হুমায়ূন আহমেদ, বিংশ শতাব্দীর বাঙালি জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম। তাঁকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী শ্রেষ্ঠ লেখক হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার। বলা হয় আধুনিক বাংলা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের তিনি পথিকৃৎ। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসাবেও তিনি বেশ সমাদৃত। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা তিন শতাধিক। বাংলা কথাসাহিত্যে তিনি সংলাপপ্রধান নতুন শৈলীর জনক। তাঁর বেশকিছু গ্রন্থ পৃথিবীর নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বেশকিছু গ্রন্থ স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত। তার সৃষ্ট হিমু এবং মিসির আলি ও শুভ্র চরিত্রগুলি বাংলাদেশের যুবশ্রেণিকে গভীরভাবে উদ্বেলিত করেছে। বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীও তাঁর সৃষ্টিকর্মের অন্তর্গত। ধরা হয় বাংলাদেশে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর জনপ্রিয়তা তিনি শুরু করেন। তাঁর রচিত প্রথম সায়েন্স ফিকশন “তোমাদের জন্য ভালোবাসা”। তাঁর নির্মিত খুব পছন্দ করতেন। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হচ্ছে, তিনি তার প্রথম সৃষ্টি কর্ম “নন্দিত নরকে” দিয়েই পাঠক সমাজের হৃদয়ে অবস্থান গ্রহণ করতে সম্মত হয়! বাস্তব জীবনে তিনি ছিলেন ভণিতাবিহীন অত্যন্ত সহজ-সাধারণ ও প্রকৃতিপ্রেমী !
যদিও সন্ধ্যা – রিভিউ
উপন্যাসের প্রধান চরিত্র শওকত। তিনি একজন চিত্রশিল্পী। ছবি আঁকেন। তারই আঁকা একটা ছবির বর্ননা দিয়ে কাহিনী শুরু।
ছবিটা ড্রয়িং রুমে সাজানো। ছবিটা মুগ্ধ হয়ে দেখছে শওকত। তারই আঁকা ছবি। এই ছবি আঁকার মাধ্যমেই রেবেকার সাথে পরিচয় হয় শওকতের। এর সূত্র ধরে রেবেকা আর শওকতের ভালবাসা, আর ভালবাসা থেকে হয় বিয়ে !
শওকতের এক্সিবিশন চলছে। রেবেকা যায় এক্সিবিশন দেখতে। সেখানে দেখে একটি জঙ্গলে একটি তরুণীর ছবি। গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে আলো এসে পড়ছে সেই মেয়েটির মুখে। রহস্যের বিষয় হচ্ছে, সেই ছবির মেয়েটার সাথে রেবেকার চেহারা দারুন মিল ! এতেই রেবেকা ছুটে এই ছবির শিল্পীর খোঁজে ! পরে এই রহস্যময় ছবিকে কেন্দ্র করেই তাদের ডিভোর্স হয়ে যায়। ৫ বছরের সন্তান ইমনকে নিয়ে রেবেকা আলাদা হয়ে যায়।
পরে আবার রেবেকা বিয়ে করে আমেরিকান এক ভদ্রলোক মিস্টার অ্যান্ডারসনকে। সৎ বাবা অ্যান্ডারসন ও ইমনকে অনেক ভালোবাসেন। পরে গল্প এই ইমনকে নিয়েই এগিয়ে যায়….
স্কুলে ইমনকে ডিস্টার্বড চাইল্ড হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সাইকিয়াট্রিস্ট বলেছেন ইমনকে কথা না বলা রোগ থেকে বের করে আনতে হবে। সাইকিয়াট্রিস্টের পরামর্শে তাকে দেশে আনা হয়েছে, এইবারের জন্মদিন তার বাবার সাথে পালন করতে হবে। সে ৫ দিন তার বাবার সাথে থাকবে বলে খুব আগ্রহ নিয়ে এসেছে। অত্যধিক বুদ্ধিমান সুদর্শন ছেলে ইমন। তার বুদ্ধিমান বাবার সরল ব্যবহার তার ভালো লাগে। সে তার বাবার কাছ থেকে চা বানানো শিখে। বাবাকে মোমের মুক্তো আর চাইনিজ লন্ঠন বানিয়ে দেয়। এভাবে সে তার বাবার প্রতি আরো দূর্বল হয়ে যায়। তার বাবা মাকে এক সাথে না পাওয়াতে আরো বেশি কষ্ট পায়। কষ্ট পেয়ে সে তার বাবার বাড়ি থেকে চলে আসে।
…গল্পের আর একটি চরিত্র আনিকা !
বাবার বাসাতেই তার পরিচয় হয় আনিকার সাথে। সে শওকতের বন্ধু মঞ্জুর সৎ বোন। আনিকা ছোটবেলা থেকেই ভালবাসে শওকতকে। আনিকাকেও বেশ ভাল লাগে ইমনের। ইমন অধীর আগ্রহে থাকে তার বাবার ছবি আঁকা দেখতে ! কিন্তুু তার বাবা হঠাৎ করেই ছবি আঁকা ভুলে যায় ! এতে ইমন খুব কষ্ট পায়।
গল্পের শেষে ইমন আসে আনিকার বিয়েতে। আনিকা শওকতকে অনুরোধ করে ইমনকে কোলে করে তার একটা ছবি আঁকতে। ইমন আগ্রহ নিয়ে বাবার দিকে চেয়ে আছে বাবার ছবি আঁকা দেখতে !
তো গল্পের মাঝামাঝি সময়ে যে প্রশ্নগুলো রয়ে যায়, তা হচ্ছে –
- আনিকার সাথে কার বিয়ে হয়?
- ইমন কি শেষ পর্যন্ত তার বাবার ছবি আঁকা দেখে যেতে পারে?
এর উত্তর জানতে হলে পড়তে হবে হুমায়ূন আহমেদের যদিও সন্ধ্যা !
যদিও সন্ধ্যা : পাঠক প্রতিক্রিয়া
আমার মনে হয়েছে গল্পে লেখক ইমন চরিত্রটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে যায়, অন্য চরিত্র গুলোকে একটু অবহেলা করেছেন। গল্পের প্রধান চরিত্র শওকত হলেও ইমন চরিত্রটি একাই আমাকে আকৃষ্ট করেছে ! ব্রোকেন ফ্যামিলির ছেলে ইমনের বাবা মা দুজনকে একসাথে না পাওয়ার কষ্ট উঠে এসেছে এই গল্পে ! ভাল লেগেছে মায়াবতী আনিকা চরিত্রটি ও ইমনের সৎ বাবা মি. অ্যান্ডারসনকে !
হুমায়ূন আহমেদ মানে বরাবরই মুগ্ধতা ! আর প্রতিবারের মত এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি একটুও !
হ্যাপি রিডিং !