যারা দেশে বিদেশে ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য বেনিন হয়ত খুব একটা আদর্শ জায়গা নয়। বাজে ড্রাইভিংয়ের জন্য বিখ্যাত এই দেশটিতে নানান ধরণের সমস্যা রয়েছে, যা একজন ট্যুরিস্টকে পদে পদে বিভ্রান্ত করবে। কিন্তু ব্যাপারটা এমন না যে, এই দেশটি একেবারেই খারাপ ! বেনিন এর রয়েছে নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য ও স্বক্রীয়তা…
খ্রিষ্টান, মুসলিম ও ভুডুয়ান, এই তিন ধর্মের সাড়ে ১০ মিলিয়ন লোক এই দেশটিতে বসবাস করেন। ভুডু বা কালো জাদু বিদ্যাকে এখানে পবিত্র চোখে দেখা যায়। দেশটির অনেক মানুষ এটিকে ধর্ম হিসেবে মেনে নিয়েছেন। দেশটির অধিকাংশ মানুষই অশিক্ষিত এবং তারা কৃষিকাজ ও দিনমজুর পেশায় নিয়োজিত থেকে জীবনধারণ করেন। পশ্চিম আফ্রিকায় অবস্থিত এই বেনিন দেশটি সম্পর্কে চলুন কিছু অদ্ভুত তথ্য জেনে নেয়া যাক…
উইন্টার ইস্যু
শীতকাল নিয়ে বেনিনের মানুষদের কিছু সমস্যা আছে। যা অন্য কোনো দেশের মানুষদের সাথে মিলেনা। বেনিনে গেলে আপনি দেখতে পাবেন, এখানে শীতের সামান্য তাপমাত্রায় মানুষ ভারী ভারী সোয়েটার গায়ে দিয়ে ঘুরছে। অথচ এই তাপমাত্রায় আমরা সাধারণত সেন্ড্রোগেঞ্জি পরে ঘুরি !
কিন্তু কেনো তারা এত সামান্য ঠান্ডায় কাবু হয়ে যায়? এর কারণে হচ্ছে, বেনিনে গ্রীষ্মের সময় তাপমাত্রা কখনো কখনো ৫০ ডিগ্রিও ছাড়িয়ে যায়। প্রচন্ড গরমে অভ্যস্ত এই দেশের মানুষেরা তাই শীতের অল্প তাপমাত্রাই সহ্য করতে পারেনা। বেনিনের লোকদের যদি প্রখর শীতের সময় বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়, এরা ভয়ে লেপের নিচ থেকেই বের হবেনা। তাহলে যদি এদেরকে সাইবেরিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়, তাহলে কি অবস্থা হবে ভেবে দেখেন 😛
জাদু শিক্ষার ধর্ম
পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোয় জাদুশিক্ষার ধর্ম রয়েছে। কালো জাদু বা ভুডুকে এখানে শৈশব থেকে লালন করা হয়। তারা এটাকে অত্যন্ত সম্মান আর ভক্তির চোখে দেখে। ভুডুকে ধর্ম হিসেবেও মান্য করা হয়। তবে হ্যাঁ, হলিউড বলিউডের মুভিতে পুতুলের গায়ে সুঁচ বসিয়ে ভুডুকে যেভাবে পরিবেশন করা হয়, এই ভুডু কিন্তু ওরকম কিছু না। অত্যন্ত শান্তির ধর্ম এটি। এ কারণেই এরা একই দেশে মুসলিম ও খ্রিষ্টানদের সাথে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে পারছে। সারাবিশ্বের মধ্যে একমাত্র এই দেশটিতেই ভুডুয়ান অফিসিয়াল ধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে !
তবে হ্যাঁ, কালো জাদু বা জাদুতত্বের বিকৃত কিছু অধ্যায় এরাও শৈশব থেকে আয়ত্ব করে থাকে।
ফটোগ্রাফি ইস্যু
বেনিন এর লোকেরা বিশ্বাস করেন কোনো কিছুর ছবি তুললে সেটির আত্মা বা সৌন্দর্য চুরি হয়ে যায়। দেশটির মানুষদের ছবি তোলার প্রতি খুবই অনীহা রয়েছে। তারা ছবির ফ্রেমে বন্দি হতে খুবই ভয় পান। তাই বেনিনে গেলে কারো ছবি তোলার আগে আপনাকে তাদের অনুমতি নিতে হবে। এমনকি অনুমতি ছাড়া আপনি কারো বাগানের একটি ফুল গাছের ছবিও তুলতে পারবেন না। অনেক কষ্টে তাদের অনুমতি সংগ্রহ করে তবেই আপনি ছবি তুলতে পারবেন।
পেট্রোল পাম্প
বেনিনে ঘুরতে গেলে সবার প্রথমে আপনি যে সমস্যাটির সম্মুখীন হবেন, তা হচ্ছে পেট্রোল। দেশটিতে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দুরে দুরে একেকটি পেট্রোল স্টেশন অবস্থিত। তবে হ্যাঁ, অতটা চিন্তারও কিছু নেই। পথে কিছু তরুণ বয়সী ছেলেরা প্লাস্টিকের গ্যালন ভর্তি নাইজেরিয়া থেকে অবৈধভাবে আনা পেট্রোল আপনার কাছে বিক্রয় করতে চাইবে। সেখান থেকে প্রয়োজন মত অবৈধ পেট্রোল কিনে নিলেই পারেন, যদি মাঝপথে গাড়ি থামালে ডাকাতির ভয় না থাকে !
ইয়োভো : সাদা চামড়ার লোক
বেনিনে ফর্সা, হালকা ফর্সা এবং শ্যামলা লোকদের ইয়োভো বলে ডাকা হয়। আপনি যদি ফর্সা হয়ে থাকেন, তাহলে বেনিনের শিশুরা আপনাকে দেখে অবশ্যই ভয় পেয়ে দৌড়ে পালাবে। কারণ এই দেশটিতে ট্যুরিস্ট খুব একটা যায় না বললেই চলে। যেহেতু দেশটির প্রায় ১০০ ভাগ মানুষই কৃষ্ণাঙ্গ, তাই এ দেশটির শিশুরা আগে কখনো ফর্সা মানুষ দেখেনি। ভয় পেয়ে দৌড়ে পালানোটাই তাদের জন্য স্বাভাবিক।
বেনিন সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য
- তুলা রপ্তানির জন্য দেশটি বিখ্যাত
- স্বাধীনতার আগে এই দেশটি ছিলো স্লেভ কলোনি বা দাসীদের থাকার জায়গা। এই জায়গায় আফ্রিকান দাসীদের কেনাবেচা করা হত।
- দেশটির প্রতিটি নারী ৫টি করে সন্তান জন্ম দেন।
- ইন্টারনেটের মুখ দেখেছে দেশটির মাত্র ৪ শতাংশ মানুষ।
- দেশটিতে একমাত্র চুরি ব্যতীত আর কোনো অপরাধ নেই। বড় ধরণের ক্রাইম বা খুনখারাবির ঘটনা এখানে ঘটে না।
- এইডস এই দেশটির একটি বড় সমস্যা।