ফ্ল্যাইং ডাচম্যান (The Flying Dutchman) এমন একটি ভুতুড়ে জাহাজ, যা আজ পর্যন্ত কোনো বন্দরে নোঙ্গর ফেলেনি ! এই জাহাজটিকে বলা হয়ে থাকে সমুদ্রের অভিশাপ। ১৭ শতক থেকে এই জাহাজের কথা প্রচলিত হয়ে আসছে। সেসময় ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রচণ্ড দাপট সারা বিশ্বজুড়ে। সেই সময়টাতেই এই ভুতুড়ে জাহাজের আবির্ভাব ঘটে।
প্রচলিত লোককথা অনুযায়ী, এই ভুতুড়ে জাহাজ অন্য একটি বন্দরগামী জাহাজকে মাঝ সমুদ্রে দর্শন দিয়ে একটি ভুতুড়ে আলো দেখায়। এই আলোর মানে হচ্ছে ফ্লাইং ডাচম্যান বন্দরে থাকা মানুষদের একটি বার্তা দিতে চায়। আর সেটা হচ্ছে ‘দুর্ভাগ্য’ বা ‘মৃত্যু সন্নিকটে’ !
ফ্লাইং ডাচম্যান নিয়ে প্রতিটি বন্দরে অনেক লোককথা প্রচলিত আছে, সে সকলের মধ্যে সব থেকে উল্লেখ্য ২টি হচ্ছে –
- জাহাজে যুদ্ধের আহত সৈন্যরা ছিলো, যাদেরকে কোনো বন্দর আশ্রয় দিচ্ছিল না। এবং একসময় তারা মারা যেতে শুরু করে জাহাজের মধ্যেই। তারা অভিশাপ দিতে থাকে বন্দরের লোকদের। শেষ নাবিকটা বেঁচে থাকা পর্যন্ত জাহাজটি ভাসতে থাকে। তিনি মারা গেলেই জাহাজটি বাতাসে মিলিয়ে যায়।
- আরেকটি লোককথা হচ্ছে, জাহাজটির নাবিকেরা প্লেগে আক্রান্ত থাকে। তারা আরব সাগরে এসে আশ্রয় খুঁজে। কিন্তু এখানে কোনো বন্দরে আশ্রয় না পেয়ে তারা অভিশাপ দিয়ে কালো মেঘের সাথে মিলিয়ে যায়।
ফ্লাইং ডাচম্যান জাহাজটি নিয়ে প্রথম মুদ্রিত লেখা লিখেন John MacDonald ১৭৯০ সালে। তিনি তাঁর বর্ননাতে বলেনঃ
“The weather was so stormy that the sailors said they saw the Flying Dutchman. The common story is that this Dutchman came to the Cape in distress of weather and wanted to get into harbour but could not get a pilot to conduct her and was lost and that ever since in very bad weather her vision appears”
ফ্লাইং ডাচম্যান নিয়ে পরবর্তীতে প্রকাশিত হয় Chapter VI of A Voyage to Botany Bay (1795), সেখানে এই ভুতুড়ে জাহাজ নিয়ে বলা হয় যে – “প্রায় নাবিকদের মুখে এই কথা শুনা যেত, অভিশাপ বহনকারী এই জাহাজটিকে তারা দেখেছে। তারা বলেন, Cape of Good Hope শেষবারের ডাচম্যানদের যুদ্ধে তারা এই জাহাজটি দেখে। দূরে সমুদ্রে দাঁড়িয়ে থাকা এই জাহাজ থেকে এক মৃদু সঙ্গীত ভেসে আসতে শোনা যায় এবং দেখলেই মনে হয় যে এখনই ছুটে এসে সব নষ্ট করে দিবে। এরপর এক টুকরো কালো মেঘের মধ্যে এই জাহাজ হারিয়ে যায়” !
John Leyden (1775-1811) তাঁর অপরাধ প্রবণতামূলক এক গবেষণা গ্রন্থে উল্লেখ্য করেনঃ
“It is a common superstition of mariners, that, in the high southern latitudes on the coast of Africa, hurricanes are frequently ushered in by the appearance of a spectre-ship, denominated the Flying Dutchman … The crew of this vessel are supposed to have been guilty of some dreadful crime, in the infancy of navigation; and to have been stricken with pestilence … and are ordained still to traverse the ocean on which they perished, till the period of their penance expire.”
মে ১৮২১ সালে Blackwood’s Edinburgh Magazine তাদের প্রথম পাবলিকেশনে প্রকাশ করে যে, আসলে কি ছিলো এই ফ্লাইং ডাচম্যান ! তাদের ম্যাগাজিনে প্রকাশিত কিছু অংশে বলা আছে –
“সম্ভবত এই জাহাজটি আমাস্টারডামের ছিল। যা প্রায় ৭০ বছর আগে সমুদ্রে যাত্রা করে, এই জাহাজের মাস্টারের নাম ছিল Van der Decken । ধারনা করা হয় সে ছিল পিশাচ উপাসক এবং শয়তানের একান্ত ভক্ত। তার অধিনস্ত কোনো নাবিক তার বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারে না। গল্পটি আসলে এমন যে, কেপ অতিক্রম করার সময় তারা ঝড়ের সম্মুখীন হয়। ঝড় দেখে জাহাজের মাস্টার Van der Decken জাহাজের ডেকে আসেন। এসময় সামনে উপস্থিত একটি জাহাজ তাকে তীরে যেতে বললে সে উত্তর দেয়, “May I be eternally damned if I do, though I should beat about here till the day of judgment.” এবং তখনই নাবিকদের নিয়ে জাহাজটি হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। এখন পর্যন্ত এই বিশ্বাসটাই করা হয় যে, এই জাহাজটি আর কোনদিন কোনো বন্দরে নোঙ্গর ফেলেনি। এবং সমুদ্রে এখনো ভেসে বেড়াচ্ছে, কিন্তু কেউ এই জাহাজকে দেখতে পায় না !
এখনো ফ্লাইং ডাচম্যান নিয়ে প্রচলিত কাহিনীগুলো অনেক নাবিকেরাই বিশ্বাস করেন। এবং সমুদ্রের অভিশাপ হিসাবে তাদেরকে গণ্য করা হয়। আসলে কে ছিলেন সে জাহাজের ক্যাপ্টেন এবং কারা সেই নাবিক, তাদের পরিচয় আজও পাওয়া যায়নি। তবে একঘেঁয়ে জীবনে সত্যের বাইরে যে সকল কথা থাকে, তা না জানাই ভালো…