চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পেছনে প্রায় ৭ একর জায়গায় ওয়ার সিমেট্রির অবস্থান। মনোরম পাহাড়ি পরিবেশ। দেশি-বিদেশি বিরল প্রজাতির বিভিন্ন গাছগাছালিতে ঘেরা এ এলাকা যেনো পাখিদের স্বর্গরাজ্য। প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে পুরো এলাকা।
এখানেই ঘুমিয়ে আছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত ১১টি দেশের দেশপ্রেমিক সেনা ও নৌবাহিনীর ৭৫৫ জন সৈনিক। ব্রিটেন, আফ্রিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, জার্মানি, মিয়ানমার ও নেদ্যারল্যান্ডসের সৈনিকরা এখানে সমাহিত। তাদের সঙ্গে উপমহাদেশের দুইজন অজ্ঞাতনামা সৈনিকও এখানে ঘুমিয়ে আছেন।
কমনওয়েলথ ওয়ার প্রেইভ কমিশন পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলেছে এই চট্টগ্রাম ওয়ার সিমেট্রি ! তারাই এর দেখভাল করেন। ওয়ার সিমেট্রির সাজানো বাগান মুহূর্তেই দর্শনার্থীদের মন ভরিয়ে তোলে। প্রায় ৮ ফুট ইস্পাতের রেলিংঘেরা বেষ্টনীর দক্ষিণ দিকে ফিনলে পাহাড়ের পাশ দিয়েই এর মূল ফটক।
এখান থেকে কোনাকুনি মসৃণ ছিমছাম কয়েকশ গজ পিচঢালা পথ পেরুলেই সমাধি ফটক। এর চারদিকে সবুজ লন। ঘাসের চাদরে ঢাকা সবুজ প্রান্তরের ঠিক মাঝখানে রয়েছে শ্বেতপাথরে নির্মিত ক্রুশাকৃতির স্মৃতিস্তম্ভ। এ স্তম্ভের চারপাশে রয়েছে সৈন্যদের কবর, এর সামনে রয়েছে স্মৃতিফলক। প্রতিটা ফলকে মৃত সেনাদের নাম, বয়স, জাতীয়তা ও রেংক পিতলের প্লেটে খোদাই করা। আছে প্রিয়জনের কাছে পাঠানো সেনাদের শেষ চিঠির দু’একটি পঙক্তি। প্রতিটি স্মৃতিসৌধের মাঝে রয়েছে একটি করে ফুর বা পাতাবাহার গাছ।
ফেরার পথে মূল ফটকে সংরক্ষিত একটি স্বচ্ছ কাচের বাক্সে বৃহৎ এক রেজিস্টার খাতায় লেখা রয়েছে সাড়ে ৬ হাজার ব্রিটিশ নাবিকের নাম ও পদবি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যারা দেশের সেবায় আত্মাহুতি দিয়েছেন সমুদ্রের অতলে। অথৈ পানি ছাড়া যাদের আর কোনো সমাধিক্ষেত্র নেই।
প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বেলা ১২টা এবং ২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এ সিমেট্রি দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। সময় কাটানোতে কর্তৃপক্ষের কোনো বিধিনিষেধ নেই।
এখানে ঘুমিয়ে থাকা শহীদরা অমর হয়ে আছেন দেশপ্রেমের মহান এক আদর্শ হয়ে। তাদের ত্যাগ জাতি চিরকাল স্মরণ করবে।