প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি আমাদের এই বাংলাদেশ। সৃষ্টিকর্তা যেনো খুব নিপুনভাবেই তৈরি করেছেন এদেশের প্রত্যেকটি উপকরণ। চিরযৌবন এ দেশটি পর্যটকদেরকে আকর্ষিত করে রাখে সবসময়। মনকে স্বপ্নের মত বিভর করে রাখা সৌন্দর্যপূর্ণ এই বাংলাদেশের ১০টি সেরা ও আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র সম্পর্কে চলুন কিছু জেনে নেয়া যাক…
১. কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত : দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরের কুল ঘেঁষে নিজের শরীর মেলে আগলে থাকা সৌন্দর্যের পটভূমি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সমুদ্র সৈকত এই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ! বাংলাদেশের পর্যটনকেন্দ্রের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু কক্সবাজার। সমুদ্র, সামদ্রিক মাছ আর সমুদ্রের অজস্র রত্নের সম্ভার নিয়ে কক্সবাজার আপনার মনকে জয় করবেই।
২. সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপ : বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ-পূর্ব অংশে সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপ অবস্থিত। এটি কক্সবাজার সমুদ্র উপকুল থেকে ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং মায়ানমার উপকুল থেকে ৮ কিলোমিটার পূর্বে নাফ নদীর মোহনায় অবস্থিত বাংলাদেশের সীমানা হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে। বাংলাদেশের একমাত্র কোরাল দ্বীপ বাংলাদেশের মুল ভূখণ্ড থেকে সম্পূর্ণ পৃথক। দ্বীপে অনেক নারিকেল গাছ পাওয়া যায় বলে এটাকে নারিকেল জিঞ্জিরা বলা হয়।
৩. কুয়াকাটা : বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত কুয়াকাটা পর্যটকদের কাছে সাগর কন্যা নামে পরিচিত। ১৮ কিলোমিটারের কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশের পর্যটনের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। কুয়াকাটার বিশেষত্ব হচ্ছে এখান থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দুইটাই দেখা যায়। আছে মিশ্রীপাড়া বৌদ্ধ মন্দির ! যেখানে রয়েছে উপমহাদেশের সবচেয়ে উঁচু বৌদ্ধ মূর্তি। আরো আছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মৎস্য বিপণন কেন্দ্র আলিপুর বন্দর !
৪. সুন্দরবন : বাংলাদেশের একেবারে দক্ষিণে অবস্থিত নোনা পানিতে বেড়ে ওঠা ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন। জোয়ার-ভাটার মধ্যে বেঁচে থাকার জন্য গাছগুলো এক বিশেষ শ্বাসমূল তৈরি করে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট এই সুন্দরবন। ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে অবস্থিত এ বনেই একমাত্র রয়েল বেঙ্গল টাইগারের দেখা পাওয়া যায়। এছাড়াও এখানকার হরিণ, লবনাক্ত পানির বিরাট আকারের কুমির বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত।
৫. সাজেক ভ্যালি : বাংলাদেশের রাঙ্গামাটি জেলার সাজেক ইউনিয়ন এর আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র সাজেক ভ্যালি। রাঙ্গামাটি জেলার ছাদ নামে পরিচিত সাজেক ভ্যালি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৮০০ ফুট উচুতে অবস্থিত। আশেপাশের গ্রামগুলোতে বসবাস করা লুসাই, ত্রিপুরা এবং পাংখয়া উপজাতিদের বসবাস সাজেক ভ্যালিকে আরো সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছে। কমলা লেবুর সাথে সাথে কফির চাষও এই সাজেক ভ্যালিতে হয়ে থাকে।
৬. ভাসমান পেয়ারা বাজার : শতবর্ষের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী ভাসমান পেয়ারা বাজার বাংলাদেশের দক্ষিণের জেলা শহর ঝালকাঠি থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে ভিমরুলি গ্রামের কৃত্তিপাশা খালের উপর অবস্থিত। আশেপাশের গ্রামের মানুষের জীবিকার অন্যতম ক্ষেত্র এই হাট। পেয়ারা ও আমড়ার মৌসুমে প্রায় তিন মাস এ হাট সবচেয়ে বেশি জমজমাট থাকে। এছাড়াও সপ্তাহের প্রতিদিনই বসে ভাসমান এই বাজারটি।
৭. নীলগিরি পর্যটনকেন্দ্র : বাংলাদেশের বান্দরবন জেলায় অবস্থিত পাহাড়ে ঢাকা নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্র ! এটি সব সময় মেঘে ঢাকা থাকে। পর্যটকরা এখান থেকে খুব সহজেই মেঘ ছুঁতে পারবেন। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২,২০০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্র একাবিংশ শতাব্দীতে এসে আবিষ্কৃত হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্রে বেশ কিছু রিসোর্টও রয়েছে।
৮. সোনারগাঁও : মুসলমান শক্তির উদ্ভবের পর থেকে ১৬১০ সালের আগ পর্যন্ত ঢাকা শহরের নামকরণের আগে সোনারগাঁও ছিলো বঙ্গ অঞ্চলের শাসন কাজ চালানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ধারনা করা হয়, প্রাচীন সুবর্ণগ্রাম থেকে পড়ে সোনারগাঁও নামের উৎপত্তি। শাসন কাজ পরিচালনার জন্য মুসলমান শাসকরা এখানে অনেক স্থাপনা নির্মাণ করেন। এগুলার মধ্যে দুলালপুরের নীলকুঠি, আমিনপুর মঠ, খাসনগর দীঘি, গোয়ালদি শাহী মসজিদ, দামোদরদি মঠ, পানাম নগরের আবাসিক ভবন, বড় সরদার বাড়ি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
৯. ঢাকেশ্বরী মন্দির : ঢাকার ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা নিদর্শনের অন্যতম ঢাকেশ্বরী মন্দির। কথিত আছে রাজা বল্লাল সেন বুড়িগঙ্গা নদীর তীরের জঙ্গলে একটা দুর্গা প্রতিমা পান আর ওখানেই ঢাকেশ্বরী মন্দির নির্মাণ করেন। ঢাকেশ্বরী মন্দিরের নাম থেকেই আজকের ঢাকা নামের উৎপত্তি। আবার অনেকের মতে, এর নামকরণ করা হয়েছে “ঢাকার ঈশ্বরী” অর্থাৎ ঢাকার রক্ষাকর্ত্রী দেবী থেকে। বহু বছরের পুরাতন এই মন্দিরটি বাংলাদেশের পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ।
১০. ষাট গম্বুজ মসজিদ : খান জাহান আলী নির্মিত বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমের জেলা সহর বাগেরহাট শহরের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থাপত্তের নিদর্শন ষাট গম্বুজ মসজিদ। মসজিদের গায়ে কোন রূপ শিলালিপি না থাকলেও এর গঠন আর নির্মাণ কৌশলী দেখে সহজেই ধারনা করা যায় যে, এটি খান সাহেবের তৈরি একটি অনন্য স্থাপনার অন্যতম। ধারণা করা হয়, এ মসজিদটি ১৮শ শতকের দিকে নির্মাণ করা হয়। ষাট গম্বুজ নাম হলেও এটাতে মোট ৭৭টি গম্বুজ আছে। ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের সম্মানে ভূষিত করে।
পরিশেষে, প্রাচীন স্থাপনা আর সাহিত্যকর্মে ভরপুর আমাদের এই বাংলাদেশের এখানে ওখানে ছড়িয়ে আছে নানা পর্যটন কেন্দ্র। যার রূপ ও সৌন্দর্য পর্যটকদের কাছে টেনে নিয়ে আসে বারবার। এদেশের ভ্রমন পিপাসু লোকদের অনেকেই হয়ত এগুলার কদর করেন না। কদর করেন না নিজ সৌন্দর্যের। আমাদের একটু অসতর্কতার জন্যই বাংলাদেশ পিছিয়ে পরছে বহিবিশ্ব থেকে !
আসুন দেশকে প্রমোট করি। দেশের কথা বলি। দেশের সম্পদগুলোর পরিচর্যা করি। দেশটা তো আমাদেরই, তাই না? আমরাই তো বাংলাদেশ…