বাংলাদেশের এক দশমাংশ ভূমির বঞ্চিত মানুষজন একনায়কদের আমলে নিজস্ব সত্ত্বা রক্ষার্থে লড়াই-সংগ্রাম তীব্রতর করেছিলো ১৯৭৫ এর পটপরিবর্তনের পর। তাদের ক্ষোভ প্রশমনে রাষ্ট্রের উদ্যোগ যখন বলপ্রয়োগ থিওরীর মধ্যে সীমাবদ্ধ, তখন মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সংগঠনটির শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছিলো যে আলাপ-আলোচনাই সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ। বঞ্চিতদের অবিসংবাদিত নেতা সন্তু লারমার সাথে সেই মোতাবেক দুর্গম পাহাড়ী জঙ্গলে যোগাযোগ করে আলোচনা চালানো হয় দলের হাইকমান্ডের প্রত্যাশা অনুযায়ী। এই যোগাযোগ স্থাপনকারী আর আলোচনাকারী ব্যক্তিটি কে জানেন? তিনি হলেন ওবায়দুল কাদের। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর আদিবাসীদের (সরকারী ভাষ্য, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী) সরকারের সাথে শান্তিচুক্তি করার ক্ষেত্রে পটভূমি সৃষ্টি আর আস্থা সৃষ্টিতে ভূমিকা ছিলো বহু আগে থেকে চলা ওবায়দুল কাদেরের ওইসব যোগাযোগ। সুস্থ হয়ে উঠুন ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠা রাজনীতিবিদ জনাব ওবায়দুল কাদের !
ওবায়দুল কাদের একজন আপাদমস্তক রাজনীতিবিদ। একেবারে তৃণমূল বলতে যা বুঝায়, সেখান থেকে ছাত্র রাজনীতির লম্বা পথ হেঁটে ধাপে ধাপে আজকের অবস্থানে এসেছেন তিনি। আন্দোলন সংগ্রাম, জেলজুলুম বহু চড়াই-উৎরাই পার হওয়া এই মানুষটি শুধু রাজনীতির পথ ধরেই হাঁটেননি। কখনো নেতা হয়ে হেঁটেছেন রাজপথে, কখনোবা পথচারীর বেশ ধরে ফুটপাতে ! আপনি হয়ত ভুলে গেছেন বছরতিনেক আগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর লাইভ অ্যাকশনের কথা। আপনি হয়ত ভুলে গেছেন, তার কাজেকর্মে মুগ্ধ হয়ে এই আপনিই তাঁকে বাংলার ফাটাকেষ্ট বলে ডাকতেন। সব ভুলে আপনি স্রোতের সাথে তাল মিলিয়ে তাঁকে ট্রল করতে শুরু করেছেন। কিন্তু ইতিহাস তাঁকে ভুলবেনা…
কিছু মানুষ এখনো আছেন যারা রাজনীতিকে ব্যবসায় পরিণত করেননি। তাঁদেরই একজন এই ওবায়দুল কাদের !
আজ তিনি হাসপাতালে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে…
এই মানুষটি তাঁর কলেজ জীবন থেকে রাজনীতি করে আসছেন। ৬৬’র ছয় দফা আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, প্রতিটি বড় বড় আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে উপস্থিত ছিলেন তিনি। ১৯৭৫ -এ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর আড়াই বছর জেল খেটেছেন। এমনকি ২০০৭ সালে তত্বাবধায়ক সরকারের সময়ও তিনি ১৭ মাস জেল খেটেছেন। ১৯৭৭-১৯৮১ মেয়াদে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ছিলেন তিনি। যুব-ক্রীড়ামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এখন সড়ক, পরিবহন এবং সেতু মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন…
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ওবায়দুল কাদের। বাংলাদেশের সবচেয়ে অভিজাত রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও তিনি। আপনি ভাবতেও পারবেন না ওবায়দুল কাদের কত বড় একজন রাজনীতিবিদ। শুধু রাজনীতিবিদই না, একইসাথে তিনি একজন সাহিত্যিক এবং সাংবাদিকও !
আমাদের তরুণ প্রজন্ম আজ ওবায়দুল কাদেরের মত একজন ব্যক্তিকে নিয়ে নোংরা রসিকতায় ব্যস্ত। যে মানুষটির জীবন এতটা কষ্ট-সংগ্রামে পরিপূর্ণ, যাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার এতটা উজ্জ্বল। সামান্য সস্তা জনপ্রিয়তা পেতে তাকে ট্রল করে আপনি যে ইতিহাস কতটা বিকৃত করছেন, তা ভেবেছেন কি?
ওবায়দুল কাদের স্যারের অবস্থা এখন আশংকাপূর্ণ। হাসপাতালে ভর্তি আছেন তিনি। আপনি যদি তাঁর হেটার্সও হয়ে থাকেন, তবুও বলি, আসুন অন্তত আজকের দিনটা আমরা তাঁর সুস্থতা কামনা করে দোয়া করি।
সুস্থ হয়ে উঠুন জনাব ওবায়দুল কাদের …