লন্ডনভিত্তিক বহুজাতিক করপোরেশন সোথবে একটি নিলামের আয়োজন করেছে। নিলামের বস্তুটি হলো একটি চিত্রশিল্প। ক্যানভাসে আঁকা ১৩ ফুট প্রস্থ ও ফুট ছয়েক দৈর্ঘ্যের ছবিটির নাম ‘ডেভলপড পার্লামেন্ট’। এতে দেখা যায়, যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ‘হাউজ অব কমন্স’-এ মানুষের বদলে বসে আছে একপাল শিম্পাঞ্জি। তারাই চালাচ্ছে রাষ্ট্র। এই ছবিটির দাম শুনে চোখ কপালে ওঠাটা স্বাভাবিক। একশ’ কোটি টাকারও (৯.৯ মিলিয়ন পাউন্ড) বেশি দামে বিক্রি হয়েছে ছবিটি। যা নিলামকারীদের ধারনারও আট থেকে নয় গুন বেশি। ছবির চিত্রশিল্পীকে কেউ চিনে না, বাস্তবে তিনি সকলের কাছে একজন হিরো। তার নাম বাঙ্কসি ।
সমকালীন বিশ্বের রাজনৈতিক সমালোচনামূলক ছবি এঁকে দুনিয়াজুড়েই তুমুল আলোচিত যুক্তরাজ্যের শিল্পী বাঙ্কসি। কিন্তু কেউ কখনো দেখেনি এ শিল্পীকে। গেরিলার মতো গোপনে, সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ছবি এঁকে রাতারাতি লাপাত্তা হয়ে যান তিনি। ছবি ও ভাস্কর্য এঁকে এখন পর্যন্ত ফিলিস্তিনসহ বিভিন্ন দেশের বিপ্লবী, সংগ্রামী জনতার সঙ্গে সংহতি জানিয়েছেন এ শিল্পী। তার আত্বগোপনে থাকা এবং ছবি একে উধাও হয়ে যাওয়ার জন্যই তাকে গেরিলা শিল্পী হিসেবে আখ্যায়িত করে অনেকে।
তুমুল ব্যঙ্গ ও সমালোচনার জন্য ক্ষমতাশালীদের চোখের কাঁটা বাঙ্কসির শিল্পকর্ম। কিন্তু সাধারণ মানুষের জন্য তার সহানুভূতির শেষ নেই। সব মিলিয়ে তার ব্যাপারে ব্যাপক কৌতূহল মানুষের। কিন্তু কখনোই তিনি প্রকাশ্যে আসেননি। শহরের বিশাল সাইজের খালি পড়ে থাকা দেয়াল হলো তার পছন্দের ক্যানভাস।
বাঙ্কসির ছবি আকার এই ধরন জনপ্রিয়তা পেয়েছে বিশ্বব্যাপী। শিল্পীরা খুজে পেয়েছে যেন বিপ্লব প্রকাশের নতুন এক ধরন। নতুন করে আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে সারা দুনিয়াতেই এ ধরনের শিল্পকর্ম ছড়িয়ে পড়ছে। অনেকে বাঙ্কসি একটি দল বা সংগঠন বলে মনে করে, তাদের ধারনা এরা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে আছে। ব্যাপারটি আসলে সম্পূর্ন ভুল। বিশ্বের অন্যান্য দেশের অনেক শিল্পীরা বাঙ্কসির এই ধরনকে অনুসরন করেছে মাত্র। গ্রাফিত্তির এই নবজাগরণের পেছনে কিংবদন্তি শিল্পী বাঙ্কসির অবদান অনস্বীকার্য। বাংলাদেশেও কিন্তু এমনটি হয়েছে বেশ কিছুদিন আগে। ‘সুবোধ তুই পালিয়ে যা’ শিরোনামে যে চিত্রকর্ম দেখা গিয়েছে এসব গুলো কিন্তু বাঙ্কসির শিল্প থেকেই উৎসাহী হয়ে করা হয়েছে বলে মনে করা হয়।