সাকিব আল হাসান, নামটা আমাদের ক্রিকেটের মহানায়কের ! আজ তিনি চট্টগ্রামে সম্মানসূচক নগর চাবি পেলেন; কিন্তু তার হাতে এ দেশের ক্রিকেটের চাবিটাও তুলে দেওয়া উচিত। সদ্য শেষ হওয়া বিশ্বকাপ মঞ্চে সাকিব প্রমাণ করেছেন তিনি কি করতে পারেন বা কি কারণে ক্রিকেট আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারকাদের একজন তিনি। অবশ্য প্রমাণ করার কিছু আর অবশিষ্ট নেইও; তিনি যে এক দশকের বেশি সময় ধরে ধারাবাহিক পারফর্ম করে যাচ্ছেন। আর বয়ে চলছেন এদেশের মানুষের ক্রিকেট নিয়ে সকল আশাভরসা আর প্রত্যাশার ভার !
মাশরাফি বিন মর্তুজাও আমাদের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সফল এক সেনানীর নাম। তবে ক্যারিয়ারের একদম শেষের পথে হাঁটা মাশরাফি খুব দ্রুত জানাবেন বিদায়। তার বিদায়ের পর নেতৃত্বের বিশাল বোঝা কার কাঁধে এসে পড়বে? কার পরিপক্ব কাঁধ নিতে পারবে এমন বোঝা? কিছুক্ষণ ভাবুন ! সাকিব ছাড়া অন্য কোনো নাম মাথায় এসেছে কি?
খুব বেশি ক্রিকেট বোদ্ধা হওয়ার প্রয়োজন নেই; নিয়মিত টুকটাক ক্রিকেট অনুসরণ করলেই তো সাকিব নামটা সবার প্রথমে আসার কথা। অন্য যাদের সম্ভাবনা ছিলো, তারা কি নেবে নেতৃত্বের ভার? যেখানে তাদের পারফরমেন্সের দৈন্যদশা কাটাতেই হিমশিম খেতে হয় !
সাকিব আগে থেকেই টেস্ট আর টি২০ ক্রিকেটের অধিনায়ক; সেখানে নিয়মিত সাফল্যও পাচ্ছে দল। উপরমহলের তিন ফরম্যাটে একাধিক অধিনায়ক পছন্দের নীতি রয়েছে, তাই তারা অন্য কারো কথা ভাবতেও পারেন। কিন্তু সাকিব ছাড়া অন্য কাউকে ভাবলে সেটা অনেক বড় ভুল হবে, তা আগেভাগে বলে দেওয়াই শ্রেয়। সাকিবে আপনি চোখ বন্ধ আস্থা রাখতে পারেন।
একটু পরিসংখ্যানের সহায়তা নেওয়া যাক। সাকিব এর আগে বাংলাদেশকে ৫০ ওয়ানডে ম্যাচ নেতৃত্ব দিয়ে জিতিয়েছেন ২৩ ম্যাচ। সব ক্রিকেটারের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, সাকিব যখন দলের অধিনায়ক ছিলো, তখন অবস্থাটা ছিলো এরকম, ম্যাশ ইনজুরিতে খেলতে পারত না অধিকাংশ ম্যাচ, খেললেও খুব কম। মুশফিক তখন প্রায় ২১/২২ গড়ের এক সাধারণ ব্যাটসম্যান, রিয়াদ তখন আসা-যাওয়া মিছিলে, তামিম কিছুটা রান পেত, আশরাফুল প্রায় ঝরে গিয়েছিলো। আমরা তখন খেলতাম প্রায় দুর্বল এক একাদশ নিয়ে !
রুবেল মাত্র এসেছে, স্পিনার রাজ্জাক ভালোই করত। ইমরুল কায়েস, জুনায়েদ সিদ্দিকি, রকিবুল ইসলাম, নাইম ইসলাম সামলাতেন ব্যাটিং অর্ডার। এই দল নিয়েই আমরা তখন খেলতাম, খুব একটা খারাপ করতাম না সম্ভবত। আর সে দলের অধিনায়ক ছিলেন সাকিব।
সাকিব কত বড় এক ম্যাচ উইনার তা নিয়ে কারো সন্দেহ থাকার কথা নয়। তবুও অবিশ্বাস্য সাকিবকে পরিসংখ্যানের পাল্লায় এনে মাপা যাক ! বাংলাদেশের হয়ে সাকিব জিতেছেন ৯৪ ম্যাচ। এই ৯৪ ম্যাচে সাকিব ৫২ গড়ে রান করেছেন ৩২৫২; ২৩ গড়ে উইকেট নিয়েছেন ১৪৪টি। সাকিবের ব্যাটিং গড় পন্টিং, সাঙ্গাকারা, জয়সুরিয়া, ইনজামাম, ক্যালিস, স্টিভ ওয়াহ এদের চেয়েও ভালো। এভাবে নেয়া আরো অসংখ্য রথীমহারথীর নাম। তার বোলিং গড়ও যে কোন বোলারের কাছে হিংসে করার মত।
সাকিবকে শুধু তিন ফরম্যাটের অধিনায়ক নয় তাকে সর্বেসর্বা করে আরো কিছু অধিকারও দেওয়া হোক। যেমন দল নির্বাচনের ক্ষমতা, দলের যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা। দেশের ক্রিকেটের যাচ্ছেতাই এই অবস্থায় পথ প্রদর্শক হতে পারে এই সাকিবই। এছাড়া আর কোন উপায় নেই।
যে সাকিব এক দশকের বেশি সময় আপনার আশাভরসা আর প্রত্যাশার ভার বহন করে চলেছে নিজ কাঁধে; নিশ্চিত থাকুন সে আপনাকে আশাহত করবেনা। আমাদের অনেককেই জয়ের স্বপ্ন বুনতে শেখানো, পিছিয়ে পড়ার পরে উঠে লড়াই করা শেখানো সাকিবে আস্থা রাখাই যায়।
যে নামটাই এক মহাকাব্য; তার হাতে দেশের ক্রিকেটের চাবি দেওয়াই যায়।