হুট করেই ফেসবুক থেকে রিমুভড হয়ে যাচ্ছে জনপ্রিয় যত ফেসবুক গ্রুপ ! বড় বড় অনেক ফেসবুক গ্রুপ ডিজেবল হয়েছে গত দু সপ্তাহয় ! কয়েক লাখ মেম্বারের গ্রুপ এবং গ্রুপের অ্যাডমিন প্যানেলের ফেসবুক আইডি, কোনোটাই টিকছেনা। সবই বাদ হয়ে যাচ্ছে কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড ভায়োলেশনে। বলে নিচ্ছি, রিমুভড হয়ে যাওয়া এসব গ্রুপের মধ্যে কোনোটা ছিলো ট্রাভেল গ্রুপ, কোনোটা ফুড রিলেটেড গ্রুপ, কোনোটা আবার স্পোর্টস গ্রুপ, কোনোটা নির্মল বিনোদনের গ্রুপ…
… এসব গ্রুপের এক্টিভিটিগুলো খেয়াল করলেই বুঝা যায়, ফেসবুকের গাইডলাইন ভঙ্গ করে, এমন কোনো কন্টেন্টস সেখানে ছিলো না। তবুও কেনো গ্রুপগুলো হারিয়ে গেলো?
এই একটা প্রশ্ন এখন সবার মনে। প্রশ্নের উত্তরটা বোধহয় আমরা খুঁজে পেয়েছি…
ফেসবুক গ্রুপ ডিজেবল হবার কারণ
গতকাল রাত থেকেই এ সমস্যাটির কারণ অনুসন্ধান করে আমাদের টিম বিশেষ কিছু তথ্য জানতে পারে। যদিও আমরা সেটি যাচাই বা পরীক্ষা করে দেখিনি। তবে বিভিন্ন তথাকথিত দেশি-বিদেশি স্প্যামারদের ওয়াল ঘেটে এ বিষয়ে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। চলুন জেনে নেয়া যাক, কিভাবে নষ্ট করে দেয়া হচ্ছে ফেসবুক গ্রুপ, ফেসবুক পেজ এবং সেলিব্রেটিদের লাখ লাখ ফলোয়ারের ভেরিফাইড ফেসবুক আইডি…
ফেসবুকের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড গাইডলাইনে স্পষ্টভাবে বলা আছে, এই ওয়েবসাইটে কোনোপ্রকার টেরোরিজম বা জঙ্গিবাদ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম চালানো যাবেনা। অর্থাৎ ইন্টারন্যাশনাল টেরোরিস্ট হিসেবে চিহ্নিত যে কারো সম্পর্কে কোনো পোস্ট করলে বা ছবি আপলোড করলে তা কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড ভায়োলেশন হিসেবে ধরা হবে। এবং রিপোর্ট করামাত্রই উক্ত কন্টেন্ট সহ এন্টায়ার গ্রুপ/পেজটিই রিমুভড হয়ে যাবে।
স্প্যামাররা ফেসবুকের এই রুলসটিরই অপব্যবহার করেছে বুরহান নামে এক ব্যক্তির ছবি ব্যবহারের মাধ্যমে, যাকে ২০১৬ সালের ৮ই জুলাই বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যা করে ভারতীয় সেনারা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কে এই বুরহান ওয়ানি?
কাশ্মির উপত্যকায় কাশ্মিরিদের চোখে বুরহান ওয়ানি ছিলো আজাদীর পোস্টারবয়। যাকে ঘিরে কাশ্মিরি স্বাধীনতা আন্দোলনের সংগ্রাম জোরদার হচ্ছিলো। কিন্তু ভারতীয় প্রশাসনের চোখে বুরহান ছিলো এক উগ্রবাদী জঙ্গি, কারণ বুরহান সসস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে কাশ্মীরকে স্বাধীন করার জন্য লড়াই করে যাচ্ছিলো। প্রতিনিয়ত হামলা চালিয়ে নিহত করছিলো ভারতীয় সেনাদের। এজন্য মৃত্যুর পরও বুরহান আজ কারো কাছে নায়ক, কারো কাছে খলনায়ক…
এই বুরহান ওয়ানি’র ছবি প্রোফাইল পিকচারে ব্যবহার করে কোনো গ্রুপে পোস্ট বা কমেন্ট করার পর কয়েকটা আইডি থেকে “টেরোরিজম” ক্যাটাগরিতে রিপোর্ট দিলেই কিছুক্ষণের মধ্যে রিমুভ/ডিজেবল হয়ে যাচ্ছে পুরো গ্রুপটি !
পেজ এবং আইডি ডিজেবল করার ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। এবং এর শুরুটা আজকে নতুন হয়নি, হয়েছে সেই ২০১৭ সালে ! যা এখনও পর্যন্ত বিভিন্ন কৌশলে কাজে লাগানো হচ্ছে। ফেসবুকের অটোমেটেড সিস্টেমে ধরা পরামাত্রই খুব দ্রুত এগুলো সরিয়ে নেয়া হয়। আর এ কারণেই চোখের পলকে বাদ হয়ে যাচ্ছে একেকটি জনপ্রিয় গ্রুপ…
ফেসবুক গ্রুপ ডিজেবল হওয়া থেকে বাঁচাতে করণীয়
করণীয় শুধু দুটোই –
- বুঝেশুনে যাচাই করে মেম্বার অ্যাড করুন
- কারো গ্রুপ বাদ হতে দেখলে আপনার গ্রুপ আর্কাইভ করে রাখুন। পিসি ইউজাররা আর্কাইভ অপশন পাবেন।
ফেসবুক গ্রুপ ডিজেবল হলে কি করবেন ?
ফেসবুক গ্রুপ ডিজেবল হবার সাথে সাথে আপিল করার একটি ফর্ম আসবে। সুন্দর মার্জিত ভাষায় সমস্যাগুলো উল্লেখ করে আপিল করে ফেলুন।
পরিশেষে,
এ বিষয়ে ডিএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিটের এডিসি নাজমুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, “এই সমস্যাটি তাঁরা ধরতে পেরেছেন এবং সমাধানের জন্য ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছেন এবং বাংলাদেশি অনলাইনে এ অপকর্মের পেছনে জড়িতদের শনাক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ফেসবুক ব্যবহারীদের আতংকিত না হবার জন্য তিনি অনুরোধ জানিয়েছেন।”
(সংগত কারণে বুরহান এর কোনো ছবি আমরা শেয়ার করতে পারছিনা)