ডগলাস বোর্ডিং, অক্সফোর্ড মিশন কমপ্লেক্স; অবস্থান কবি জীবনানন্দ দাস স্ট্রিট, বগুড়া রোড, বরিশাল সদর…
১৮ শতকের শুরুর দিকে বরিশাল শহরে খ্রীষ্টান মিশনারীদের পদচারনা শুরু হয়। ব্রিটিশ ভিত্তিক খ্রীষ্টান উপগ্রুপ এ্যাংলিক্যান মিশনারী সংস্থা ১৮৯৫ সালে এখানে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। ব্রিটিশ রাজের সমর্থনে ব্রিটিশ সংস্কৃতির বাহক হিসেবে ভারতীয় উপমহাদেশে কাজ করার উদ্দেশ্যে ব্রাদারহুড অব এপিফানী সংগঠন তৈরী হয়।
এই সংগঠনের কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ১৯০২ সালের পর থেকে পর্যায়ক্রমে বিদ্যালয়, আবাসিক ছাত্রও ছাত্রী হোস্টেল প্রতিস্ঠিত হয়, এর নাম ছিল ডগলাস বোর্ডিং। যার নামে এই বোর্ডিংয়ের নামকরণ, তিনি ছিলেন প্রকৌশলী ফেড্রিক ডগলাস। তিনি ইংল্যান্ড এর অক্সফোর্ডে ক্রাইস্টচার্চে শিক্ষা লাভ করেন। একবার সন্ত্রাসী হামলায় মারাত্মকভাবে আহত এক পুলিশ সদস্যকে বাঁচিয়েছিলেন তিনি। তাঁর এই মহৎ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি পুলিশ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ক্রুশবিদ্ধ যিশুর প্রতিকৃতি উপহার পেয়েছিলেন। সারা জীবন উপহারটি সঙ্গে রেখেছিলেন তিনি !
দৃষ্টিনন্দন এই অক্সফোর্ড মিশন কমপ্লেক্সে আছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ফাদার ও সিস্টারদের আবাসন, পাঠাগার, শিশু সদন, স্বাস্থসেবা কেন্দ্র/সেন্ট এনস মেডিকেল সেন্টার।
১৯০৩ সালে ক্ষেত্রমণি দত্তের দেওয়া ২৫ হাজার টাকা ও বিদেশি বন্ধুদের আর্থিক সহায়তায় বরিশালের এপিফানি গির্জার নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রকৌশলী ফ্রেডেরিক ডগলাসের নেতৃত্বে গির্জা কমপলেক্স নির্মাণ হলেও সিস্টার এডিথের স্কেচ ও ডিজাইন অনুসারে ফাদার স্ট্রং এই গির্জার নকশা চূড়ান্ত ও উন্নত করেন। কাজ সম্পন্ন হয় দুটি ধাপে। প্রথম ধাপের কাজ শেষ হয় ১৯০৩ সালে এবং দ্বিতীয় ধাপের কাজ শেষ হয় ১৯০৭ সালে।
জেনে অবাক হবেন, এই এপিফ্যানি গির্জা বা অক্সফোর্ড মিশন চার্চ দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ গির্জা !
গির্জার ভেতরের মেঝেতে আছে পাথরের তৈরি চৌবাচ্চা, ব্যাপটিজম বাথ বেসিন। ভবনের ওপরে পূর্ব দিকে আছে কালো গম্বুজ। এই গির্জার মূল আকর্ষণ হলো এর বিশাল আকৃতির প্রার্থনা কক্ষ। ৪০টি খিলানের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা ভবনটির ছাদ কাঠের তৈরি। মেঝে সুদৃশ্য মার্বেল টাইলস দ্বারা সাজানো। মূল বেদির ওপর রয়েছে একটা বড় ক্রস।
এই কমপ্লেক্সকে কেন্দ্র করে এপিফানী ব্রাদারহুড এবং সিস্টারহুড সংগঠনের তত্বাবধানে বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ৩৫ একর জমির উপরে পুরো কমপ্লেক্সটি অবস্থিত। কমপ্লেক্সে আরো আছে তেরটি ছোট-বড় পুকুর।
এই ঐতিহাসিক স্থাপনা সম্পুর্ন অক্সফোর্ড মিশনের নিজস্ব জায়গায় অবস্থিত আর ব্রিটিশ অর্থায়নে পরিচালিত। যা মিশে আছে আমাদের ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির সাথে। আর এর সংরক্ষণের দায়িত্বটাও আমাদেরই। ভ্রমণের জন্য যে ডগলাস বোর্ডিং হতে পারে দারুণ একটা জায়গা, তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। চলে আসুন লকডাউন শেষেই !