সাতকরা বা সাতকড়া, লেবু গোত্রীয় এ ফলটি বাংলাদেশেই জন্মায়। কিন্তু ৮০% বাংলাদেশিই এই ফলটির সাথে পরিচিত নন। সাতকরা সিলেট অঞ্চলে অনেক জনপ্রিয়। ভিন্ন স্বাদের এ ফলের জনপ্রিয়তা সিলেটের গণ্ডি পেরিয়ে দেশময়, এমনকি বিশ্বময়। সারা বছর ছাড়াও কোরবানির ঈদের সময় সাতকরার চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। কারণ গরুর মাংসের সাথে সাতকড়া না হলেই নয় !
সাতকরার বৈজ্ঞানিক নাম Citrus macroptera varassamensis ! দেখতে চ্যাপ্টা গোলাকার, হলদে-সবুজ রঙের পুরু খোসা, শাঁসের পরিমাণ তুলনামূলক কম। দেখতে অনেকটা কমলালেবুর মতো। কিছুটা টক-তেঁতো স্বাদের। ভেতরে কমলালেবুর মতো সাতটি কড়া রয়েছে। এজন্যই স্থানীয়ভাবে এটি ‘হাতকড়া’ নামে পরিচিত। এটি সাইট্রাস গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। বৃহত্তর সিলেটের বিভিন্ন পাহাড়ি অঞ্চলে এর চাষ হয়। তবে সাতকরার মূল উৎপত্তিস্থল ভারতের আসাম রাজ্যের পাহাড়ি এলাকা। প্রাচীনকাল থেকে স্থানীয় আদিবাসীরা এটি রান্না এবং ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন। সাতকরায় আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস।
সাতকরা সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় গরুর মাংস রান্নায়। মাংসের সঙ্গে রান্না করলে ভিন্ন রকম স্বাদ ও ঘ্রাণ পাওয়া যায়। সাতকরা এবং গরুর পায়ের হাড় দিয়ে জনপ্রিয় ‘খাট্টা’ (টক জাতীয় রান্না) তৈরি করা হয়। তবে মাংস ছাড়াও মাছসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি রান্নায়ও সাতকরা ব্যবহৃত হয়। সাতকড়ার খোসা দিয়ে নানা স্বাদের মুখরোচক আচার তৈরি হয়। সাতকড়ার আচার যারা একবার খেয়েছেন তারা জীবনেও এর স্বাদ ভুলবেন না। সাতকরার খোসা শুকিয়ে, ভাপ দিয়ে ফ্রিজে দীর্ঘদিন রেখে খাওয়া যায়। প্রতিবছর কোরবানির ঈদের সময় সাতকড়ার ব্যবহার সবচেয়ে বেশি হয়।
একটা সময় সাতকড়া এর সুবাস সিলেটে সীমাবদ্ধ ছিলো। তবে এখন তা দেশব্যাপী বিস্তৃত। মেহমান আপ্যায়নে সাতকরার এমন চাহিদা যে বাইরে থেকে সিলেটে বেড়াতে আসা ভোজন রসিকরা আগেই নিশ্চিত করে নেন খাবারে সাতকড়ার উপস্থিতি। তবে সাতকড়া রান্না করা একটু জটিল। পরিমাণে এদিক-সেদিক হলে রান্না তিতা হয়ে যায়।
সিলেটের রপ্তানি পণ্যের মধ্যে সাতকড়া অন্যতম। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা প্রবাসী সিলেটিরা বিদেশে সাতকড়াকে পরিচিত করে তুলেছেন। তাই দিন দিন সাতকড়ার রপ্তানি বাড়ছে, বিশেষ করে ইংল্যান্ডে এর বিশাল চাহিদা রয়েছে। তাছাড়া প্রবাসী আত্মীয়-স্বজনকে সিলেটের মানুষ প্রতিনিয়তই সাতকরা পাঠিয়ে থাকেন। দেশে বেড়াতে এলে যাওয়ার সময় প্রবাসীরা সাতকরা সঙ্গে নিয়ে যান। এটি সিলেটিদের অস্তিত্বে মিশে আছে।
আরো পড়ুনঃ