হুট করেই দেশে ডেঙ্গু উপদ্রব বেড়ে গেছে। শুধু উপদ্রব বললে ভুল হবে। বর্তমানে বন্যাকবলিত বাংলাদেশে ডেঙ্গুকে এখন ভয়াবহ দুর্যোগ বলেই অভিহিত করা যায়। প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা যাবার খবর শোনা যাচ্ছে। এতকিছুর পরও ডেঙ্গু সম্পর্কে চমকপ্রদ তথ্য নিয়ে লিখতে হচ্ছে এই কারণে, মানুষের মাঝে যেনো সামান্য হলেও সচেতনতাটা বৃদ্ধি পায়। হেলাফেলার সময় শেষ…
ডেঙ্গু সম্পর্কে কিছু চমকপ্রদ তথ্য
- ডেঙ্গু ভাইরাস পৃথিবীর একমাত্র ভাইরাস, যা শুধুমাত্র এডিস মশা বহন করে। আর কোনো প্রাণী বা কিটপ্রতঙ্গ এই ভাইরাস বহন করে না।
- ডেঙ্গুর বিষ বহনকারী এডিস মশা কখনো রাতে কামড়ায় না। এরা দিনের বেলা পিকআওয়ারে কামড়ায়। অর্থাৎ শুধুমাত্র ভোরবেলা এবং সন্ধ্যায়।
- কিছু তথ্য ও প্রমাণাদি অনুসারে, বন্য বানর থেকে এই ভাইরাসটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও পশ্চিম আফ্রিকায় ছড়িয়েছে। বনে বসবাসকারী কোনো একটি বানরকে এডিস মশা কামড়ায়। পরবর্তীতে অন্যান্য মশারাও ওই বানরটিকে কামড়ে রক্ত খাওয়ার মাধ্যমে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। এদের কামড়েই বনের বাকি সব বানরগুলো ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে যায়। এভাবে ভাইরাসটি দ্রুত ওই অঞ্চলের পশুপাখি থেকে মানুষের মাঝেও ছড়িয়ে যায়।
- এই ভাইরাস রোগীর দেহ থেকে অন্যদের শরীরে ছড়ায় না। শুধুমাত্র এডিস মশারাই এই ভাইরাসটি বহন করতে পারে।
- মশাদের মধ্যে শুধুমাত্র নারী প্রজাতির মশারাই ডেঙ্গু ভাইরাস বহন করে। এক কামড়ে এরা প্রায় ১০০’র বেশি ডিম প্রজনন করতে পারে।
- মানুষকে কামড়ানোর পর মশা মারা যায়, এটি একটি ভুল তথ্য। বরং মানুষের দেহ থেকে রক্ত খাওয়ার মাধ্যমেই তারা আরো বেশি ডিম ফুটাতে পারে।
- ডিম থেকে লার্ভা ,লার্ভা থেকে পিউপা এবং পিউপা থেকে একেবারে প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে একটি এডিস মশা মারা যেতে সময় লাগে মোট ১২ দিন।
- এডিস মশার ডিম প্রায় একমাস পর্যন্ত টিকে থাকে এবং এরমধ্যে পানির সংস্পর্শ পেলেই ডিম ফুটে বাচ্চা বেরিয়ে আসে।
- ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত শোষণ করার সাতদিন পর একটি সাধারণ মশা বিষধর এডিস মশায় রুপ নেয়।
- একজন মানুষ তার পুরো জীবনে ৪ বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হতে পারেন। কারণ এডিস মশা ৪ প্রকারের স্টেইনের প্রতিটা একজন মানুষের শরীরে একবার প্রবেশ করার পর দ্বিতীয়বার আর কখনোই কাজ করেনা। অর্থাৎ সারাজীবনে ৪ বার ডেঙ্গু জ্বরে ভোগার পর আপনি খালি গায়ে বাসার ছাদে শুয়ে নিশ্চিন্তে জোৎস্ন্যা দেখতে পারেন। অথবা বাসার মশারিগুলোকে চাদর বানিয়ে বিছানায় বিছিয়ে রাখতে পারেন।
- ডেঙ্গু একটি ভাইরাস। এটি নিরাময়ের জন্য নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ নেই। তবে সুচিকিৎসায় ডেঙ্গু ভালো হয়।
- ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে বাংলাদেশের ফেসবুক ইউজাররা মেয়রকে গালি দেয়।
ডেঙ্গু প্রতিরোধের উপায়
ডেঙ্গু সম্পর্কে যেহেতু চমৎকার কিছু তথ্য লিখলাম, ডেঙ্গু প্রতিরোধের উপায় নিয়েও কয়েকটা লাইন লিখে ফেলা উচিত। মেয়রকে গালি দিয়ে তো লাভ নেই। অযথা সময় নষ্ট। তারচেয়ে বরং আসুন নিজের দেশ নিজে বাঁচাই। আপনি আমি আমরা একটু সচেতন হলেই আমাদের পরিবারের লোকজনগুলোকে বাঁচানো যাবে। জেনে নিন ডেঙ্গু থেকে বাঁচার উপায় গুলো !
- মশার প্রজনন স্থল ধ্বংস করুন। বদ্ধ পানি, বাসাবাড়ির চারপাশে পরে থাকা আবর্জনা ও পরিতক্ত বোতল, কৌটা, চিপসের প্যাকেট সহ যেকোনো কিছুই হতে পারে মশার প্রজনন স্থল। এগুলো সরিয়ে আজই আপনার চারপাশ পরিষ্কার করে নিন।
- ঘুমানোর সময় অবশই মশারি ব্যবহার করুন। সারাদিন বসে বসে ফোন চাপতে পারেন। কিন্তু মশারির টানানো বেলায়ই যত আলসেমি ! হয়ত জানেন না, কিছু বাবা মায়ের এই আলসেমিটার জন্যই কত বাচ্চার জীবন চলে গেছে। কত শিশুকে পঙ্গু হতে হয়েছে।
- রুটিনমাফিক মশা নিরোধক স্প্রে, অ্যারোসল বা কয়েল ব্যবহার করুন। প্রতিদিন তিনবেলা অবশ্যই একটা নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ রাখুন মশা থেকে ঘর নিরাপদ রাখতে।
- ঘরের জানালা দরজা সবসময় বন্ধ রাখুন। এই দুর্যোগের মৌসুমে প্রয়োজন ব্যতীত জানালা খুলে রেখে আকাশ দেখার কোনো মানে হয়না।
- জানালার পাশে তুলসি গাছ লাগাতে পারেন। মশার প্রবেশ রোধ করতে এটা দারোয়ানের মত কাজ করবে।
- ডেঙ্গুর মৌসুমে যতটা সম্ভব নিজেকে আবৃত রাখুন। খোলামেলা বা খালি গায়ে ঘুমাবেন না। মেঝেতে পা রেখে বসে থাকার ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকুন। মশা যেনো কোনোভাবেই কামড়াতে না পারে।
পরিশেষে, রক্তের অভাবে বেশ কয়েকজন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুসংবাদ শুনলাম। অথচ মোটামুটি সব গ্রুপের রক্তদাতাই আমাদের হাতে রয়েছে। জরুরী প্রয়োজনে রক্ত জোগাড় করে দিতে ২০ লাখ রক্তদাতার তালিকা নিয়ে গুগল প্লে-স্টোরে রয়েছে আমাদের প্রজেক্টের নিজস্ব ব্লাড ব্যাংক অ্যাপস। সবাইকে আহ্বান জানাই, ছারপোকা ব্লাড ব্যাংক অ্যাপটি আপনার মোবাইলে ডাউনলোড/ইনস্টল করে রাখুন। ফেসবুকে কাউকে রক্ত চাইতে দেখলে আমাদের অ্যাপে ঢুকে ব্লাড রিকুয়েস্ট রাখার মাধ্যমে সেটি জানান। এবং অন্যদের অনুরোধে নিজেও রক্ত দিন।
আমি আপনি মিলে যদি বাংলাদেশ হই। এই দেশের প্রতিটা দুর্যোগ মোকাবেলার দায়িত্বটাও কিন্তু এই আমাদেরকেই নিতে হবে। আমাদের সচেতনতায়ই ডেঙ্গু দুর্যোগ শেষ হোক…