আধুনিক প্রযুক্তির গত এক যুগ ধরে এই যে ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙুলের ছাপ দিলেই খুলে যাচ্ছে ফোনের লক, গেটের তালা, অফিসের উপস্থিতি; একটা ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়েই যাচাই করা যাচ্ছে কে অপরাধী, এই ফিঙ্গারপ্রিন্ট ডিটেকশন সিস্টেমটা সর্বপ্রথম কে আবিষ্কার করেছিলো জানেন কী? এ প্রশ্ন হয়ত কখনো ভেবেও দেখেননি। উত্তর জানা তো পরের কথা…
গর্বের সাথে বলছি যে, এই ফিঙ্গারপ্রিন্ট ডিটেকশন সিস্টেমের আবিষ্কারক একজন বাঙালী ! তাঁর নাম খান বাহাদুর কাজী আজিজুল হক। বাড়ি খুলনা জেলার কসবার পায়গ্রামে। তিনি কাজ করতেন তৎকালীন বেঙ্গল পুলিশে। ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে এর আগে অনেকেই কাজ করেছেন। কিন্তু এর প্রাকটিকাল ইউজ কি, কিভাবে এটাকে যাচাই করা যায় বা কিভাবে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে বিভিন্ন মানুষের প্রোফাইলগুলো শনাক্ত করা যায়, তা প্রথম আবিষ্কার করেন আমাদের দেশের কাজী আজিজুল হক।
ব্রিটিশ আমলে বেঙল পুলিশের আইজি ছিলেন এডওয়ার্ড রিচার্ড হেনরি। তিনি ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে গবেষণা করার জন্য নিয়োগ করেন দুজন বাঙালীকে। একজন গণিতবিদ কাজী আজিজুল হক, আরেকজন হেম চন্দ্র বোস।
কাজী আজিজুল হক ও হেম চন্দ্র বোস প্রায় ৭,০০০ ফিঙ্গারপ্রিন্টের এক বিশাল সংগ্রহ গড়ে তোলেন। তাঁরা অনেক পরিশ্রম করে একটা গাণিতিক সূত্র দাঁড় করালেন, যেটা দিয়ে ফিঙ্গারপ্রিন্ট যাচাই এর মাধ্যমে মানুষ শনাক্ত করা যায়। এটা ছিলো আধুনিক বিজ্ঞানের এক বিশাল বড় আবিষ্কার। এই পদ্ধতির নাম হওয়া উচিত ছিলো, ‘বোস-হক আইডেন্টিফিকেশান সিস্টেম’ ! কিন্তু ওখান থেকেই ইংরেজদের বেঈমানীর গল্পটা শুরু…
পুলিশের আইজি হেনরী সাহেব এবার সবার কাছে প্রচার করা শুরু করলেন যে, এই ফিঙ্গারপ্রিন্ট ডিটেকশন সিস্টেম আবিষ্কার করেছেন উনি নিজেই। এমন কি কাজী আজিজুল হক -কে কোনোরকম স্বীকৃতি দিতেই তিনি অস্বীকার করে বসলেন। তিনি চুপি চুপি একটা পেপার কলামও পাবলিশ করে ফেললেন নিজের নামে। ব্যসস, বাংলাদেশের কাজী আজিজুল হক আবিষ্কৃত সিস্টেমের নাম হয়ে গেল ‘হেনরি ক্লাসিফিকেশন সিস্টেম’ !
Henry Classification System এখন বিশ্ব বিখ্যাত। মোবাইলের টাচে, অফিসে, অপরাধী শনাক্তকরণে বলতে গেলে যত্ত জায়গায় ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যবহৃত হচ্ছে, তত জায়গায় এই হেনরি ক্লাসিফিকেশন সিস্টেম নামটিই ব্যবহার করা হচ্ছে। কাজ করে গেলো আমার দেশের সূর্য সন্তান, কিন্তু নাম হচ্ছে এক বেঈমান ব্রিটিশ এর…
যদিও কিছুদিন আগে ব্রিটেনের ‘দ্য ফিঙারপ্রিন্ট সোসাইটি’ চালু করেছে ‘The Fingerprint society Azizul Huque & Hemchandra Bose prize‘। ওদিকে যে সিস্টেমের নাম হতে পারত ‘হোক-বোস সিস্টেম’, তা আজও ‘হেনরি ক্লাসিফিকেশন সিস্টেম’ -ই রয়ে গেছে। আর অজানায় থেকে গেছেন আমাদের আজিজুল হক !
তথ্য সহায়তায় বাংলাদেশের ‘দুষ্প্রাপ্য’ ছবি সমগ্র