বাংলা চলচ্চিত্রের মুভমেন্ট অনেক আগে থেকে শুরু হলেও সেটার পূর্ণাঙ্গ রূপ নেয় ১৯৫২ সালে, “কো-অপারেটিভ ফিল্ম মেকারস লিমিটেড” গঠন করা পর থেকে। এই সংগঠনটির নেতৃত্বে ছিলেন শহিদুল আলম,আব্দুল জব্বার,কাজী নুরুজ্জামান, দুদু মিয়া সহ আরো অনেকে। এই সংগঠনের প্রথম সফলতা পায় প্রথম চলচ্চিত্র “সালামত” মুক্তির মাধ্যমে। নাজির আহমেদের পরিচালনায় ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৫৪ সালে। সালামতের সাফল্যে ওই বছরই কাজ শুরু হয় প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র “মুখ ও মুখোশের”। আব্দুল জব্বারের পরিচালনায় এই ছবির মাধ্যমেই সৃষ্টি হয় নতুন অধ্যায়ের।
১৯৫৭ সালের ২৭শে মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান “পূর্ব পাকিস্তান ফিল্ম কর্পোরেশন বিল” উত্তাপন করেন। যার ফলসূতিতে গঠিত হয় “পূর্ব পাকিস্তান ফিল্ম ডেভেলাভম্যান্ট কর্পোরেশন (EPFDC) গঠিত হয়। এতে কার্যকরী ভূমিকা রাখেন নাসির আহমেদ,ফাতেহ লাহরীর মতো গুনীজনেরা। এই EPFDC থেকে প্রথম নির্মিত চলচ্চিত্র “আকাশ আর মাটি” মুক্তি পায় ১৯৫৯ সালে যার নির্মাতা ছিলেন ফাতেহ লাহরী।ওই বছরই মুক্তি পায় বাংলা-উর্দু চলচ্চিত্র “দ্যা ডে শেল ডাউন” যার মাধ্যমে সহকারী পরিচালক হিসেবে অভিষেক হয় জহির রায়হানের। সাথে যুক্ত হয় প্রতিথযশা পরিচালক এহতেশামের। তার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র “এদেশ তোমার আমার ” এ অভিনয় করেন সুভাষ দত্ত এবং শবনম।
বাংলা চলচ্চিত্রের শুরু থেকে এপর্যন্ত ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো নিয়ে ছারপোকার আজকের এই পোস্টটি লিখেছেন জয় বড়ুয়া ! চলুন জেনে নেয়া যাক বাংলা চলচ্চিত্রের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস –
স্বাধীনতা উত্তর বাংলা চলচ্চিত্র : এই সময়টা বাংলা চলচ্চিত্রেরর সবচেয়ে উল্ল্যেখযোগ্য সময়।এ দশকেই উত্তান ঘটে উপমহাদেশের প্রখ্যাত উপন্যাসিক,চলচ্চিত্রকার জহির রায়হানের একে একে নির্মান করেন “কখনো আসেনি (১৯৬১), কাঁচের দেয়াল (১৯৬৩), সঙ্গম (১৯৬৪, প্রথম রঙ্গিন চলচ্চিত্র), বাহানা, বেহুলা, আনোয়ারা, দুই ভাই” । ১৯৭০ সালে নির্মান করেন বিখ্যাত চলচ্চিত্র “জীবন থেকে নেয়া” । এসময়েই আবির্ভাব ঘটে বেশ কিছু লিজেন্ডারি অভিনেতার যার মধ্যে রহমান, সুমিতা দেবি, খান আতাউর রহমান, আজিম, রাজ্জাক, শাবানা, কবরী, বেবি জামানসহ আরো অনেকে।
স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলা চলচ্চিত্র : স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলা চলচ্চিত্রেরর সবচেয়ে বেশি প্রচার এবং প্রসার লাভ করেছে। সেটা ব্যবসায়িক এবং সমালোচক দুই দৃষ্টিতেই। ১৯৭১ সালের বিজয়ের মাসেই EPFDC নাম পরিবর্তিত হয়ে “বাংলাদেশ ফিল্ম ডেভেলভম্যান্ট কর্পোরেশন” (BFDC) করা হয়। এসময়ে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক বেশ কিছু উল্ল্যেখযোগ্য চলচ্চিত্র নির্মান হয়, যার মধ্যে চাষী নজরুল ইসলামের “ওরা ১১জন” অন্যতম। এই সময়েই পরিচালনায় আসেন আলমগীর কবির, আব্দুল্লাহ আল মামুন, নারায়ন ঘোষ, ওপার বাংলার হৃিত্তিক ঘটক, কাজী হায়াত, নেয়ামত আলী সহ আরো বিখ্যাত পরিচালকরা। ধীরে বহ মেঘনা, তিতাস একটি নদীর নাম, আলোর মিছিল, সূর্যদীঘল বাড়ি, লালন, পিতা সহ অসংখ্যা কালজয়ী চলচ্চিত্র এসময়ে নির্মিত হয়।
বাংলা চলচ্চিত্রেরর স্বর্ণযুগ : ১৯৮০ থেকে ১৯৯৯ এই সময়টা বাংলা চলচ্চিত্রের স্বর্ণযুগ হিসেবে বিবেচিত হয়। এসময়ে সময়ে বাংলা চলচ্চিত্র দেশের গন্ডি পেরিয়ে বাইরেও একটা অবস্থান সৃস্টি করে। এসময়ে একই সাথে অনেকগুলো তারকা শীর্ষ পর্যায়ে পৌছেছিলো। এদের মধ্যে রাজ্জাক, কবরী, শাবানা, ওয়াসিম, জাফর ইকবাল, জসিম, রোজিনা, ইলিয়াস কাঞ্চন, দিতি অন্যতম। আবির্ভাব হয় বিখ্যাত উপ্যানাসিক হুমায়ুন আহমেদ, তারেক মাসুদ,তানভীর মোকাম্মেম, মোরশেদুল ইসলাম, নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু সহ অনেক প্রতিথযশা ব্যক্তির।
এসময়েই নির্মিত হয় কালজয়ী চলচ্চিত্র হারনোর সুর, দহন, মান সম্মান, ভাত দে, ছুটির ঘন্টা, দেবদাস, রাজলক্ষী-শ্রীকান্ত, দিপু নাম্বার ২ সহ অনেক উল্ল্যেখযোগ্য চলচ্চিত্র।
বাংলা চলচ্চিত্রের পিছুটান এবং বর্তমান : নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে বাংলা চলচ্চিত্রেরর দর্শক সংখ্যা কমতে থাকে। প্রধান কিছু কারন ছিলো দূর্বল নির্মানশৈলি, নিম্নআয়ের অডিয়েন্স টার্গেট করে সিনেমা নির্মান, বিদেশি সিনেমার কপি বিশেষ করে ভারতীয় চলচ্চিত্রের। নতুন শতকের শুরুতে অশ্লীলতা মহামারী আকার ধারন করে। ১২০০ সিনেমা হল থেকে ৩০০ তে নির্গমন হয়। মধ্যবিত্তরা পুরোপুরি হল বিমুখ হওয়ায় বাংলা চলচ্চিত্রে বড় ধস নামে। বন্ধ হয়ে যায় বড় বড় প্রযোজনা প্রতিষ্টানগুলো। একজন নায়কের একনায়কতন্ত্র সহ পরিচালকদের পুরনো ধ্যান ধারনার কারনে ধুকতে বসে বাংলা চলচ্চিত্র।
এরমধ্যেই মরার উপর খরার ঘা হিসেবে সংযোজন হয়েছে যৌথ প্রযোজনার নামে যৌথ প্রতারনা। একটা দেশীয় প্রযোজনা প্রতিষ্টান শ্রেফ কিছু কমিশনের জন্য যৌথ প্রযোজনার নামে নির্ভেজাল ভারতীয় সিনেমার ডিস্ট্রিবিউশন করছে।
এতকিছুর মাঝেও একদল স্বপ্নবাজ তরুণের হাত ধরে হয়ত ঘুরে দাড়াবে আমাদের বাংলা চলচ্চিত্র ।