আমার মনে আছে, আমি যে স্কুলে প্রথম পড়াশোনা শুরু করি, সেটা ছিলো একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবন। এর জানালা অথবা দরজার মধ্যে কোনো পার্থক্য ছিলো না। কারণ এর কোনোটাতেই কোনো গড়াদ বা পাল্লা ছিলো না। সেই সাথে পুরো ভবনের পলেস্তারা খসে যাওয়া ভেতরের লালরঙা ইটগুলো ভবনের ভগ্নদশা ও বার্ধক্যের জানান দিত।
বর্তমান সময়ের আধুনিক বিদ্যালয়গুলোতে যে আমাদের সন্তানেরা কত সুবিধা নিয়ে পড়াশোনা করছে। তা শুধু আমরা অতীত দেখে আসা মানুষরাই ভালো বুঝতে পারি। এখনকার অনেক স্কুলে এয়ারকন্ডিশন পর্যন্তও রয়েছে। বেশ ভালো আছি আমরা। প্রতিনিয়তই একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের দেশ। আর এ কথাটাই প্রমাণ করবে আজকের এই পোস্ট।
বিশ্বের কিছু অদ্ভুত বিদ্যালয়ের সাথে আজ আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেয়া যাক, যেগুলোর কথা হয়ত আপনি আগে জানতেন না। বরাবরের মত এবারো আমি আমার লেখায় খুব বেশি তথ্য দিবোনা। কারণ আমি চাই, লেখাটি পড়ে পাঠকদের ভেতর বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এই অদ্ভুত বিষয়গুলো নিয়ে আগ্রহের সৃস্টি হোক। পাঠকরা সেগুলো নিয়ে অনলাইনে ঘাঁটাঘাটি করে নতুন কিছু তথ্য খুঁজে আনুক। এরকম হাজারো উৎসুক পাঠকদের নিয়েই এই ছারপোকা ম্যাগাজিন !
বিশ্বের অদ্ভুত কিছু বিদ্যালয়
নৌকা বিদ্যালয়ঃ শুরুতে আমি আমার বাংলাদেশের একটি স্কুলের কথা বলবো। আমি অত্যন্ত গর্বিত যে, একটি দারিদ্রতা সম্পন্ন রাষ্ট্রে জন্ম নিয়েও আমাদের দেশের বাচ্চারা জমি না পেয়ে নৌকায় বসে পড়াশোনা করছে। শিক্ষার প্রতি এই আগ্রহ আমাকে গর্বিত করেছে। নৌকা বিদ্যালয় নিয়ে খুব বেশি তথ্য দিবো না। শুধু অনুরোধ করবো, যদি এই অদ্ভুত বিদ্যালয় সম্পর্কে জানতে চান, তাহলে খোঁজ নিয়ে একদিন নিজেই উপস্থিত হউন নৌকা বিদ্যালয়ে। এর ঠিকানা জানতে চাইলে ফেসবুকে Charpoka Magazine এর অফিসিয়াল পেজে যোগাযোগ করুন।
ডাকিনি বিদ্যা শিক্ষা স্কুলঃ হ্যারি পটার মুভিটা যদি কেউ দেখে থাকেন তবে বুঝবেন আমি কোন স্কুলের কথা বলতে যাচ্ছি। ভাবছেন মুভিতে দেখানো এমন স্কুল সত্যি সত্যিই আছে নাকি? আমি বলবো আছে এবং তারা নিয়মিত পাঠদান করছে। অনলাইন ও নিয়মিত ক্লাসের মাধ্যমে Witch School তাদের পাঠদান করে থাকে। শিকাগো ইলিনয় ও সালেম ম্যাসাচুসেটে এই স্কুলের ক্যাম্পাস রয়েছে। এই অদ্ভুত বিদ্যালয় এর প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছে Rev. Ed Hubbard এবং এর পাঠদান বিষয়ক সকল সিলেবাস নির্ধারন করেছে Donald Lewis ! ২০০১ সালে যখন স্কুল যাত্রা শুরু করে তখন এর ছাত্র ছাত্রী ছিলো ২ লক্ষ ৪০ হাজার। এখানে কি পড়ানো হয় আর কি শেখানো হয়, সে প্রশ্নের জবাব খুঁজে বের করার দায়িত্ব পাঠকের।
পাহাড়ের গুহায় স্কুলঃ শুনলে অবাক হবেন আদিম যুগে মানুষ পাহাড়ের গুহায় বসবাস করত। আর এখন মানুষ সেখানে বসে পড়াশোনা করে। চিনের যংডং অঞ্চলে রয়েছে এই স্কুলটি, যা একটি পাহাড়ের গুহার মধ্যে অবস্থিত। ৭৫০ ফুট দৈর্ঘ্য আর ৩৭৭ ফুট প্রশস্ত গুহার মধ্যে অবস্থিত স্কুলের ছাত্র ছাত্রীরা নির্বিঘ্নে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিলো। কিন্ত এই অদ্ভুত বিদ্যালয় এর পেছনেও রয়েছে অনেক অন্ধকার ইতিহাস। ২০০১ সালে স্কুলটি বন্ধ হয়ে যায়। ইতিহাসটি জানতে Banpo Elementary School লিখে সার্চ করুন গুগলে।
বিশ্বের সবচাইতে ঝুঁকিপুর্ন পথের স্কুলঃ স্কুলে যাওয়ার জন্য মনে হয় এই স্কুলের বাচ্চাদের মত কষ্ট আর কোনো স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদের করতে হয়না। চীনের গুলু অঞ্চলের পাহাড়ের গা ঘেষে অত্যন্ত ঝুঁকিপুর্ন পথ পাড়ি দিয়ে তাদের ক্লসে পৌঁছাতে হয়। ছবিগুলো দেখলেই গা শিউরে উঠবে। Gulu Elementary School লিখে গুগলে সার্চ দিলে আরো ছবি ও তথ্য পাবেন।
সমকামী ও হিজড়াদের স্কুলঃ নিউইয়র্ক শহরের ইস্ট ভিলেজ এলাকায় অবস্থান করছে হার্ভে মিল্ক হাই স্কুল নামে এক অদ্ভুত বিদ্যালয় ! যেখানে সমকামী নারী পুরুষ ও হিজড়াদের জন্য স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করা হয় ১৯৮৫ সালে। স্কুলটি প্রতিষ্ঠার পেছনে যাদের অবদান রয়েছে তারা হলেন এমরি হেটরিক ও ডেমিয়েন মার্টিন। ২০০২ সালে নিউ ইয়র্ক সিটি ডিপার্টমেন্ট অফ এডুকেশন স্কুলটির দায়িত্ব গ্রহন করে। কিন্তু শুরুতে এটি হেটরিক মার্টিন ইনস্টিটিউট হিসেবেই পরিচিত ছিলো। পাঠকের মনে এই স্কুলের পাঠ্যদানের বিষয়বস্তু সম্পর্কে হয়ত খটকা জাগবে। আসলে এই স্কুলটি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিলো সমকামী পুরুষ, নারী ও হিজড়াদের কল্যাণ এবং উন্নয়ন। অন্য কিছু নয়।
পরিশেষে আবারো বলছি, আমার লেখায় আমি বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ করিনি। কারণ আমি চাই, আমার লেখা পড়ে পাঠকের মনে আরও বেশি পড়ার ইচ্ছা জাগ্রত হোক। প্রতিটি স্কুল নিয়ে নেটে বিস্তারীত তথ্য পাবেন। কারো যদি আগ্রহ থাকে, তবে মন্তব্যে আরো তথ্য যোগ করে দিতে পারেন। অথবা ছারপোকা ম্যাগাজিনের লেখক হিসেবেও যোগ দিতে পারেন। জ্ঞানমূলক কিছু নিয়ে কাজ করতে মন্দ লাগবে না…