মাত্রাতিরিক্ত ভায়োলেন্সে ভরপুর যত নিষিদ্ধ সিনেমা

বিতর্কিত সিনেমাগুলো ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিরই একটা অংশ। তবে কিছু সিনেমা এতটাই বিদঘুটে কন্টেন্ট আর গ্রাফিক্স ব্যবহার করে যে, সেগুলো বিতর্কিত হওয়ার পূর্বেই নিষিদ্ধ হয়ে যায়। সাধারণত ভৌতিক, ক্রাইম থ্রিলার কিংবা রহস্যধর্মী কিছু সিনেমায় অতিরিক্ত ভায়োলেন্স, নগ্নতা কিংবা কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বকে অপমানসূচক কিছু প্রকাশ পেলে সেন্সর বোর্ড বাতিল করে দেয় এসব মুভির প্রকাশ যোগ্যতা।

বিখ্যাত কয়েকটি নিষিদ্ধ সিনেমা

আজ এমন কিছু মুভির নাম বলব, যেগুলো দেখলে আপনার রাতের ঘুম নস্যাৎ করে এনে দিবে পরজগতের ভয়াবহ অনুভূতি। রক্ত হিম করে দেয়া এসব মুভি দেখে দুঃস্বপ্ন আসতে বাধ্য। আপনি যদি দুর্বল চিত্তের অধিকারী হন, তাহলে এসব সিনেমা থেকে কয়েক ক্রোশ দূরে থাকাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

A Clockwork Orange

১৯৭১ সালে মুক্তি পাওয়া এই সিনেমাটি নিষিদ্ধ হয়ে যায় দুই মাস পরেই। ভয়াবহ ক্রাইম সিনে ভরপুর ছিল এই মুভি। তারকাটা গলায় পেঁচিয়ে হত্যার একটি দৃশ্য আলোচিত হয় অনেক। সমসাময়িক সময়ে বেশ কিছু হত্যা ঘটনার সাথে মিল পাওয়া যায় এই দৃশ্যের। ধারনা করা হয়, ক্লকওয়ার্ক অরেঞ্জ সিনেমার ঐ দৃশ্য থেকেই অনুপ্রাণিত হয়েছিল ঐসব হত্যাকারীরা।

The Texas Chainsaw Massacre

আমেরিকান হরর মুভি ”দ্য টেক্সাস চেইনশ মেসাকর” এর পরিচালনায় ছিলেন বিখ্যাত পরিচালক টব হুপার। সিনেমাটি মুক্তি পায় ১৯৭৪ সালে। এই নিষিদ্ধ মুভিটি অনুপ্রাণিত হয়েছিল আমেরিকার বিখ্যাত এক সিরিয়াল কিলার এড গেইনের জীবনী থেকে।

মুভিটির কাহিনি ছিল পাঁচ জন বন্ধুকে এক সাইকোপ্যাথ চূড়ান্ত নির্মমভাবে নির্যাতন করে করাত দিয়ে হাত পা কেটে মেরে ফেলে। ভয়াবহ এইসব সিনের জন্য মুভিটি এক বছরের মাথায় নিষিদ্ধ হয়ে যায়।

The Green Inferno

এই মুভিতে দেখা যায় একদল সমাজসেবী ছাত্র-ছাত্রী আমাজন জঙ্গলে যায় সেখানকার বন্য প্রাণীদের উপর একটা সার্ভে করতে। কিন্তু সেখানে একটা দ্বীপে একদল আদিবাসীদের হাতে আটকা পরে তারা। অতিরিক্ত নগ্নতা আর ভয়াবহ ভায়োলেন্সের কারনে নিষিদ্ধ হয় এই মুভিটি।

The Human Centipede

এই সিনেমার পোস্টার দেখলেই বোঝা যায় এই মুভির ভয়াবহতা। এই মুভিটি একজন পাগল বিজ্ঞানীকে নিয়ে। যে একদল মানুষকে বন্দি করে তার ভয়ঙ্কর সব এক্সপেরিমেন্টের জন্য।

এসব মানব গিনিপিগ গুলো মারা যেতে থাকে একে একে। গলে পচে নির্মম ভাবে। সুস্থ মানুষের পক্ষে এত ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখা সত্যিই অসম্ভব। মুক্তি পাওয়ার এক সপ্তাহের মাথায় নিষিদ্ধ হয় ‘দ্য হিউম্যান সেন্টিপিড’।

Scarface

১৯৮৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘স্কারফেইস’ মূলত ১৯৩২ সালে একই নামে মুক্তি পাওয়া একটি মুভির রিমেক। আল পাচিনো পরিচালিত এই মুভিটি এক পাগলাটে ব্যাক্তির জীবন নিয়ে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যর্থ হতে হতে সবকিছু থেকে হাল ছেড়ে দেয়। একসময় সে সিদ্ধান্ত নেয় ভুল পথে যাওয়ার।

স্কারফেস

হত্যা, লুন্ঠন, অপহরন সব এসব কিছুই হয়ে উঠে তার জীবন। অসহনীয় পর্যায়ের ভায়োলেন্সের কারণে ১৯৮৫ সালে নিষিদ্ধ হয় এই মুভিটি। যদিও নিষিদ্ধ সিনেমা হিসেবে কমই পরিচিত এটি। জেনে অবাক হবেন, এই মুভিটির আদতেই গ্র‍ান্ড থেফট অটো / জিটিএ ভাইস সিটি গেমসটি নির্মাণ করা হয়।

I Spit on your Grave

এই মুভিটি দেখার পরে আপনি এক সপ্তাহ মাথা থেকে এর সিন গুলো মাথা থেকে দূরে সরাতে পারবেন না। এই মুভির কাহিনি এক মেয়ে কে নিয়ে। যাকে চারজন দুষ্কৃতী গন ধর্ষণ করে এক নেক্রপলিসে ফেলে চলে যায় মরার জন্য। কিন্তু কিভাবে যেন বেঁচে যায় মেয়েটি। কিন্তু ভুলতে পারে না কিছু। শুরু হয় প্রতিশোধের পালা। একে একে সবাইকে খুঁজে বের করে সবাইকে। যতটা পাশবিকতা তারা করেছিল, তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি কষ্ট দিয়ে হত্যা করে তাদের।

The last temptation of Christ

স্পষ্ট সত্যতা দেখানো, ভায়োলেন্স আনা কিংবা ভৌতিকতা প্রদর্শনের জন্য নয়, এই সিনেমা নিষিদ্ধ হয় যিশুখ্রিস্টের জীবনীর উপর সিনেমাটি বানানোর জন্য। ক্যাথলিক যাজক সম্প্রদায়ের আন্দোলনের মুখে এটি সম্প্রচার নিষিদ্ধ করে আমেরিকা সরকার।

Hostel

২০০৫ সালে মুক্তি পায় এই হরর থ্রিলার মুভিটি। তিন বন্ধু এক হোস্টেলে অনুভব করে ভয়াবহ কিছুর অস্তিত্ব। ঘটতে থাকে একের পর এক কুৎসিত ঘটনা, যা দেখে ভয় না পাওয়া আসলেই কঠিন। এটি বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত একটি নিষিদ্ধ সিনেমা !

The last house on the left

দুইজন কিশোরীকে অপহরন করে তাদের নির্মমভাবে হত্যা করে এক সাইকোপ্যাথ। ভয়াবয় রক্তাক্ত দৃশ্য আর নগ্নতার কারনে ২০০৭ সালে নিষিদ্ধ হয় এই মুভিটি।

Battle Royal

২০০৯ সালে মুক্তি পায় এই জাপানিজ সিনেমা। কিছু কিছু সিনেমা আপনার জাগরণকে ভয়াবহ করার সাথে রাতের দুঃস্বপ্নও দেখাবে নিঃসন্দেহে। ব্যাটেল রয়েল এমনি এক ভয়ংকর নিষিদ্ধ সিনেমা ! প্রচুর পরিমানে হত্যা, ভায়োলেন্স আর বিদঘুটে দৃশ্যের কারনে মুক্তি পাওয়ার এক বছরের মাথায় এটি নিষিদ্ধ করে জাপানিজ সেন্সর বোর্ড।

Brokeback Mountain

একেবারে সুন্দর, নির্মল আর ভালোবাসাময় রোমান্টিকতায় পূর্ণ এই মুভিটি অধিকাংশ ইসলামিক রাষ্ট্রে নিষিদ্ধ হয়ে আছে সমকামিতাকে সমর্থন করে বলে। গোল্ডেন গ্লোব এবং মিডিয়া সম্রাজ্যের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার একাডেমী অ্যাওয়ার্ড বা অস্কার পুরস্কার পেয়েছে এই সিনেমাটি। দুইজন ছেলে বন্ধুর ভালোবাসা নিয়ে তৈরি এই হলিউড মুভি।

A Siberian Horror Film

আর্থিক কষ্টে যুঝতে থাকা এক পর্ণস্টার প্রস্তাব পায় একটি ‘আর্ট ফিল্ম’ এ অভিনয় করার। কিন্তু সে জানত না, এই মুভিতে অভিনয় করতে গিয়ে তাকে বানিয়ে দেয়া হয় এক নেক্রফিলিয়াক (মৃতদেহের সাথে যৌনাচার করায় আসক্ত) ও পেডোফিলিয়াক( শিশু যৌন শোষণকারী)। অভিনয়ের ছলে চলে ভয়াবহ ব্যবসা। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে একসময় মৃত্যু হয় তার।

Cannibal Holocaust

এই ইটালিয়ান মুভিটি মুক্তি পায় ১৯৮৪ সালে। এটি একটি বিখ্যাত নিষিদ্ধ সিনেমা ! এক প্রফেসর আমাজন জঙ্গলে তার দলবল সহ হারিয়ে যায়। আর দেখতে থাকে অদ্ভুত সব ঘটনা। মুক্তির পর পর প্রায় ১ মিলিয়ন ডলার আয় আসে এই মুভিটি থেকে। অতিরিক্ত ভায়োলেন্স দেখানোর অভিযোগে নিষিদ্ধ হয় এই মুভি।

সিনেমা বানানোর মূল উদ্দেশ্য বিনোদনকে পুজি করে ব্যাবসা করা। তবে রুচিভেদে এসব বিনোদন ছাড়িয়ে যায় ভায়োলেন্সের সহনীয় সীমা। সীমার বাইরে থাকা এসব বিদঘুটে সিনেমার কিন্তু দর্শকের অভাব হয় না। গাঁটের টাকা খরচ করে এসব সিনেমা দেখে শিহরন নেয়ার লোকের সঙ্খ্যা নেহায়েত কম না। ভয় পাওয়াও এক ধরনের বিনোদন। যার জন্য এখনও মানুষ নতুন কোন ভূতের সিনেমা বের হলে দলবল নিয়ে যায় সিনেমা হলে টাকা খরচ করে ভয় পেতে।