বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী, দূর্ধষ, নিন্দিত গোয়েন্দা সংস্থা “দ্যা সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউড ফর করডিনেশন” যা কিনা মোসাদ নামেই সবচেয়ে বেশি পরিচিত। বিশ্বের অনেক বড় বড় হামলার পরিকল্পনার পিছনে “মোসাদ” জড়িত আছে। ইসরাইলের বাইরে তথ্য সংগ্রহ করা, ইসরাইলের জন্য হুমকি এমন দেশের অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করা অন্যদেশে অভিবাসী ইহুদিদের ইসরাইলে ফিরিয়ে আনা শত্রুভাবাপন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের হত্যা সহ নানা রকমের বিতর্কীত কাজ করে থাকেন এই ইসরাইলী গোয়েন্দা সংস্থা।
যেভাবে মোসাদ এর উত্থান
১৯৪৮ সালের আরবলীগ ইসরাইলকে প্রত্যাখান করলে ইউরোপের ইহুদি নিধনের ভয় পেয়ে বসে ইসরাইলীদের। সেই থেকে গঠিত হয় “মোসাদ”। কিন্তু মজার বিষয় হলো ১৯৪৯ সালে জন্ম হলেও ১৯৬৬ সালের আগে কেউ মোসাদের সম্পর্কে জানতই না। ১৯৫৮ সালে ২৮তম কম্যুনিস্ট সম্মেলনে স্ট্যালিনের বিরুদ্ধে দেওয়া ক্রুশ্চেভের বক্তব্যের কপি সিআই এর কাছে দিয়ে প্রথমবারের মত আমেরিকার নজরে আসে।
মোসাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ হামলা
ইরানের পরমানু সংগ্রহের খবরে ইসরাইল বেশ উদ্ভিগ্ন ছিল। বাইরে যতই অস্বীকার করুক, তেহরান যে ভিতরে ভিতরে বড় ধরনের পারমানবিক কার্যক্রম চালাচ্ছে, সেটা জানা ছিলো ইসরাইলের।
২০০৭ সালে ডঃ আরশাদ হোসেনকে হত্যার পর লন্ডনভিত্তিক সংবাদ সংস্থা এটাকে মোসাদের হামলা বলে দাবী করলেও তেহরান সেটা অস্বীকার করে। ইরানে প্রবেশ করে মোসাদের হামনা করার ক্ষমতা নেই বলে দাবী করে ইরান।
২০১০ সালের ২৯শে নভেম্বর উত্তর তেহরানে ডঃ মজিদ শাহরিয়ারের গাড়িতে একজন মোটর সাইকেল আরোহী একটি ডিভাইস স্থাপন করে দেয়। একই সময় দক্ষিণ তেহরানে ডঃফেরদাউস আস্তাসিরের গাড়িতেও আরেক মোটরসাইকেল আরোহী একই ডিভাইস স্থাপন করে। কিছু সময় পরেই গাড়ি দুইটা বিষ্পোরিত হয়। ডঃ মজিদ মারা যান এবং ডঃ ফেরদাউস আহত হন। এই ঘটনার জন্য প্রেসিডেন্ট আহমেদিনেজাদ সরাসরি মোসাদকে দায়ী করে। পরে অবশ্য ইরান স্বীকার করে যে অনেক চেষ্টা করেও ইরানের পরমানু সমৃদ্ধির খুব অল্পই জানতে পেরেছিলো তারা।
মোসাদ এর ব্যর্থতা
১৯৯৩ সালে অসলো চুক্তির মাধ্যমে আইজাক রবিন-ইয়াসির আরাফাত শান্তি চুক্তি হয়। কিন্তু ১৯৯৭ সালে জেরুজালেমে বোমা হামলায় ১৬ জন নিহত এবং ১৬৯ জন আহত হয়। এই ঘটনার পর ইসরায়েল ফিলিস্তিনের একজন শীর্ষ রাজনৈতিক নেতা হত্যার পরিকল্পনা গ্রহন করেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আসে হামাস নেতা খালেদ মাশালের নাম যিনি জর্দানে হামাসের সামরিক প্রধান হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। কানাডিয়ান পাসপোর্টধারী তিনজন মোসাদ সদস্য মাশালকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা মাফিক মাশালের ঘাড়ে নিজেদের তৈরি বিষ প্রয়োগের চেষ্টা চালায়।কিন্তু একজন হামাস সেনার কারনে সফল হতে ব্যর্থ হয়। হাসপাতালে ভর্তি করা হলো তাকে। খালিদের অবস্হা ধীরে ধীরে খারাপ হতে থাকে, ৪৮ ঘন্টার মধ্যে তিনি মারা যাবেন। জর্ডানের বাদশাহ হোসাইন এবার সরাসরি ফোন দেয় নেতানিয়াহুকে। যদি খালিদ মিশাল মারা যায়, তিন মোসাদ স্পাইকে খুন করা হবে, এবং ইসরাইলের সাথে শান্তি চুক্তি বাতিল হবে। এবার মোসাদের সতর্ক হয়ে উঠে। মোসাদের চীফ নিজেই ল্যাবরেটরীতে মডিফাই করা বিষের প্রতিষোধক নিয়ে আম্মানে আসেন। খালিদ মিশাল সুস্হ হয়ে উঠেন। এই ব্যর্থ হামলার ফলাফল এমনই করুন ছিলো যে মোসাদের চীফকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। খালিদ মিশালের উপর এই হামলায় কানাডার গোয়েন্দা সংস্হা (CSIS) ও জড়িত আছে বলে মনে করা হয়।