“অ্যামিশ সন্তানরা স্কুলে যায়। তবে সেই স্কুলের পাঠ খুব বেশি দূর গড়ায় না। একটি মাত্র কক্ষে সেই স্কুলে পড়ানো হয় ক্লাস এইট পর্যন্ত। তারা বিশ্বাস করে জীবনধারণের জন্যে এটুকু শিক্ষাই যথেষ্ঠ !” – অ্যামিশদের নিয়ে লেখার শুরুতে এক লাইনে যদি বিশেষ কিছু বলতেই হয়, তাহলে এটা বলেই শুরু করলাম।
অ্যামিশ (Amish) বিশেষ এক ধর্মীয় সম্প্রদায়, খুব অদ্ভুতভাবে যারা আধুনিক প্রযুক্তি আর বিজ্ঞানকে বিশ্বাস করে না ! আমেরিকার পেনসিলভানিয়ার ল্যানকাস্টার কাউন্টিতে প্রধানত এদের বসবাস। এদের জীবন সম্পূর্ণভাবে প্রকৃতি নির্ভর। প্রযুক্তি বহির্ভূত জীবনযাপন করে এরা। গাড়িতে চড়ে না, বিদ্যুৎ ব্যবহার করে না; এদের জীবনে টিভি, কম্পিউটারেও খুব একটা প্রয়োজন নেই। এদের কমিউনিটিতে গেলে মনে হবে, এ যেনো প্রকৃতির আইন দিয়ে ঘেরা ভিন্ন এক জগৎ ! এই প্রযুক্তির যুগে আমাদের জীবন যখন প্রযুক্তির কাছে জিম্মি, তখন অ্যামিশদের প্রযুক্তিবিহীন এই সাদাসিধে জীবনের গল্প আমাদের মত শহুরে লোকদের অবাক করে দেয়…
প্রকৃতিকে তাড়িয়ে বিজ্ঞানের ছোঁয়ায় আমরা যখন পরিণত হচ্ছি মানুষ নামের রোবটে, তখন এই বিংশ শতাব্দীতে আমিশরা বেছে নিয়েছে প্রকৃতির সঙ্গে বেড়ে ওঠার এক অসাধারণ অনুকরণীয় দীক্ষা ! এরা প্রকৃতির সহজ-সরল জীবন ব্যবস্থায় বিশ্বাসী। আর তাদের এই বিশ্বাসের ভিতটা অনেক মজবুত বলেই অ্যামিশরা যন্ত্রনির্ভর জীবনকে উপেক্ষা করে প্রকৃতিবাদী হয়ে বেঁচে থাকাটাকে জীবনের অন্যতম ব্রত বলে ধরে নিয়েছে। তাদের ধারণা, এই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মানুষকে প্রকৃতি আর ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে, মানুষকে আত্মকেন্দ্রিক করে তুলেছে। তাই তারা সব ধর্ম থেকেই নিজেদের আলাদা করে আরেকটা ধর্ম বানিয়ে নিয়েছে, যার নাম অ্যামিশ !
পেনসিলভানিয়ার ল্যানকাস্টার কাউন্টিতে অ্যামিশদের মূল বসবাস। এই ছোট্ট শহরের কালো পিচের রাস্তার দুপাশেই দেখা মেলে দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখা ছবির মত ঝকঝকে ছোট্ট সুন্দর একটা গ্রামের। কোনো ঘনবসতি নেই, দুরত্ব বজায় রেখে ছোটা ছোট বাড়িগুলো দূর থেকে দেখলে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকা একগুচ্ছ দেশলাইয়ের বাক্সের মতই দেখায় ! রাস্তার আশপাশে যত দূর চোখ যায়, শুধু দেখা যায় ফসলের মাঠে আমিশরা তাদের কাজকর্ম নিয়ে মহাব্যস্ত। কেউ ঘোড়া দিয়ে মাঠে হালচাষ করছে, কেউ ঘোড়ার গাড়িতে ফসল তুলতে ব্যস্ত, কেউ গরু আর ভেড়ার পালের দেখভাল করছে।
লোক দেখানোর জন্য অ্যামিশরা এ জীবন বেছে নেয়নি। আর্থিকভাবে সবরকম সামর্থ্য থাকার পরও এরা প্রকৃতির কাছাকাছি বেঁচে থাকাকেই জীবনের অন্যতম ধর্ম বলে মেনে নিয়েছে। অ্যামিশরা প্রযুক্তি ভালোবাসে না। গভীরভাবে ধর্মপ্রাণ অ্যামিশরা আমাদের এই তথাকথিত সভ্য নাগরিক জীবনে এসে তাদের বিশ্বাসের গাঁট বাঁধতে চায় না। এরা প্রকৃতিকে ভালোবাসে আর ভালোবাসে নিজেদের ছোট্ট সাজানো গোছানো ছোট গ্রামটাকে। অর্থ আর ক্ষমতায় এদের কোনো লোভ নেই। কৃষিকাজ করে জীবনযাপনে এরা বেশি আগ্রহী। পুরুষ অ্যামিশরা মাঠে ভুট্টা, তামাক, সয়াবিন, বার্লি আলুসহ বিভিন্ন শাকসবজি চাষ করেন। আর নারী অ্যামিশরা কাপড় বোনে, মধু তৈরি করে, ফুল আর ফলের চাষ করেন। আমাদের গ্রামাঞ্চলের মেয়েদের মত অ্যামিশ মেয়েরাও পুকুরে হাত দিয়ে কাপড় কাচেন আর তা দঁড়িতে বেঁধে বাড়ির আঙিনায় শুকাতে দেন ! খুবই শান্তিপ্রিয় এক ধর্মীয় সম্প্রদায় অ্যামিশ।
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে অ্যামিশদের তেমন আস্থা নেই। এদের বিশ্বাস, শারীরিক সুস্থতার পূর্ব শর্ত হচ্ছে মানসিকভাবে সুস্থ থাকার পূর্ণ নিশ্চয়তা। অ্যামিশদের ধারণা, পৃথিবীতে এত পাপ আর সমস্যার একমাত্র কারণ হলো প্রকৃতিবিরুদ্ধ হওয়া, প্রকৃতিকে ধ্বংস করা। এদের বিশ্বাস, প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা মানেই ঈশ্বরের কাছাকাছি থাকা। পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের আইন অনুযায়ী অ্যামিশরা সরকারকে প্রাপ্য খাজনা দিয়ে থাকলেও এর বিনিময়ে সরকারের কাছ থেকে অবসর ভাতা, চিকিৎসা ভাতা কিংবা স্কুল ভাতা সহ কোনো সাহায্যই নেয় না ! বৈষয়িক জীবনে কোনো আগ্রহ এদের নেই…
অ্যামিশদের উৎপত্তি
সুইজারল্যান্ডের অ্যানাব্যাপটিস্ট ক্যাথলিক চার্চ থেকে মূলত অ্যামিশদের উৎপত্তি। অ্যামিশ অর্থ ‘সত্যবাদী’ আর অ্যানাব্যাপটিস্ট অর্থ ‘ব্যাপটিজম বিরোধী’। এদের প্রথম গোড়া পত্তন হয় ১৬৯০ সালের প্রথম দিকে সুইজারল্যান্ডে জ্যাকব আম্মানের (Jakob Ammann) হাত ধরে। এই অ্যানাব্যাপটিস্টরা মূলত প্রটেস্ট্যান খ্রিষ্টান। তবে বাইবেলের অনেক বিষয়ের সাথে এদের প্রবল দ্বিমত রয়েছে। যেমনঃ খ্রিষ্টান ধর্মে নবজাতকের ব্যাপটিজম করে পাপমোচন করার কথা বাধ্যতামূলকভাবে বলা আছে। কিন্তু অ্যানাব্যাপটিস্টরা অর্থাৎ অ্যামিশরা এই প্রথার প্রবল বিরোধী। অ্যানাব্যাপটিস্টরা মনে করে, শিশুরা জন্মগতভাবেই নিষ্পাপ। নিষ্পাপ একটি শিশু পাপ-পুণ্যের কোনো পার্থক্য ধারণ করার কথা নয়। যেহেতু শিশু মাত্রই নিষ্পাপ, তাই তাদের ব্যাপটাইজ করার চিন্তাটা অ্যামিশদের কাছে রীতিমত হাস্যকর ছাড়া আর কিছুই নয়। তবে যদি ব্যাপটিজম করতেই হয়, সেক্ষেত্রে শিশুর বয়স যখন ষোলোতে পড়বে এবং যখন সে পৃথিবীর পাপ-পুণ্যের অঙ্ক কষতে শিখবে, শুধুমাত্র তখনই তার ব্যাপটিজম হতে পারে।
সুইস খ্রিষ্টান সমাজ অ্যানাব্যাপটিস্টদের বাইবেলবিরোধী এধরনের কথাবার্তা খুব ভালো চোখে দেখতে পারেনি। ধর্মের বিরুদ্ধে এ রকম দুঃসাহসিক কথা বলার জন্য সুইস সরকার এই অ্যানাব্যাপটিস্টদের ওপর চড়াও হয়। প্রথমে এদের ঘরবাড়ি, সম্পত্তি সরকারীভাবে বাজেয়াপ্ত করে এবং পরে ‘অ্যামিশ নিধন’ নামে একটি বিশেষ পুলিশ বাহিনী তৈরি করে এদেরকে সুইজারল্যান্ড থেকে স্থায়ীভাবে বের করে দেওয়া হয়। সুইজারল্যান্ড থেকে বিতাড়িত হয়ে অ্যামিশরা আশ্রয় নেয় জার্মানিতে। সেখানে শুরু হয় তাদের আরেক নতুন জীবন। কিন্তু জার্মানিতেও অ্যামিশরা তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে খুব বেশিদিন টিকে থাকতে পারেনি। পরে এরা ধীরে ধীরে উত্তর আমেরিকার ওহাইও, কানাডা, পেনসিলভানিয়া সহ বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে পাড়ি দেয় এবং সেখানেই স্থায়ী হয়।
আরেকটু বিশ্লেষণ করে বললে, ১৭১০ সালের দিকে অ্যামিশরা প্রথম আমেরিকার পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যে আসেন। তারা উইলিয়াম পেন নামের এক জমিদারের কাছ থেকে ১০ হাজার একর জমি কিনে ল্যানকাস্টার কাউন্টিতে প্রথম বসবাস শুরু করেন। ১৭২৭ সালের ২ অক্টোবর ‘অ্যাডভেঞ্চার’ নামের এক জাহজে চড়ে প্রথম ১৩ জন অ্যামিশ আমেরিকায় আসেন। এর বছরদশেক পর ‘Charming Nancy’ নামক আরেকটি জাহাজে চড়ে অসংখ্য অ্যামিশ পেনসিলভানিয়ার ল্যানকাস্টার কাউন্টিতে আসতে শুরু করেন। এটাই ছিলো আমেরিকায় অ্যামিএদর বসতি গড়ে ওঠার ছোট্ট ইতিহাস…
রবার্ট রেডফিল্ড নামে একজন সমাজতত্ত্ববিদ অ্যামিশদের সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন –
“The Amish are the only honest Christians left in the modern world. Because of the qualities or sainthood ascribed to them, the Amish are regarded by some as a rare species, a people who raise their crops ‘naturally’ and who live by extra ordiniary standards of honesty and uprightness.’ – (Robert Redfield, American Journal of Society)”
অ্যামিশদের নিত্যদিনের জীবনযাত্রা
অ্যামিশদের পরিধেয় সাদামাটা কাপড় দেখলেই এদের চেনা যায়। অ্যামিশ মেয়েদের পোশাক হল সাদা রংয়ের লম্বা জামা আর তার ওপর কালো কুর্তা। এবং পুরুষের পরনে থাকে ফুল হাতা সাদা শার্ট, তার ওপর কালো লম্বা কুর্তা, মাথায় থাকে কাউবয়দের মত টুপি। অ্যামিশ পুরুষেরা ১৬ বছর বয়সের পর থেকে আর দাঁড়ি কাটেনা। এদের ভাষা ইংরেজি। পাশাপাশি অ্যামিশরা ডাচ ভাষায়ও কথা বলে থাকেন।
গতানুগতিক ধারার শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর অ্যামিশদের কোনো আস্থা নেই। এরা ‘নিজেদের বিশ্বাসের তৈরি’ স্কুলে সন্তানদের পড়াশোনার জন্য পাঠায় এবং সেখানে তারা মাত্র অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করে। কর্মঠ হিসেবে অ্যামিশদের বেশ সুনাম আছে। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে তারা ফসলের মাঠে যায়। ছেলেমেয়েরা যায় স্কুলে। বাড়ির পুরুষ আর নারীরা ব্যস্ত হয়ে পড়ে নিজেদের কাজকর্মে। আমরা যেমন টিভি সিনেমা ও ইন্টারনেট নিয়ে সময় কাটাই, এরকম বিনোদন অ্যামিশদের জীবনে খুব একটা নেই। প্রতি রোববার কোনো বাড়িতে অথবা কমিউনিটি সেন্টারে গান গেয়ে আনন্দ করে এরা সময় কাটায়। তবে গানে কোনোরকম যন্ত্রসঙ্গীত ব্যবহার করা অ্যামিশদের জন্য ধর্মীয়ভাবে নিষিদ্ধ এবং তারা এটা নিবিড়ভাবে মেনে চলেন। নিজেদের গোত্রের বাইরে কোনোপ্রকার অনুষ্ঠান আয়োজনের কথা অ্যামিশরা চিন্তাই করতে পারেন না। নিজেদের পরিধি তুলনামূলকভাবে ছোট হওয়ায় অ্যামিশরা পরস্পর পরস্পরকে ভালো করে বুঝতে চেষ্টা করে, সুখ-দুঃখের গল্প ভাগাভাগি করে নেয়। চাকরীবাকরীর লোভ এদের নেই। অ্যামিশদের একমাত্র জীবিকা হচ্ছে কৃষি খামার তৈরি করা। একটা খামারকে কিভাবে বাড়ানো যায়, এটাই তাদের একমাত্র বৈষয়িক লক্ষ্য…
অ্যামিশদের বিয়ে নিয়ে দুটি কথা। অন্যান্য সমাজের মত অ্যামিশদের জীবনেও বিয়ে একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। বিয়ে ঘিরে অ্যামিশরা নানা উৎসবে মেতে ওঠে। অ্যামিশ ছেলেমেয়েরা যখন ষোলো বছরে পা রাখে, তখন থেকেই এরা নিজেদের সঙ্গী খোঁজায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সাধারণত ২০-২২ বছর বয়সেই এরা বিয়ের কাজটি সেরে ফেলেন। তবে বিয়ে করা এত সহজ কথা নয়। অ্যামিশদের প্রথা অনুযায়ী, বিয়ের প্রস্তাব দিতে হলে অ্যামিশ ছেলে-মেয়েদের অন্তত জুলাই-আগস্ট মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। নিজেদের পছন্দমত বর চূড়ান্ত হওয়ার পরই শুধু কনে নিজ থেকে তার বাবা-মাকে হবু বর সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়।
নিয়ম অনুযায়ী, ১১ অক্টোবর থেকে সম্ভাব্য বর-কনেরা তাদের নামের তালিকা গির্জায় নিবন্ধন করে এবং পরবর্তী রোববার গণমান্য বিশেষ অতিথিদের উপস্থিতি আর আপ্যায়নের মধ্য দিয়ে তালিকাভুক্ত সম্ভাব্য বর-কনেদের নাম ঘোষণা করা হয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই দিনটি অ্যামিশদের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। চার্চ থেকে প্রকাশিত তালিকায় বর-কনের নাম নিশ্চিত হওয়ার পর থেকেই বর আর কনের বাবা-মায়েরা বিয়ের আয়োজনে মহাব্যস্ত হয়ে পড়েন। কনের মা নিজ হাতেই তার মেয়ের বিয়ের পোশাক তৈরি করেন !
বর ও তার বাবা-মা বিয়ের অনুষ্ঠানে গির্জার নির্দিষ্ট অতিথি তো বটেই, অ্যামিশ সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিমন্ত্রণ করেন। বিয়ের পোশাক হিসেবে অ্যামিশ পুরুষেরা পরেন কালো লম্বা কুর্তা, মাথায় টুপি আর মেয়েরা পরেন নীল রঙের গাউন। পোশাক হিসেবে নীল রংয়ের গাউন অ্যামিশ মেয়েদের কাছে খুবই প্রিয়। সে কারণেই অ্যামিশ মেয়েরা বিয়ের দিন নীল রঙের গাউন পরে সজ্জিত হতেই বেশি ভালোবাসে।
পেনসিলভানিয়ার লেনক্যাস্টার কাউন্টি বর্তমানে উত্তর আমেরিকার অন্যতম এক জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। শহুরে জীবনের ধরাবাধা জীর্ণশীর্ণতা কাটাতে অ্যামিশদের জীবনযাপনকে দেখতে আমেরিকার বিভিন্ন এলাকা থেকে পর্যটকেরা আসেন এই ল্যানকাস্টার কাউন্টির অ্যামিশ পল্লীতে। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রতি বছর প্রায় সাড়ে ৫ লাখ পর্যটক এই অ্যামিশ পল্লীতে ঢুঁ মারেন।
পর্যটকেরা প্রতি বছর এই অ্যামিশ গ্রামে প্রায় চারশ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করেন, যা হিসাব করলে অ্যামিশদের মোট জনসংখ্যা হিসাব অনুযায়ী, মাথাপিছু অ্যামিশদের বার্ষিক আয় দাঁড়ায় ২৯ হাজার ডলার বা ২৫ লক্ষ টাকা। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসতে পারে, এই অ্যামিশদের সঙ্গে সাধারণ পর্যটকদের সম্পর্ক কিরকম? এ কথা তো এতক্ষণে জেনেই গেছেন, শান্তিপ্রিয় অ্যামিশরা সবসময় শুধু শান্তিতেই বসবাস করতে চান। সে কারণেই পর্যটকদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক অনেক প্রাঞ্জল আর মধুর। তবে একটি বিষয় হলো, ক্যামেরা নামের বস্তুটি অ্যামিশরা একদম পছন্দ করেন না। সে কারণেই পর্যটকদের ক্যামেরা থেকে অ্যামিশরা নিজেদের নিরাপদ দূরত্বে রাখতে চেষ্টা করে।
শেষ কথা
আমিশরা প্রকৃতি থেকে উৎক্ষিপ্ত উৎসারিত হয়ে যে মন্ত্র ও দীক্ষায় তাদের জীবনধর্ম তৈরি করেছে, সহজ-সরল জীবনের মাঝে বেঁচে থেকে সুন্দরকে অবলীলায় ধারণ করার ক্ষমতা অর্জন করেছে, সেখান থেকে আমাদের মত বিজ্ঞান-প্রযুক্তির পাতে মোড়ানো মানুষগুলোর অনেক কিছু শেখার আছে। আমরা আমাদের নিজস্ব ধর্মে থেকেই এই শান্তিপূর্ণ জীবনের স্বাদ নিতে পারি। সব ধর্মেই রয়েছে শান্তি। শান্তির খোঁজে ধর্মান্তরিত হবার প্রয়োজন নেই। এই প্রযুক্তির যুগে আমরা এই শহুরে মানুষেরা লোহালক্কড় আর ইট কাঠের মত ধীরে ধীরে নিষ্প্রাণ হয়ে গেছি, ভালোবাসায় মাখা আমাদের চোখ দুটো এখন শুকিয়ে যেতে শুরু করেছে। আমরা স্বপ্নহীন মানুষেরা বেঁচে আছি প্রযুক্তির খাঁচায় বন্দী হয়ে। আর সে কারণেই অ্যামিশদের সহজ সরল জীবন আমাদের যন্ত্রপাতি আর কলকব্জাতে আটকে থাকা ব্যস্ত জীবন সম্পর্কে নতুন করে ভাবায়, প্রকৃতিকে নিত্য ভালোবাসতে উদ্বুদ্ধ করে। আমিশদের জয় হোক, প্রকৃতির জয় হোক আর জয় হোক মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসার।