ফুটবল বিশ্বকাপ মানেই এক ধরনের অদম্য উদ্দীপনা। বিশ্বের অধিকাংশ দেশে বিশ্বকাপের সময় এক ধরনের উৎসব অবস্থা কাজ করে।
আমরা সবাই জানি যে মাত্র ২৪ ঘন্টা আগে পর্দা নেমেছে বিশ্বের সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ আসর ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপের। প্রতি বিশ্বকাপের ফাইনালেই তৈরী হয় কোনো রেকর্ড, অথবা রেকর্ডের খাতায় নতুনভাবে নাম উঠে কোনো খেলোয়াড়ের। এই বিশ্বকাপে ফাইনালেও তৈরী হয়েছে এরকম কিছু রেকর্ড। চলুন এক নজরে দেখে নেওয়া যাক বিশ্বকাপে ফাইনালের সব রেকর্ডসমূহ…
র্যাংকিং যেখানে শেষ কথা নয়
এ বছর বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়া ছিলো একটি আশা জাগানিয়া দল।কিন্তু কোনো ফুটবল বিশ্লেষক ক্রোয়েশিয়া কে হট ফেভারিট হিসেবে দেখেনি। ফিফা র্যাংকিং এ বিশ নাম্বারে থাকা এই দলটি ফাইনালে উঠে গোটা বিশ্বকে শুধু চমকে দিয়েছে তাই নয়, বাধ্য করেছে ইতিহাসকে নতুন ভাবে লেখার জন্যে। ক্রোয়েশিয়া একমাত্র দল যে ফিফা র্যাংকিং এ দশের বাইরে থেকেও বিশ্বকাপের ফাইনালিস্ট হিসেবে খেলেছে।
ঘরের শত্রু বিভিষণ (!)
প্রথম গোলটার কথা মনে আছে নিশ্চয়? এতোয়ান গ্রিজম্যানের ফ্রি-কিকটাকে কিভাবে কাজে লাগিয়েছেন ম্যানজুকিচ? পরবর্তীতে অবশ্য তার ভুলটা শুধরেছেন হাফ টাইম পরবর্তীতে একটা গোল করে। এবং এরই মাধ্যমে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখালেন তিনি। বিশ্বকাপ ফাইনালে এই প্রথম একই ব্যক্তি দ্বারা নিজেদের জালে এবং বিপক্ষ দলের জালে বল জড়ানো হলো।
এই রেকর্ড হয়ত ভুলেই যেতে চাইবেন ১৭ নাম্বার জার্সি পরিহিত এই ক্রোয়েশিয়ান খেলোয়াড়।
রেফারী যেখানে ভি আর
যদিও বিশ্বকাপের আগে ভি আর এর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন অনেকেই, কিন্তু তাদের মুখ বন্ধ করে দিয়েছে এই ব্যবস্থাটি। অনেক গুরুত্বপূর্ণ মুহুর্তে রেফারী কে মত বদলাতে সাহায্য করেছে এই উন্নত ব্যবস্থাটি। বলা বাহুল্য বিশ্বকাপ ফাইনালেও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে ভি আর সিস্টেম। এই ভি আর এর সহায়তা নিয়েই ফ্রান্সের স্বপক্ষে একটি পেনাল্টি শুটআউট নির্ধারিত হয়। এবং এটাই প্রথম বিশ্বকাপ ফাইনাল যেখানে ভি আর প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়েছে।
গোলবন্যা
দ্বিতীয়বারের মত বিশ্বকাপ ফাইনালের প্রথমার্ধে মোট ৩ টা গোল দেখলো বিশ্ব। এর আগে মাত্র একবারই এরকম হয়েছিলো ১৯৭৪ সালে। জার্ড মুলারের জার্মানীর বিপক্ষে আর্জেন্টিনার। কিন্তু গুরুত্বের দিক থেকে হয়ত এই ম্যাচ টাকেই মনে রাখবেন সবাই।
কালোদের বিশ্বকাপ
বর্ণবাদ প্রথার মত একটা ঘৃণ্য সামাজিক প্রথাও যে ফুটবলের কাছে হার মানে তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ দিলো রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচ। এই প্রথম পাচ জন কৃষ্ণাঙ্গ নিয়ে বিশ্বকাপ ফাইনাল খেললো কোনো ইউরোপিয়ান দল। তাদের মধ্যে দুইজন গোল করলো (কিলিয়ান মোবাপ্পে, পল পগবা)। বাধ্য করলো নতুন ইতিহাস লেখতে।
নতুন কালোমানিক
আমরা সবাই জানি পেলে কে সবাই কালো মানিক বলে থাকে। কিন্তু উনিশ বছর বয়সী কিলিয়ান মোবাপ্পে হয়তো কিছুদিনের মধ্যে নতুন কালো মানিক হিসেবে খ্যাতি লাভ করবেন। এ বছর বিশ্বকাপ ছিলো শুধুই মোবাপ্পের। ফুটবল দেবতার আশীর্বাদপ্রাপ্ত এই মোবাপ্পে বিশ্বকাপ ফাইনালে নতুন ইতিহাস রচনা করলো। পেলো সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে ফাইনালে গোল করার সম্মান।
পগবাদের জাদু : এই প্রথম কোনো বিশ্বকাপ ফাইনালে দুইজন ইউরোপিয়ান কৃষ্ণাঙ্গ গোল দিলেন।
অভিবাসীদের বিশ্বকাপ : এই বিশ্বকাপ ফাইনালে ফ্রান্সের হয়ে যে পাচ জন খেলতে নেমেছিলেন তাদের সবাই অভিবাসী হিসেবে ফ্রান্সে এসেছিলেন।
কষ্টকর হলেও সত্যি যে আফ্রিকান সাম্রাজ্য থেকে দাস হিসেবে নিয়ে আসা হয়েছিলো পগবা এমবাপ্পে দের পূর্বপুরুষদের।কে জানতো এই দাস দের বংশধরেরাই ফ্রান্সের নায়ক বনে যাবে??
থিম সং এর গন্ডগোল
খেয়াল করে দেখেছেন পগবা, এমবাপ্পেদের গোলের পরে মাঠে কি গান বাজছিলো? “ফিল দি ম্যাজিক ইন দি এয়ার” নামক এই গানটি। অথচ নিয়ম অনুযায়ী তখন অফিশিয়াল থিম সং “লিভ ইট আপ” বাজানোর কথা। এই প্রথম কোনো বিশ্বকাপের থিম সং ফুটবলপ্রেমীদের মন কাড়তে পারেনি, ইউটিউবে সবচেয়ে বেশী ডিজলাইক পাওয়া থিম সং এটি।
সবশেষে এটাই বলা যায় যে ২০১৮ বিশ্বকাপের ঝাপি শেষ হয়েছে। হাজার রকম চমকের শেষ হয়েছে,চায়ের দোকানের ফুটবল বোদ্ধাদের আবার আগামী চার বছর পর দেখা যাবে। ব্রাজিল কিংবা আর্জেন্টিনার সমর্থকদের গুঞ্জন ধ্বনি হবে অস্পষ্ট। এটাই নিয়ম। আবার আগামী চার বছর পর দেখা যাবে সেই উন্মাদনা। বিজয়ী সমর্থকদের বিজয় মিছিল।
শেষ পর্যন্ত একজন ফুটবল ভক্ত হিসেবে একটা কথাই বলতে চাই, “দেখা হবে কাতার, দেখা হবে ২০২২” !