ইসেই সাগাওয়া, মানুষটা এখন সাহিত্যিক হিসেবেই পরিচিত। ১৯৪৯ সালে জাপানের এক ধনাঢ্য পরিবারে জন্ম হয় এই ব্যক্তির। আশির দশকের কুখ্যাত সব সিরিয়াল কিলার ও মার্ডারারদের গল্প বলতে গেলে তাদের সাথে সাথে বিশ্বের অন্যতম নরপিশাচ হিসেবে উঠে আসে এই মানুষটির নাম।
ইসেই সাগাওয়া ছিলেন খারাপ স্বাস্থ্যের অধিকারী এক লোক। তার উচ্চতা ছিলো ৫ ফুটেরও কম। জাপানীরা খাটো হলেও সাধারণত এত খাটো হয় না। ১৯৭৭ সালে ২৮ বছর বয়সে ইসেই সাগাওয়া সাহিত্য বিষয়ে লেখাপড়া করতে জাপান থেকে ফ্রান্সের প্যারিসে পাড়ি জমান। সেখানেই তার ঘটনার শুরু…
এর আগপর্যন্ত বেশ ভালোই চলছিলো সাগাওয়ার শিক্ষাজীবন। ফার্স্ট গ্রেডে পড়াকালীন সময়ে এক সহপাঠীর পায়ের থাই দেখে সাগাওয়া বিস্মিত হন। সাগাওয়া নিজে ছিলেন পেন্সিলের মত সরু। তার পা ছিলো চিকন ফিকফিকে। কিন্তু তার সহপাঠী মেয়েটির পায়ের থাই ছিলো সুন্দর, মোটা ও আকর্ষণীয়। তা দেখেই সাগাওয়ার মাথা ঘুরে যায়। অন্য ছেলেরা যেখানে মেয়েদের সুন্দর থাইয়ের প্রশংসা করত এবং তাদের কাছে পেতে চাইত, সেখানে সাগাওয়া ওই মেয়েদের থাইয়ের মাংস কামড়ে খাওয়ার স্বপ্ন দেখতেন !
সাগাওয়ার মতে, তিনি কখনোই কোনো নারীকে হত্যা করতে চাননি। শুধু চেয়েছেন তাদের স্বাস্থ্যবান নাদুস নুদুস দেহের মাংস কামড়ে খেতে !
১৯৭৭ সালে ফ্রান্সের প্যারিসে পড়ালেখা করতে চলে আসেন ইসেই সাগাওয়া। এবার আর স্বপ্ন পূরণ করতে কোনো বাধা নেই। একা একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন ইসেন সাগাওয়া। নিজের ঘরে যা খুশি তাই করার সুযোগ হাতে এসে গেছে !
এরপর থেকে সাগাওয়া প্রতি রাতেই বাসায় নতুন নতুন পতিতাদের ডেকে আনতেন এবং চুপিসারে তাদেরকে গুলি করে মারার চেষ্টা করতেন। কিন্তু প্রতিবারই তিনি ব্যর্থ হন।
১৯৮১ সালের ১১ই জুন ফ্রান্সে থাকাকালীন সময়ে তিনি রেনী হার্টেভেল্ট (Renée Hartevelt) নামে ৩২ বছর বয়সী এক নারী সহপাঠীকে তার বাসায় দাওয়াত করেন। মেয়েটি হল্যান্ড থেকে ফ্রান্সে লেখাপড়া করতে এসেছিলো। সাগাওয়া রেনীকে বলেন যে, তার পড়ায় কিছু ঘাটতি আছে। রেনীর সহায়তা প্রয়োজন তার। তারা রাতে একসাথে পড়াশুনা ও নৈশভোজন করবেন। কিছু না ভেবেই সরলমনে রেনী হার্টেভেল্ট রাজী হয়ে যান সাগাওয়ার কথায়। এবং রাতে গিয়ে তার বাসায় হাজির হন…
নৈশভোজ শেষে সাগাওয়া গ্লাস প্লেট নিয়ে কিচেনে চলে যান এবং এগুলো পরিষ্কার করার ভনিতা করতে থাকেন। তখন অন্য রুমে বসে কবিতা পড়ছিলেন রেনী। এটাই সুযোগ, আর অপেক্ষা না করে পেছন থেকে ঘাড় বরাবর রাইফেল তাক করে রেনীর মাথায় গুলি করে দেন সাগাওয়া। সাথে সাথেই রেনীর মস্তক বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ঘটনার আকস্মিকতায় সাগাওয়া নিজেও এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেছিলেন। বিরাট বড় ভুল হয়ে গেছে, এমনটা ভাবতে ভাবতে সাগাওয়া প্রথমে অ্যাম্বুলেন্স ডাকতে চাইলেন। পরে তিনি নিজেকে বুঝানোর চেষ্টা করেন, “তিনি কোনো ভুল করেননি। এটা তার ৩২ বছরের স্বপ্ন ছিলো। এই স্বপ্ন আজ সফল হয়েছে।“
এরপর সাগাওয়া রেনীর মৃতদেহটিকে প্রথমে ধর্ষণ করেন। তারপর দেহটিকে কেটে বিচ্ছিন্ন করতে থাকেন। হত্যাকান্ডের জবানবন্দিতে সাগাওয়া বলেন, “আমি প্রথমেই মৃতদেহটির পশ্চাৎদেশের অংশটি কাটি। সেখানে প্রচুর তেলতেলে চর্বিযুক্ত মাংস পাই। মাংস কাটার সময় আমি নিজেকে সামলাতে না পেরে দ্রুত একখন্ড মাংস মুখে পুরে ফেলি। এটা ছিলো আমার স্বপ্নপূরণের মুহুর্ত।”
তবে সাগাওয়ার আফসোস ছিলো তিনি বহু চেষ্টা করেও জীবিত অবস্থায় মেয়েটির মাংস খেতে পারেননি। খুন করা তার উদ্দেশ্য ছিলো না। শুধু ওই একখন্ড মাংস খাওয়ার জন্যই তিনি বাধ্য হয়ে মেয়েটিকে খুন করেছেন !
হত্যাকান্ডের দুদিনের মধ্যেই সাগাওয়া রেনীর মৃতদেহের মাংসল জায়গাগুলো খেয়ে সাবাড় করে ফেলেন। শুধু হাত পা কবজি ও মাথা সহ দেহের কিছু শক্ত অংশ অবশিষ্ট থেকে যায়। সাগাওয়া এগুলো দুটি ব্রিফকেসে ঢুকিয়ে একটি ট্যাক্সিক্যাব ভাড়া করে Bois de Boulogne park এর উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান। এই পার্কের ভেতরকার লেকে ব্রিফকেস দুটি ফেলে দেয়াই ছিলো তার উদ্দেশ্য। পথিমথ্যে কিছু মানুষ তার ব্রিফকেস থেকে রক্ত চুইয়ে পরতে দেখে পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ ততক্ষনাৎ উপস্থিত হয়ে সাগাওয়াকে ব্রিফকেস সহ আটক করে ফেলেন।
পুলিশ তাকে আটক করার পর যখন খুনের কারণ জানতে চান, সাগাওয়া তখন স্বাভাবিক সূরে বলেন, “আমি মাংস খাওয়ার জন্য তাকে মেরেছি। মাংস খেতে হলে কিছু না কিছুকে তো হত্যা করতে হবেই” !
দুইবছর জেল খাটার পর ইসেই সাগাওয়ার কেসটি যখন আদালতে উঠে, কোর্ট তখন তাকে অপ্রকৃতিস্থ দাবী করে মানসিক হাসপাতালে পাঠানোর আদেশ দেয়। নিয়ম অনুযায়ী সাগাওয়াকে ফ্রান্স থেকে জাপানে পাঠিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু যেহেতু আইন অনুযায়ী জাপানে সাগাওয়ার নামে কোনো মামলা নেই, তাই সাগাওয়া জাপানে গিয়েই মুক্ত হয়ে যান। এবং ছোটখাট সেলিব্রেটির তকমাও পেয়ে বসেন !
এ ঘটনার পিছে হাত ছিলো সাগাওয়ার ধনী পিতার। তিনি মিডিয়াকে এমনভাবে ব্যবহার করেছেন, যাতে তার ছেলেকে সম্পূর্ণ নিরপরাধ মনে হয়। ক্ষমতার চাপে পরে মিডিয়া বাধ্য হয় সাগাওয়াকে সুপারহিরো হিসেবে ঢালাওভাবে প্রচার করতে। জাপানের সাধারণ জনগণও তাই মেনে নেয়। ফলশ্রুতিতে ইসেই সাগাওয়া হয়ে যান জাপানের সুপারহিরো !
সাগাওয়া এখনো টোকিওতে তার নিজ এলাকায় সগৌরবে বুক উচু করে হাঁটেন। এবং সেখানে তিনি বেশ জনপ্রিয়তাও পেয়েছেন। সম্প্রতি তার বিশতম বইও বাজারে প্রকাশ পেয়েছে, Extremely Intimate Fantasies of Beautiful Girls !
জাপানের অন্যতম একজন সাহিত্যিক হিসেবে তিনি এখন পরিচিত। অথচ এই মানুষটার আড়ালেই লুকিয়ে ছিলো ভয়ংকর এক নরখাদক !