সারাবিশ্বে অনলাইনে ভাইরাল হওয়া স্যুইসাইড গেইম ‘ব্লু-হোয়েল’ আতঙ্ক কেটেছে কি কাটেনি, আর এই সময়েই চলে এসেছে নতুন আরেক আতঙ্ক। এবারের আতঙ্কের নাম “মমো”।
মমো একটা অনলাইন প্রোজেক্ট, যা মূলত হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যেই আমেরিকা ও মেক্সিকো-তে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পরেছে এই মমো। আমেরিকায় এর বিরুদ্ধে বিশেষ সতর্কতা জারী করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপজুড়ে এর প্রাথমিক বিস্তৃতির আশঙ্কা করা যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মমো’র তুলনা করছেন আলোচিত ‘ব্লু হোয়েলের সাথে। বলেছেন ভয়াবহ এই খেলা নিয়ে যেতে পারে মারাত্মক পরিণতির দিকে। মমো’র লোগো দেখতে বেশ ভয়ঙ্কর। গায়ের চামড়া ফ্যাকাসে, ঠিকরে বের হয়ে আসা চোখ আর দু’দিকে অতিরিক্ত প্রসারিত লাল ঠোট।
মমো যেকোন সময়ে আপনার ইন্টারনেট কানেকশন থাকা কম্পিউটার কিংবা মোবাইলের স্ক্রীনে ভেসে উঠতে পারে, এবং আপনাকে সম্পূর্ন অপরিচিত কোনো গেম খেলতে প্রলুব্ধ করতে পারে।
আমেরিকায় কর্তৃপক্ষ জনগণকে সতর্ক করে বলেছে, এ গেম যেন কেউ মেসেজের মাধ্যমে অন্যের সাথে শেয়ার না করে। তারা বলছে, এই অনলাইন গেম কাউকে মৃত্যু কিংবা মৃত্যুর কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারে।
অনলাইন অপরাধ নিয়ে কাজ করা মেক্সিকোর একটি পুলিশ ইউনিট বলছে, ফেইসবুকে একদল লোক সাধারন জনগণকে প্রলুব্ধ করে একটি অপরিচিত নাম্বারে কল দেয়ার জন্য।
মেক্সিকো পুলিশের মতে অনেক ব্যবহারকারী জানিয়েছে যে মমো-তে মেসেজ পাঠানোর পর সে সহিংস ছবি পাঠিয়েছে। অনেকে হুমকিমূলক মেসেজ পেয়েছেন বা ব্যক্তিগত তথ্যও ফাঁস হয়ে যাচ্ছে।
স্পেইনেও পুলিশ এ ধরনের গেম উপেক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছে নাগরিকদের।
অনলাইন প্ল্যাটফর্ম রিডইট বলছে, তাদের কাছে সবচেয়ে বেশি করা হয়েছে এমন প্রশ্নগুলোর একটি হলো হোয়াটসঅ্যাপ বালিকা মমো কি ও কে?
সবচেয়ে জনপ্রিয় উত্তর ছিলো, স্প্যানিশভাষী কোন দেশ থেকে একজন ‘ইনস্টাগ্রাম’ থেকে একটি ছবি নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট তৈরি করে। লোকজন সেখান থেকে একটি কন্টাক্ট নাম্বার পায় ও গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে তুমি একে স্পর্শ করলে সে তোমাকে গ্রাফিক ছবি ও মেসেজ দিবে। কেউ কেউ বলেন যে আপনার সব ব্যক্তিগত তথ্যে তার প্রবেশাধিকারের সুযোগ আছে।
যতটুকু জানা যাচ্ছে, হোয়াটসঅ্যাপ গেমটি জাপানের কোড সম্বলিত তিনটি ফোন নাম্বারের, কলম্বিয়ার কোড সম্বলিত দুটি আর মেক্সিকোর কোড সম্বলিত আরেকটি নাম্বারের সাথে সংযুক্ত। আর ছবিটি নেয়া হয়েছে টোকিও’র একটি প্রদর্শনী থেকে।
যদিও এটা জানা খুবই কঠিন যে গেমটি আসলে কোত্থেকে এসেছে কিন্তু প্রাথমিকভাবে বলা যায় যে ছবিটি জাপানের মমোকেই প্রতিনিধিত্ব করতে ব্যবহার করা হয়।
মমো’র ভীত চাহনির মুখ অনেকটা পাখির মতো দেখতে এক মানবীর মূর্তিকে তুলে ধরে। ২০১৬ সালে টোকিওতে ভ্যানিলা গ্যালারীতে একটি প্রদর্শনীর অংশ ছিলো এটি। দু’বছর আগে আরেকটি প্রদর্শনীতে মমো ছিলো বিশেষ আকর্ষণ। বহু মানুষ মমোর সাথে ছবি তুলেছে এবং এমন বহু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে প্রকাশিত হয়েছে।
এখন মেক্সিকোর পুলিশ বলছে কেউ ইনস্টাগ্রাম থেকে ওই অনুষ্ঠানের ছবি নিয়ে সেটাকেই কেটে কুটে এমন বানিয়েছে।
বিপদজনক কেনো?
মেক্সিকোর পুলিশ বলছে, যেকোন পরিস্থিতিতে সম্পূর্ন অপরিচিত কোন নাম্বারের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা উচিৎ নয়। তবে এর বাইরেও অন্তত পাঁচটি কারণে মমো কে উপেক্ষা করাই ঠিক বলে মনে করে তারা। যেমন-
১. ব্যক্তিগত তথ্য চুরির সম্ভাবনা।
২. সহিংসতা, এমনকি আত্মহত্যায় প্রলুব্ধ করার সম্ভাবনা।
৩. ব্যবহারকারী হয়রানির শিকার হওয়ার সম্ভাবনা।
৪. ব্যবহারকারী চাঁদাবাজির শিকার হওয়ার সম্ভাবনা।
৫. ব্যবহারকারী মানসিক ও শারীরিক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হতে পারে।
সুতরাং এই মুহূর্তেই আমাদের সাবধান হওয়া অত্যন্ত জরুরি। মমো যেন কোনো অবস্থাতেই ব্লু-হোয়েল এর মতো জীবননাশকে পরিনত না হতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পরিবারের টিন-এজার এবং ছোটদের যারা ইন্টারনেটে আশক্ত তাদের দিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে। আপনার ডিপ্রেশনে আক্রান্ত বন্ধুটির দিকেও সর্বদা নজর রাখবেন।