পণ্যস্ত্রী, গণিকা, যৌনকর্মী কিংবা পতিতা, যে সম্ভাষণেই ডাকা হোক না কেনো, পেশা তাদের একটাই। থাকার জায়গাও আছে নির্ধারণ করা, নাম পতিতালয় ! অন্ন সংস্থানের জন্য টাকার বিনিময়ে স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায় অন্যকে যৌনতৃপ্তি দেয়া এই মানুষগুলোকে আমরা পতিতা বা যৌনকর্মী বলে ডাকি। আইনগতভাবে এদের পেশাকে স্বীকৃতি দিলে বা তাদের পেশাকে সত্যিকারের পেশা হিসেবে বারবার মেনে নিতে বলা হলেও সমাজের কাছে তারা একটি অন্ধকার অস্পৃশ্য অংশবিশেষ বৈ আর কিছুই না। তবে এটা জেনে আপনাকে ঠিকই অবাক হতে হবে, বাংলাদেশে পতিতালয়ের বৈধতা আছে !
হ্যাঁ, ঠিকই শুনছেন। বাংলাদেশে ১৪টি বৈধ পতিতালয় আছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক বাংলাদেশের প্রথমসারির কয়েকটি পতিতালয়ের পরিচিতি ও তার অবস্থান…
দৌলতদিয়া পতিতালয় : রাজবাড়ি জেলার দৌলতদিয়া পতিতালয় বাংলাদেশের তথা বিশ্বের সবচেয়ে বড় পতিতালয়গুলোর একটি। দৌলতদিয়ায় ‘মুক্তি মহিলা সমিতি’ নামে পতিতাদের একটি রেজিষ্টার্ড সংগঠন রয়েছে। এই সংগঠনের রিপোর্ট অনুযায়ী বর্তমানে এই পতিতালয়ে পতিতার সংখ্যা প্রায় চার হাজার। এখানে প্রায় তিনশ থেকে সাড়ে তিনশ সর্দারনী রয়েছে। এই সব সর্দারনীর আন্ডারে সর্বনিম্ন ৫ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ জন করে পতিতা কাজ করেন।
এইসব সর্দারনী বা বাড়িওয়ালীর প্রতিদিনের সর্বনিন্ম আয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। এছাড়াও অবস্থাশালী বাড়িওয়ালীদের আয় দিনে ২ থেকে ৩ লক্ষ টাকা।
কান্দাপাড়া পতিতালয় : টাঙ্গাইলের কান্দাপাড়া পতিতালয় বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর এবং সবচেয়ে পুরনো পতিতালয়। স্থানীয় লোকজনের কাছে পতিতালয়টি ‘বেবীস্ট্যান্ড’ নামেই পরিচিত। প্রায় দুই শতক আগে প্রতিষ্ঠিত এই পতিতালয়টি ২০১৪ সালে ভেঙে দেয়া হয়। কিন্তু পরবর্তীতে এনজিও কর্মীরা এটি আবার তৈরি করে দেন। তাদের মতে, অনেক মেয়েরা এখানেই জন্মেছে। তাদের জীবন কেটেছে এখানে। এখন এই পতিতালয় ভেঙ্গে দিলে তাদের আর কোনো যাওয়ার জায়গা থাকবে না। এটিই তাদের একমাত্র আশ্রয়।
বর্তমানে কান্দাপাড়া পতিতালয়টি একটি দেয়ালে ঘেরা, এর ভেতরেই রয়েছে সরু সরু গলি, টিনের ঘর, ছোট ছোট মুদির দোকান, চায়ের দোকান।
টানবাজার পতিতালয় : একসময় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পতিতালয়টি ছিলো নারায়নগঞ্জের টানবাজারে। ২৫ বছর আগে এই পতিতালয়টি উচ্ছেদ হয়েছে। ১৯৯৯ সালের দিকে এই পতিতালয়টি উচ্ছেদ করা হয়। পতিতালয়টির অবস্থান ছিলো টানবাজার পার্কের পাশে কুটিপাড়ায়। টানবাজারের প্রবেশ পথ দুইটি। একটি আশা ও মাশার সিনেমা হল ঘেঁষে নোয়াখালী বস্ত্রালয়ের পাশ দিয়ে। এখানে কাজ করত প্রায় চার হাজারের উর্ধ্বে পতিতা।
গাঙ্গিনাপাড় পতিতালয় : ময়মনসিংহ রেলস্টেশন থেকে মাত্র ২ পা দূরে। উপরে বিশাল সাইনবোর্ড এ লেখা আসুন, এইডস থেকে বাঁচুন। নাজমা বোর্ডিং নামে একটা পতিতালয়। সরকার অনুমোদিত পতিতালয়গুলোর একটি গাঙ্গিনাপাড়। এখানে আনুমানিক ২০-২৫ জন সর্দারনীর অধীনে ৪০০ থেক ৫০০ জন ছুকরি পতিতাবৃত্তির কাজে নিয়োজিত রয়েছে।
রথখোলা পতিতালয় : ফরিদপুর জেলা সদরে দুটি পতিতালয় রয়েছে।একটি শহরের রথখোলা আবাসিক এলাকায় অন্যটি সদর উপজেলার ডিক্রিরচর ইউনিয়নের সিএন্ডবি ঘাট এলাকায়। দুটি পতিতালয়ে প্রায় ৪ হাজারের অধিক পতিতা রয়েছে।
সন্ধ্যাবাজার পতিতালয় : সিলেটের ধোপাদিঘীর পাড় এলাকার সন্ধ্যাবাজার নামক স্থান, যা স্থানীয়ভাবে পৌরবিপনী নামে পরিচিত। এখানেই একটি আবাসিক হোটেলে অবস্থিত আছে মিনি পতিতালয়। নিচে মসজিদ, উপরে পতিতালয় হবার কারণে জায়গাটি বিশেষভাবে আলোচিত। এই কারণেই পতিতালয়টি নজরে আসার পর একবার উচ্ছেদও করে দেয়া হয়েছিলো। পরবর্তীতে এরা ওই জায়গাটির আশেপাশেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায়।
এ তো বললাম শুধুমাত্র রেজিষ্টার্ড পতিতালয়গুলোর কথা। এছাড়াও দেশে এরকম প্রায় হাজারখানেক পতিতালয় আছে। যা আপনার আমার আমাদের বাড়ির আশেপাশেই। কিন্ত নজর এড়িয়ে যায় আমাদের। ওইযে বললাম এটা একটা অন্ধকার জগত। তাই হয়ত আমাদের চোখে পরেনা। রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় যে আবাসিক হোটেলটি আপনি দেখছেন, সেখানেও পতিতার সন্ধান মেলে ৩০০ টাকার বিনিময়ে। এমনকি খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন আপনার বিল্ডিংয়ের পাঁচতলার লিটন ভাইও কোনো মেয়ের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে তাকে দিয়ে নিজের ফ্লাটে গোপনে চালিয়ে যাচ্ছেন রমরমা দেহব্যবসা ! এমনটাই এ দেশে হচ্ছে…
আরো পড়ুনঃ