ফেসবুকে জনৈক এক ব্যক্তি পোস্ট করলেন, তিনি গান শুনছিলেন। এরই মাঝে আজান শুরু হওয়ায় পাশ থেকে এক ভদ্রলোক তাকে বললো, গান বন্ধ করতে। আজান শেষে ওই ভদ্রলোকই আবার তাকে বললেন, আজান শেষ। এখন গান ছাড়েন…
কি বুঝলেন এটুকু থেকে? অর্থাৎ আমাদের চারপাশে এমন কিছু নামমাত্র মুসলিম ভাই রয়েছেন, যারা আজানের সময় ঠিকই বলে, ভাইয়া টিভির ভলিউমটা একটু কমায় দেন। আজান শেষে তারাই আবার ভলিউম বাড়িয়ে টিভি দেখা শুরু করে। নামাজে যায় না…
এখানে কি আপনি ধর্ম অবমাননাকর কিছু দেখতে পেয়েছেন? বরং এখানে এমন একপ্রকার ব্যক্তির কথা বলা হয়েছে, যারা নিজেদের ধার্মিক হিসেবে উপস্থাপন করে সমাজের আর দশজনের সামনে ভালো সাজার জন্যে, অথবা কখনো কখনো বাড়তি কিছু সুবিধা পাবার আশায়…
অথচ এই পোস্টটি লেখার কারণেই এক ব্যক্তিকে নাস্তিক আখ্যা দিয়ে উগ্রবাদীদের উসকে দেয়া হচ্ছে। একের পর এক প্রাণনাশের হুমকি পাঠানো হচ্ছে। ভাবা যায়? কাদের মাঝে আছি আমরা ! এতটাই নিরক্ষর আর উগ্রবাদী লোক আমাদের চারপাশে? প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণের আগে চলুন আরেকটু গভীরে যাই। জেনে আসা যাক ধার্মিক ছদ্মবেশী সেসব ব্যক্তি ও গোষ্ঠীদের পরিচয়…
ধর্মে যে বিশ্বাস করে, সে আস্তিক। আর যে পৃথিবীর কোনো ধর্ম কিংবা সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করেনা, তাকে বলা হয় ‘নাস্তিক’। ব্যাক্তিগতভাবে একটা মানুষ আস্তিক বা নাস্তিক হতেই পারে, এতে সমাজ-দেশ কিংবা একটা নির্দিষ্ট ধর্মানুসারীদের কোনো সমস্যা হবার কথা না, এবং সাধারনত হয়ও না। আমাদের দেশের প্রায় নব্বই শতাংশ মানুষ ইসলাম ধর্মাবলম্বী, বাকীরা অন্যান্য ধর্মের অনুসারী এবং নাস্তিক প্রায় নেই বললেই চলে। এমতাবস্থায় গুটিকয়েক অসাধু ব্যাক্তিসত্বা যখন নিজেদের নাস্তিক পরিচয় দিয়ে শুধুমাত্র মুসলিমদের দিকে আঙুল উঁচিয়ে ইসলাম ধর্মের নিন্দা করবে, তখন তো সমস্যা কিছুটা হবেই।
প্রথমত, নাস্তিক মানে কোনো নির্দিষ্ট ধর্মের বিরোধী নয়। নাস্তিক হচ্ছে সেই ব্যাক্তি, যে পৃথিবীর কোনো ধর্মেই এবং কোনো সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করেনা।
দ্বিতীয়ত, একজন মানুষ আস্তিক বা নাস্তিক যা-ই হোক না কেন, সেটা একান্তই তার নিজস্ব ইচ্ছা। কিন্তু নাস্তিক হয়ে সে যদি তার চারদিকে নাস্তিকতা বিস্তারের চেষ্টা করে, সেটা অবশ্যই অপরাধ হিসেবে বিবেচ্য হবে।
বর্তমান বিশ্বে প্রত্যেকের নিজস্ব মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলার সহজলভ্যতা এই মত প্রকাশের রাস্তাটা আরো বেগবান করেছে। যে কেউ নিজের ঘরে সোফায় শুয়ে পায়ের উপর পা তুলে নিজের মতামত পৌঁছে দিতে পারছে টার্গেট অডিয়েন্সের কাছে। সমস্যাটার শুরু এখানেই। বিগত প্রায় এক দশকের মধ্যে আমাদের বাংলাদেশে ফেইসবুক এবং স্মার্টফোন খুব সহজলভ্য হয়ে গিয়েছে। আর এই মাধ্যমটাকে অনেকেই ব্যবহার করেছে এবং করছে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারে। বিশেষ করে, নাস্তিকরা।
বিগত প্রায় এক দশকের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, বাংলাদেশী অনলাইন সোসাইটিতে নাস্তিকতা ছড়িয়ে সমালোচিত হওয়া বেশ কিছু নাস্তিক এখন ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সরকারি ইমিগ্রেন্ট হয়ে নিশ্চিন্তে বসবাস করছে। এই মানুষগুলো আসলে নাস্তিক না। তারা হচ্ছে ইসলাম বিদ্বেষী। মুসলিম দেশের সোসাইটিতে ইসলামের অবমাননা করাটা ছিলো তাদের একটা বিশেষ প্ল্যান। ইওরোপের বিভিন্ন দেশে সরকারি এ্যসাইলাম পাবার ধাঁন্ধা। বাংলাদেশে বসে কেউ নাস্তিকতা করে না। করলেও তারা সময়মতো দেশ ছাড়ার সব ব্যাবস্থা করেই ওই পথে হাঁটতে শুরু করে।
কিন্তু এসব ঘটনা তো আমরা প্রায় সবাই জানি। আবার কেন এসব কথা বলছি? শুনুন তবে-
রিসেন্টলি বেশ কিছু প্রবাসীরা দেশে বসবাসরত নাগরিকদের নাস্তিক আখ্যা দিয়ে সমাজে একটা নষ্ট প্রোপাগান্ডা তৈরী করার চেষ্টা করছে। ব্যাক্তিগত উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য তারা কিছু সাধারন ধর্মভীরু নাগরিকদের ‘নাস্তিক’ বলে অপবাদ রটাচ্ছে। এরা মূলত নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াত-শিবিরের এক সময়ের তৎপর কর্মী এবং স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। বাংলাদেশ সরকার জামায়াতের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষনা করার পর এরা প্রসাশনের ভয়ে দেশের বাইরে পালিয়ে গিয়েছিলো। এরা দেশের বাইরে বসে সবসময় দেশ ও সরকার বিরোধী কথা-বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে আমাদের দেশীয় অনলাইন কমিউনিটিতে।
এমনকি কাজী নিপুও পেয়েছেন প্রাণনাশের হুমকি !
এবারের নির্বাচনের সময় ছারপোকা ম্যাগাজিনে “কেনো আপনার আওয়ামীলীগে ভোট দেয়া উচিত ?” শিরোনামে একটি লেখা প্রকাশিত হবার পর থেকেই একের পর এক আক্রমণের শিকার হয়েছে প্রজেক্ট ছারপোকা। সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের ছারপোকা ম্যাগাজিনের চীফ এডিটর ‘কাজী নিপু’, লেখক মোহাম্মদ নুর হোসাইন, আশিকুর রহমান সহ অন্যান্য লেখকদের নামে নাস্তিকতার অপবাদ ছড়িয়ে যাচ্ছে। কিছু উগ্রবাদী গোষ্ঠী এই ব্যক্তিবর্গের লেখার অপব্যাখ্যা দিয়ে তাদেরকে নাস্তিক বলে অপপ্রচার চালিয়ে উগ্রধার্মিকদের মনে হিংসা জাগিয়ে তুলছে এবং জেএমবি গোষ্ঠীদের সংঘবদ্ধ করার চেষ্টা চালাচ্ছে। প্রাণনাশের হুমকি পেয়েছেন এই পত্রিকার পরিচালক কাজী নিপু সহ আরো বেশ কয়েকজন লেখক। ছড়ানো হচ্ছে আরো নানান রকম ভূয়া অপবাদ। যার ফলে আমরা নির্দোষ মানুষগুলো সমাজে হেয় ও প্রতিপন্ন হচ্ছি। আমাদের পরিবার এবং পরিচিত সমাজে মুখ লুকিয়ে বাঁচতে হচ্ছে। নিরপত্তাহীনতা গ্রাস করেছে আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে। আমরা উক্ত বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এবং দেশের বাইরে অবস্থানরত কোনো অপশক্তির কালো হাত যেন আমাদের সমাজকে কলুষিত করতে না পারে, সেই দিকে নজর রাখার অনুরোধ করছি ছারপোকার পাঠকদের।