মাকামে ইব্রাহিম (আরবি: مَـقَـام إِبْـرَاهِـيْـم, বাংলা: হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর দাঁড়ানোর স্থান)। এটি একটি পাথরখন্ড দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা সমান-প্রায় এক হাত। কাবা শরিফের পাশে চারদিকে লোহার বেষ্টনীর ভেতর একটি ক্রিস্টালের বাক্সে মাকামে ইব্রাহিম রাখা রয়েছে। ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষদের কাছে এই পাথরটি বিশেষ স্মৃতি বহন করে।
ইসলামের রাজধানী হিসেবে কাবা একটি সুপরিচিত নাম। ইসলাম ধর্মমতে, পানিসর্বস্ব পৃথিবীতে মাটির সৃষ্টি এ কাবাকে কেন্দ্র করেই। কাবাগৃহের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো তা পৃথিবীর সর্বপ্রথম ও সুপ্রাচীন ঘর।
কোরআনের ভাষায়, ‘নিঃসন্দেহে সর্বপ্রথম ঘর, যা মানুষের জন্য নির্ধারিত হয়েছে, সেটাই হচ্ছে এ ঘর, যা বাক্কায় (মক্কা নগরীতে) অবস্থিত।’ (আলে ইমরান, আয়াত : ৯৬)
হজরত আদম (আঃ)-এর সৃষ্টির দুই হাজার বছর আগে কাবার সৃষ্টি। হাদিসের ভাষ্যমতে, কাবার নিচের অংশটুকু পৃথিবীর প্রথম জমিন। বিশাল সাগরের মাঝে এর সৃষ্টি। ধীরে ধীরে এর চারপাশ ভরাট হতে থাকে। সৃষ্টি হয় একটি বিশাল মহাদেশের। এক মহাদেশ থেকেই সৃষ্টি হয় অন্য সব মহাদেশ। মাটি বিছানোর পর জমিন নড়তে থাকে, হেলতে থাকে। এর জন্য আল্লাহ পাহাড় সৃষ্টি করেন।
আল্লাহ বলেন, ‘তিনি পৃথিবীতে সুদৃঢ় পর্বত স্থাপন করেছেন, যাতে পৃথিবী তোমাদের নিয়ে আন্দোলিত না হয় (হেলে না যায়)।’ (সূরা : নাহল, আয়াত : ১৫)
নূহ (আঃ)-এর সময়কার মহাপ্লাবনে কাবাঘর নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলে আল্লাহর নির্দেশে আবার কাবা শরিফ পুনঃনির্মাণ করেন হজরত ইব্রাহিম (আঃ) ও তাঁর ছেলে ইসমাইল (আঃ)। তার পর থেকে কখনো বন্ধ থাকেনি কাবাঘরের জিয়ারত। সর্বশেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর আমলে এ আনুষ্ঠানিকতা পূর্ণতা পায়।
তাফসিরবিদ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, হজরত ইবরাহিম (আঃ) পাঁচটি পাহাড় থেকে পাথর এনেছেন। পাহাড়গুলো হলো— হেরা, সিনাই, সিরিয়ায় অবস্থিত লুবনান, জুদি ও জায়তা। কাবা শরিফের ভিত্তি স্থাপন হয়েছিল হেরা পর্বতের পাথর দ্বারা। এক পর্যায়ে কাবাগৃহের দেয়াল উঁচু হয়ে যায়। হজরত ইবরাহিম (আঃ)-এর পক্ষে তা নাগাল পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তখন ইসমাইল (আঃ) একটি পাথর খণ্ড সংগ্রহ করেন। হজরত ইবরাহিম (আঃ) ওই পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে কাবাগৃহের গাঁথুনী কর্ম সম্পাদন করেন। এ সময় তার প্রয়োজন অনুযায়ী পাথরটি উঠানামা করত। তিনি পাথরটির উপর উঠে দাঁড়ালে সেটি নরম হয়ে যেত এবং তিনি যাতে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন সেজন্য উনার পা পাথরের ভিতর অনেকটা দেবে থাকত। এর জন্য সে পাথরে তার পায়ের ছাপ আজো বিদ্যমান রয়েছে। তখন থেকে এ পাথরটি ‘মাকামে ইবরাহিম’ নামে পরিচিত।