চট্টগ্রামের মানুষ ভোজন রসিক হিসেবে পরিচিত। তারা যেমন নিজেরা খেতে পছন্দ করেন, তেমনি অতিথি আপ্যায়নেও সেরা। অন্য সব জেলার মত চট্টগ্রামেরও কিছু ঐতিহ্যবাহী খাবার আছে ! তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হচ্ছে মধুভাত ! সবাই মেজবানের মাংস আর কালা ভুনার সাথে মোটামুটি পরিচিত হলেও চট্টগ্রামের এই খাবারটির সাথে বাইরের মানুষদের খুব একটা পরিচয় আছে বলে মনে হয় না। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক চট্টগ্রামের সুস্বাদু এই খাবারটির রেসিপি !
মধুভাত
ভাতের মধ্যে একটা অপরিচিত নাম মধুভাত ! কিন্তু চাটগাঁইয়াদের কাছে অতি প্রিয় এই নাম। এই ভাত রান্না করতে হয় এক বিশেষ প্রক্রিয়া মেনে। অনেকটা পায়েসের মতই এর স্বাদ। মধুভাত রান্না করা হয় রাতের বেলা, আর খেতে হয় সকালে খালি পেটে…
মধুভাত রেসিপি
মধুভাত রান্নার প্রধান উপকরণ :
- জ্বালা চাল
- বিন্নী বা কালিজিরা চাল
- নারকেল
- চিনি (ভাল মানের জ্বালা চাল হলে আলাদা চিনি দিতে হয় না)
- লবন স্বাদ অনুযায়ী
- দুধ/ডানো (ইচ্ছে অনুযায়ী)
জ্বালা চালের নাম শুনে নিশ্চয়ই একটু অবাক হলেন। এটা কেমন চাল? এই চাল হয় অঙ্কুরিত ধান হতে। বিন্নী ধানকে এক দিন এক রাত পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। এরপর প্রতি ৬ রাতে এটা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। আবার পানি ফেলে দিয়ে ঝরঝরা করতে হয়। ভালমত অঙ্কুরিত হলে এক ঘন্টা রোদে শুকাতে হয়। ১০ দিনের মত ফ্লোরে বিছিয়ে রেখে একটা এয়ারটাইট কৌটায় রেখে মজাতে হয়। এরপর আবার রোদে দিয়ে ঢেঁকি বা কলে ছেঁটে অঙ্কুর সহ চালগুলো নিতে হয় (দেখেন কেমন জ্বালায় পড়ে জ্বালা চাল নিতে হয়)।
প্রথমে কালিজিরা সুগন্ধি চালের জাউ ভাত রেঁধে সামান্য চিনি ও জালা চালের গুঁড়ো মিশিয়ে ভালোভাবে ডাল ঘুটনি দিয়ে ঘেঁটে চিনি নারকেল দিয়ে ভারী ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখুন গরম কোন জায়গায়। কোনো ধরা-ছোঁয়া যাবেনা ১০-১২ ঘন্টার আগে। রাতে বসালে তার পরের দিন সকালে বের করবেন। তাহলে একদম পারফেক্ট হবে।
পরিবেশনের আগে দুধ ও নারিকেল মিশায়ে পরিবেশন করুন মজাদার মধুভাত !
এই ভাতের বিশেষত্ব হচ্ছে খাওয়ার পর আসে ঝিমুনী। সারাদিন ঘুমঘুুম ভাব। কারণ হলো, শর্করা জাতীয় খাবারকে কোনো কিছু দিয়ে ঢেকে রাখলে গাজঁনের ফলে অ্যালকোহল উৎপাদন হয় ! মধুভাত যেদিন রাঁধে, সেদিন বাড়িতে উৎসব হয়। এছাড়াও মেয়েদের শ্বশুড়বাড়িতে আশ্বিন কার্তিক মাসে কলসী ভরে মধুভাত পাঠানোর রেওয়াজ আছে আমাদের চট্টগ্রামে।