনের পরামর্শে ওই চরিত্রে অভিনয় করা থেকে নিজে সরে যান। এর পরিবর্তে তিনি তার শ্যালক জায়েদ খানকে ওই চরিত্রে অভিনয়ের অনুরোধ করেন। জায়েদ খান মূলত তার বোন সুজান খানের স্বামী (সাবেক) ঋত্বিক রোশনের কথাতেই ওই চরিত্রে অভিনয়ের জন্য রাজি হন। আর এটাই ছিলো তার ক্যারিয়ারের প্রথম হোঁচট…
জায়েদ খানের অভিনয় দক্ষতায় সেই লম্বা চুলওয়ালা সুদর্শন ‘লাকি’ নামের ছেলেটাকে দর্শকরা শাহরুখ খানের ছোটভাই লাকি হিসেবেই গ্রহণ করে ফেলেন। জায়েদ খান হিসেবে পরিচিতি পাবার চেয়ে লাকি হিসেবেই দর্শকদের মনে জায়গা হয়ে যায় জায়েদের। সেই জায়গা থেকে কখনোই আর বেরিয়ে আসা সম্ভব হয়নি।
তবে হ্যাঁ, সুপারস্টারের জায়গাটা অর্জন করতে না পারলেও জায়েদ খান তার ভক্তদের মনে ঠিকই সুপারস্টারের চেয়েও বেশিকিছু হিসেবেই জায়গা করে নিয়েছেন। অন্যরা ব্যাপারটা বুঝতে কিনা জানিনা, তবে এটা যে সত্য যে, একজন অখ্যাত অভিনেতা হয়েও জায়েদ যে পরিমাণ মানুষকে ভক্ত হিসেবে পেয়েছেন, তারা প্রত্যেকেই জায়েদ খানকে প্রচুর পরিমাণে ফলো করেন কথাবার্তা, আচার আচরণ, চলাফেরা, পোশাকআশাক সহ সবদিক থেকেই !
জায়েদের পরিচয়টা খুব সংক্ষেপে দিয়ে ফেলি। নায়ক সঞ্চয় আব্বাস খান এর ছেলে জায়েদ খান। পুরো নাম জায়েদ আব্বাস খান। তিনি একজন ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেতা এবং প্রযোজক। ১৯৮০ সালের ৫ই জুলাই মুম্বাই শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ‘চুরা লিয়া হ্যায় তুমনে’ সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে বলিউডে তার অভিষেক ঘটে। ক্যারিয়ারের প্রথম এই সিনেমাটি দিয়েই তিনি ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড জিতে নেন। এরপর শাহরুখ খানের সাথে ‘ম্যায় হু না’ সিনেমায় তার অভিনয় তাকে আবারো ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডে ভুষিত করে !
অভিনয় দক্ষতা কেমন ছিলো জায়েদ খানের ?
উপরের লাইনে অলরেডি লিখেছি, ক্যারিয়ারের প্রথম দুটি সিনেমা দিয়েই জায়েদ খান ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন।
অভিনয়ে জায়েদ খানের দক্ষতা কেমন ছিলো এ প্রশ্নের জবাবে সর্বপ্রথম এটাই বলা যায়, জায়েদ খান বলিউডের মোস্ট আন্ডাররেটেড অ্যাক্টর ! জায়েদ খান যে সময়টাতে চলচ্চিত্রে নিয়মিত ছিলেন, তখন বলিউডে চলছিলো ৩ খান আর অক্ষয় সুনীল সঞ্চয় জুটির রাজত্ব। সেইসাথে উঠতি অভিনেতা হিসেবে শহীদ কাপুর, ইমরান হাশমি, রিতেশ দেশমুখ, ভিবেক ওবেরয়, অক্ষয় খান্না, আশিষ চৌধুরী সহ আরো ডজনখানেক অভিনেতা তো ছিলোই। তাদের সাথে পাল্লা দিয়েও ঠিকই নিজস্ব একটা অডিয়েন্স বানিয়ে ফেলতে পেরেছিলেন জায়েদ খান। একেবারে সস্তামানের সিনেমায় তিনি কখনোই কাজ করেননি। সলো অ্যাক্টর বা মূল নায়ক হয়ে সস্তামানের সিনেমা নিয়ে কাজ না কর তিনি পার্শ্ব চরিত্রে থেকেই হিট কিছু সিনেমায় অভিনয় করে গেছেন। কখনো সঞ্জয় দত্তের সাথে, আবার কখনো অজয় দেবগণের সাথে। এরকম কয়েকটা সিনেমার নাম বলি। পছন্দের সিনেমাটার নাম সবার শেষে বলবো…
Dus (2005) : অ্যাকশন স্পাই থ্রিলার ‘দাস’। ইন্ডিয়ান স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিমের কয়েকজন সদস্যরা মিলে বড়মাপের একটা সন্ত্রাসী হামলা ঠেকানোর জন্য বিদ্যুৎ জাম্বাল নামে অজ্ঞাত এক ইন্টারন্যাশনাল টেররিস্টকে খুঁজতে নামে। তাদের তদন্ত ও প্রতিটা সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে ২৫ হাজার মানুষের প্রাণ। ওই টেরস্টিস্টকে খুঁজে পেতে বিভিন্ন মিশনে গিয়ে সঞ্জয়ের টিম থেকে একে একে বেশ কয়েকজন সদস্য মারা যান। এই টিমের বোম্ব ডিফিউজার হিসেবে কাজ করে জায়েদ খান। ২০০৫ সালে ঢাকার রাস্তায় ঈদের সময় এই মুভির Dus Bahane গানটা খুব শোনা যেত। ইউটিউবে গিয়ে গানটি একনজর দেখলেই বুঝবেন ২০০৫ সালের একজন নায়ক হিসেবে অন্যদের তুলনায় জায়েদ খান কতটা বেশি হ্যান্ডসাম ছিলো। দাস সিনেমার অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন সঞ্জয় দত্ত, সুনীল শেঠি, অভিষেক বচ্চন, শিল্পা শেঠী, দিয়া মির্জা ও ইশা দেওল সহ আরো বেশ কয়েকজন।
Vaada (2005) : এই সিনেমার Main Ishq Uska গানটি শুনে একসময় বেকার ছেলেরা আশার আলো খুঁজে পেত। হাস্যকর শোনায় কথাটা? ইউটিউবে যান, গানের পুরোটা ভিডিওতে জায়েদ খানের দুর্দান্ত অভিনয় দেখে আসুন। সাথে এটুকুই ভাবুন, সিনেমার আরেক নায়ক অর্জুন রামপালকে যদি জায়েদের রোলটা দিয়ে এই গানে অভিনয় করানো হত, তাহলে কেমন বাজে একটা ব্যাপার হত ! ওয়াদা সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছিলো দাস এর আগেই। ২০০৫ সালে জায়েদের মোট ৪টা সিনেমা মুক্তি পেয়েছিলো। যার মধ্যে তিনটাই সুপারহিট।
Shaadi No. 1 (2005) : ‘হেরা ফেরি’ এবং ‘ফির হেরা ফেরি’ বাদে সেসময় বলিউডে মানসম্মত কমেডি ফিল্ম খুব কমই ছিলো। কমেডি সিনেমায় প্রচলিত ধারায় সেসময় নতুন ধাঁচ নিয়ে এসেছিলো শাদি নাম্বার ওয়ান। জায়েদ খান, ফারদিন খান আর শারমান জোশি তিন বেকার বন্ধু এবং তাদের তিন পত্নীর বেশ ভালোই জীবন কাটছিলো। এরমাঝে বাড়তি ঝামেলা হিসেবে সঞ্জয় দত্ত এসে হাজির হয় তাদের পরিবারে। কাজের সন্ধানে ঘুরে বেড়ানো তিন বন্ধুও একটা সময় চাকরী পেয়ে যান। চাকরীটা ছিলো ৩টা মেয়েকে পটিয়ে বাগে আনার চাকরী। আর যিনি চাকরীতে তাদেরকে নিয়োগ দিয়েছেন, তিনিই কিনা ওই মেয়েদের বাবা ! এই সিনেমাটি বাংলাদেশেও নকল করা হয়েছিলো। এই মুহুর্তে নামটা মনে পড়ছে না।
Fight Club – Members Only (2006) : রাস্তাঘাটে মানুষে মানুষে মারামারি দেখে বিরক্ত হয়ে চার বন্ধু মিলে ফাইট ক্লাব নামে একটি ক্লাব চালু করে। রাস্তাঘাটে মারামারি না করে মানুষ এখানে তাদের প্রতিপক্ষকে নিয়ে আসে ফাইট ক্লাবের স্টেজে সবার মাঝে দাঁড়িয়ে ফাইট করার জন্য। এমন একটি প্রতিপক্ষ গ্রুপের মাঝেই শহরের লোকাল গ্যাংস্টারের ছোটভাই এসে তাদের হাতে মার খেয়ৈ যায়। ফাইট ক্লাবের সদস্যদের বেরিয়ে আসতে হয় তাদের ক্লাব ছেড়ে। লড়তে হয় প্রকাশ্যেই। এই চার বন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন জায়েদ খান, রিতেশ দেশমুখ, ডিনো মোরেয়া আর আশিষ চৌধুরী। সালমান খানের ছোটভাই সোহেল খান ফাইট ক্লাবের শুরুতে তাদের বিপরীতে অবস্থান নিলেও গ্যাংস্টার সুনীল শেঠি যখন ফাইট ক্লাব মেম্বারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে, সোহেল তখন জায়েদ খানদের পাশে এসে দাঁড়ায়। কারণ গোটা শহরটাকে নিয়ন্ত্রণ করা গ্যাংস্টার আন্নার হাত থেকে বাঁচা অথবা আন্না গ্যাংয়ের সাথে লড়াই করাটা তাদের মাত্র ৪ জন সদস্যের কাছে একেবারেই অসম্ভব। ফাইট ক্লাবের মত সিনেমা ফ্লপ লিস্টে থাকায় অনেকেই এসব মুভি দেখার কথা মাথায় আনেন না। অথচ এধরণের ক্রাইম-অ্যাকশন সিনেমা গত ৫ বছরেও বলিউড বানাতে পারেনি বলে বলিউড বোদ্ধারা মতামত দেন।
Rocky: The Rebel (2006) : আমার মতে, জায়েদ খানের ক্যারিয়ারের সেরা মুভি ‘রকি দ্যা রেবেল’ ! শুধু জায়েদের ফিল্মোগ্রাফিতেই নয়, আমার দেখা সমস্ত হিন্দি সিনেমার মধ্যে যদি দশটা সিনেমাকে আমি আলাদাভাবে লিষ্ট করি, সবার আগে সেখানে জায়গা পাবে রকি ! এটা জায়েদ খানের দ্বিতীয় সলো মুভি। ম্যায় হু না সিনেমায় লম্বা চুলওয়ালা লাফঝাঁপ করে বেড়ানো যে জায়েদ খানকে দেখা যায়, রকি সিনেমায় ঠিক ওই জায়েদকেই খুঁজে পাওয়া যাবে। নিজের চোখকে বিশ্বাস করানোর জন্য Rocky rock the world গানের এটলিস্ট প্রথম একটা মিনিট চোখ বড় বড় করে দেখে নিন। আর জায়েদ খান নিজেই বলেছেন, এই সিনেমার মুল চরিত্রের চালচলন যেমনটা দেখানো হয়েছে, পুরোটাই জায়েদের সাধারণ জীবনের প্রতিচ্ছবি। সিনেমার শুরুতেই দেখা যাবে নারী নির্যাতনকারী এক পুলিশ অফিসারকে জায়েদ মারধর করছেন। আট দশজন পুলিশ মিলেও তাকে আটকে রাখতে পারছেনা। এসব ছোটখাট অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে জায়েদ তার পরিবারের কাছে বখাটে লাফাঙ্গা উপাধি পায়। প্রেমিকার সাথে একদিন ডেটে গিয়ে সেখানেও জায়েদ এরকমই এক অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে যান। বিপত্তিটা বাধে সেখানেই। জায়েদকে থামাতে না পেরে তারা ঘটনাস্থলেই তার প্রেমিকার গলায় ছুরি চালিয়ে দেয়। জায়েদের বাবা ছেলে অসহায়ত্বে মানসিক সাপোর্ট না দিয়ে বরং মেয়েটির মৃত্যুর জন্য তাকেই দুষতে থাকেন। জায়েদের পক্ষে কথা বলার মত আর কেউ থাকেনা। সিনেমার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমি জায়েদকে অবজারভ করে গেছি। আর এটুকুই বুঝেছি, মেধার নিদারুণ অপচয় হলো। জাস্ট একটা অপচয় হলো। ভারতীয় নির্মাতারাই জায়েদকে কদর করতে পারলোনা।
অজয়, সুনীল, রিতেশের সাথে দল বেধে জায়েদ খান আবারো ২০০৭ সালে Cash সিনেমায় অভিনয় করেন। এই সিনেমার Naughty Naughty গানটির শ্যুটিংয়ে কোনোরকম ডিরেকশন ও ব্রেক দেয়া হয়নি। মাত্র একটি শটেই একমুহুর্তের জন্যও না থেমে ৫ জনে মিলে নেচে ৩ মিনিটের মাঝেই তারা শ্যুটিংটি সম্পন্ন করেন। বলিউডের ইতিহাসে এটাই একমাত্র গান, যেখানে কোনোরকম ব্রেক ছিলো না। অসংখ্য অলিগলি যুক্ত সেট বানিয়ে জায়েদ খান এবং রিতেশ দেশমুখ এক শটেই শটটি কম্পলিট করে ফেলেন। ২০০৮ সালে সালমান খানের সাথে Yuvraaj এবং ২০০৯ সালে অক্ষয় কুমারের সাথে Blue নামে আরেকটি সিনেমায় জায়েদ অভিনয় করেন। ২০১১ সালে মুক্তি পায় Love Breakups Zindagi নামে জায়েদের আরেকটি রোমান্টিক ফিল্ম। একটা সময় তো নিয়মিতই আমার সকাল শুরু হত এই Rozanna গান দিয়ে, এখন আগের মত না হলেও মাঝে মাঝে হয় ! জায়েদ খান-দিয়া মির্জা জুটি নিয়ে একসময় বলিউডে অনেক আলোচনা হত। এই জুটির শেষ সিনেমাটিই ছিলো রোমান্টিক ঘরানার এই লাভ ব্রেকাপস জিন্দেগি ! এছাড়াও জায়েদের আরো অনেক সিনেমা রয়েছে। অজয় দেবগণের সাথে Tezz নামে আরেকটি সিনেমাতেও তিনি অভিনয় করেছেন।
জায়েদ খান ব্যর্থ না সফল ?
নতুন মুখ হিসেবে পর্দায় এসে অনেক দিক থেকেই সুবিধা পেয়েছেন জায়েদ খান। কিরকম? নামের সাথে খান, স্টারকিড, ক্যারিয়ারের প্রথম দিকেই শাহরুখ খানের সহশিল্পী হওয়ার সুযোগ পাওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। ‘ম্যায় হু না’ দিয়ে অভিষেকের পর মনে করা হচ্ছিলো সেকালের বিখ্যাত অভিনেতা সঞ্জয় খানের ছেলে হয়ত তার বাকি ক্যারিয়ারটা আরামসেই কাটিয়ে দিতে পারবেন। কিন্তু হয়েছে তার উল্টো। ফিল্ম ইন্ডাষ্ট্রিতে কে দর্শকপ্রিয়তা পেলো, কে পেলো না, তাতে কিছু যায় আসেনা। লাভ লসের হিসাবটা মূলত বক্স অফিসেই হয়…
সঞ্জয় দত্ত, অক্ষয় কুমার এমনকি সালমান খানের মত তারকার সাথেও যেসব সিনেমায় পার্শ্ব চরিত্রে জায়েদ খান অভিনয় করেছেন, সেগুলো বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়লো। ফাইট ক্লাব, ক্যাশ, স্পিড, দাস, মিশন ইস্তাম্বুলের মত বিগ বাজেটের সিনেমাগুলো সাধারণভাবে হিট বা সুপারহিট হলেও বক্স অফিস বাজিমাৎ করতে পারলোনা একটি সিনেমাও। জায়েদ তবুও তার নিজস্ব ধারায়ই রয়ে গেলেন। যে ধরণের চরিত্রে তিনি কাজ করতে পছন্দ করেন, সেরকম ক্যারেক্টার নিয়েও আর কোনো সিনেমা এলো না। বলতে গেলে সেখান থেকেই আস্তে আস্তে একরকম হারিয়ে গেলেন জায়েদ। মূল নায়ক হিসেবে জায়েদের রকি দ্য রেবেল সুপারহিট হলেও কোনো এক অজানা কারণে কোনো পরিচালকই জায়েদকে আর সলো অ্যাক্টর হিসেবে নিলেন না বা সিনেমার মূল চরিত্রে আর তাকে ডাকা হলো না। জায়েদের বোন সুজানের সাথে ঋত্বিকের ডিভোর্স হয়ে যাবার পর জায়েদ অভ্যন্তরীণ কিছু পলিটিকসের শিকার হন বলেও কথিত রয়েছে। যার কারণে পরিচালকরাও চাননি জায়েদকে সিনেমায় নিয়ে রোশন পরিবারের চোখের বালি হতে।
যদিও প্রতিটা শো আর পাবলিক ইভেন্ট জায়েদ খান আর ঋত্বিক রোশন যতবার মুখোমুখি হয়েছেন, প্রতিবারই তারা বেশ আন্তরিক ছিলেন। এবং জায়েদ একবার ঋত্বিকের প্রতি ভালোবাসা জানাতে গিয়ে স্টেজে সবার সামনে চোখও ভিজিয়ে ফেলেন !
শেষে আর বলার মত তেমন কিছু থাকেনা। চাইলেও আর কখনো সেই হাস্যোজ্জ্বল জায়েদ খানকে ফিরে পাওয়া যাবেনা। কপালে রেড বেন্ড বেধে লম্বা চুলগুলো ঝাঁকিয়ে নতুন কোনো রেবেলরুপেও জায়েদ আর আসবেন না। চাইলে নিজের প্রোডাকশন থেকে সিনেমা বানিয়ে নিজেকে তিনি ফেরাতে পারতেন। সেটা তিনি করবেন না। কারণ সিনেমায় রকি দ্য রেবেল যেমন সৎ, তারচেয়েও বেশি সৎ বাস্তব জীবনের জায়েদ খান।
পাবলিক প্লেসে দর্শক থেকে শুরু করে ভিক্ষুক পর্যন্ত প্রত্যেকের সাথে তার আচার আচরণের ফুটেজগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় একটু ঘেঁটে দেখলেই বুঝতে পারবেন…
And that’s why Zayed Khan is best !