‘রাজনীতি’ বহুল আলোচিত, সমালোচিত এবং পরিচিত শব্দ। দেশের সাধারণ মানুষের মনে একটা শঙ্কা সর্বক্ষণই থেকে যায়, প্রতিহিংসার রাজনীতিতে অনুপ্রবেশ ভবিষ্যৎকাল কতটা নিরাপদ ?
প্রতিহিংসার রাজনীতি কখনোই নিরাপদ নয় বিষয়টা অবগত হলেও নেতা হওয়ার স্বপ্ন বা উপরিপাওনার লোভ, চেয়ারম্যান-মেম্বারদের অনুরোধ, সুযোগ সুবিধায় অগ্রাধিকার ইত্যাদি ইত্যাদি কারনে হুমকির মুখেও রাজনীতি করতে হচ্ছে বা করছে।
কেনইবা রাজনীতি করবেন না? একজন শুশিল নাগরিক ও দেশপ্রেমী হিসেবে রাজনীতি করা আমাদের কর্তব্য। ইসলাম ধর্মেও এটিকে ফরয হিসেবে ধরা হয়, তবে শর্ত প্রযোজ্য। এছাড়াও সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় সকল ক্ষমতার অধিকারী জনগণ। অতএব রাজনীতি করা দোষের কিছু নয় বরং কর্তব্য পালন। তবে রাজনৈতিক পরিবেশ সুষ্ঠু বজায় রাখা আপনার আমার সকলের দায়িত্ব ও কর্তব্য।
শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতি আমাদের জন্য অভিশাপ না আশির্বাদ? এমন প্রশ্নে একটিকে বেঁছে নেওয়ার কোন সুযোগ নেই, উভয়ই হতে পারে। যদি বলি আজকের ছাত্র বা ছাত্রী আগামি দিনের জাতীর কর্ণধার। অথবা পুরনোদের অবসরে একে একে গুরুত্বপূর্ণ স্থান বা পদগুলো নতুন মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীগণ যেন পায় তার জন্য রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া আবশ্যক। তবে সেটা হতে হবে নিয়মানুগ। রাজনৈতিক দলগুলো যদি পড়াশোনাকে সর্বাগ্রে অগ্রাধিকার দিয়ে কর্মসূচী বা অন্যান্য কার্য সম্পাদন করেন তবেই শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতি আমাদের আশির্বাদ হবে, নকল করে সেমিস্টার পার হতে হবে না। এছাড়াও ক্ষমতার অপব্যবহারে কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা করতে হবে।
পরিতাপের বিষয় হচ্ছে স্বাধীনতা যুদ্ধ পরবর্তী আমাদের ছাত্র রাজনীতি এক নব দিক উন্মোচিত হয়েছে যেটা মোটেও সুখকর নয়। প্রথম দিকে দেশের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে রাজনীতির প্রচলন থাকলেও বর্তমানে স্কুল পর্যায়ও চলে এসেছে আর সেটা ভুলভাবে। যেমন স্থানীয় এক হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের শরণাপন্ন হলে তিনি জানান ক্লাস ফাঁকির অপরাধে এক স্কুল ছাত্রের ফোন বাজেয়াপ্ত করে তার গার্ডিয়ান নিয়ে আসতে বলা হয়। কিন্তু সে স্থানীয় ক্ষমতাসীন কোন নেতার নিকট উপস্থাপন করেন যে “তার মিটিংয়ে যাওয়ায় স্যার তার ফোন কেড়ে নেয়”। তারপর অনেক জল ঘোলা করার পর বিষয়টা সমাধান হয়। তবে ঐ শিক্ষক পরবর্তীতে ঐ ছাত্রকে শাসন করতে তিনবার ভাবতে হবে; অর্থাৎ গোড়ায় গলদ।
জনৈক স্থানীয় ছোট ভাইয়ের নিকট জানা যায় তাদের সরকারি স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী অবধি প্রত্যেক ক্লাসে কোন রাজনৈতিক দলের সভাপতি নির্বাচন করা হয়েছে। কোন অপরাধে ছাত্র বা ছাত্রীকে টিসি দিতে উক্ত সভাপতির স্বাক্ষর লাগবে। এসকল কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রী এখনো নিজেদের ভালোমন্দ বিচার করতে শেখেনি। সেখানে ক্ষমতার অপব্যবহার করার সুযোগ কেন কাজে লাগাবে না?। এরাই একটা সময় ক্লাস ফাঁকি দিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে মেয়েদের ইভটিজিং, গাড়ি ভাঙচুর সহ নানা অন্যায় করতে দেখা যায় তাও আবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাকের ডগায়। এদিকে শিক্ষকগন বিচার করতে পারছেন না তাদের পেছনে থাকা রাঘববোয়ালদের ভয়ে। আর রাঘববোয়ালগন সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছেন মিটিং মিছিলে মাথা দেখানোর স্বার্থে।
এভাবে যদি চলতে থাকে একটা সময় না বাঁচবে শিক্ষকসম্প্রদায়ের মান না থাকবে মেধাবীদের কারিগর। অর্থাৎ জাতির আগামির ভবিষ্যৎ প্রশ্নাতীত !