ঝড় তুফান বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগমণী বার্তা যে প্রকৃতি নিজে থেকেই জানান দিয়ে যায়, তা জানেন তো? প্রাচীনকালে কৃষকরা এভাবেই ঝড়বাদল সম্পর্কে আগাম বার্তা পেত। আপনিআবহাওয়ার খবর না রাখলেও প্রকৃতি নিজ থেকেই আপনাকে জানিয়ে দিবে যে, প্রবল বর্ষণ আসছে। চলুন জেনে নেয়া যাক, ঝড়ের পূর্বে ঘটে যাওয়া এমনই কিছু অদ্ভুত ব্যাপার, যা আগেও ঘটেছে, এখনো ঘটছে, ভবিষ্যতেও ঘটবে…
গাছের পাতা উল্টে যাওয়া
প্রচলিত এই ধারণাটি আসলেই যুক্তিসঙ্গত। ঝড় আঘাত হানার পূর্বে জলীয় বাষ্প উর্ধ্বমুখী হয়ে চলে। ফলে বাতাস যখন মর্মরধ্বনিতে আঘাত হানে, স্বাভাবিক কাঠিন্য ছাড়াই তখন গাছের পাতা উল্টে গিয়ে পাতার নিচের অংশ দেখায়।
পোকামাকড়ের চাঞ্চল্যতা কমে যায়
বৃষ্টির পূর্বে যখন বায়ুচাপ কমে যায়, কীটপতঙ্গগুলো তখন মিলনের আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। গবেষকরা ভিন্ন প্রজাতির কীটপতঙ্গ যেমনঃ কোকো বিটল, পটেটো আপহিডস এবং ট্রু আর্মিওয়ার্ম মথ এর সঙ্গম আচরণ লক্ষ্য করেছেন এবং ৩টি প্রজাতির মধ্যেই একই রকম প্রতিক্রিয়া দেখতে পেয়েছেন। বৃষ্টি হতে চলেছে এমন অনুভূত হলে স্ত্রী কীট কম কামোদ্দীপক ইঙ্গিত প্রদান করে এবং পুরুষ কীট তাদের ফেরোমোনের প্রতি জোরালো কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না। এরা যদি একে অপরের খুব নিকটে অবস্থান করে তবে তারা মিলিত হয় কিন্তু সম্পূর্ণ সঙ্গমক্রিয়া শেষ করার পরিবর্তে দ্রুত মিলন শেষ করে ফেলে।
কুকুরগুলো আতঙ্কিত হয়ে পড়ে
যদি আপনার কুকুরটি ঝড়ের ভয়ে ভীত হয়, তাহলে ঝড় আসার পূর্বেই সে বিভিন্ন ধরনের উদ্ভট আচরণ শুরু করতে পারে। কুকুরেরা খারাপ আবহাওয়ার পূর্বানুমান করতে পারে, কারণ কুকুর বায়ুমন্ডলের চাপের পরিবর্তনগুলোকে আঁচ করতে পারে, নিম্ন-ফ্রিকোয়েন্সির বজ্রধ্বনি শুনতে পারে এবং স্থির বৈদ্যুতিক তরঙ্গকে অনুভব করতে পারে। এই পরিবর্তন সমূহ কুকুরকে অস্বাভাবিক করে তোলে এবং কুকুর লুকিয়ে বেড়ায়, মাটিতে আঁচড় কাটে ও দ্রুত দৌড়ায়।
পাখিরা স্থান ত্যাগ করে
২০১৩ সালে বিজ্ঞানীরা সোনালী পাখাওয়ালা গায়ক পাখিদের মাইগ্রেশনের দিকে নজর দিতে গিয়ে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন, যখন এগুলো হঠাৎ করে টেনেসি পর্বতমালার দিকে উড়ে যায়, ঝাঁক বেধে যাওয়ার পরিবর্তে তারা প্রত্যেকে আলাদা আলাদা ভাবে উড়ে যায়। এরপর ৫৬০ মাইল বেগে ঝড় বয়ে যায়, কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে বাতাসের গতি, তুষারপাত কিংবা বায়ুমন্ডলীয় চাপের এমন কোনো পরিবর্তন ছিল না যার মাধ্যমে এটি বোঝা যায়। ঝড় শেষ হওয়ার পর পাখিরা আবার ফিরে আসে। গবেষকেরা বুঝতে পারেন যে, পাখিরা সেইসব ক্ষুদ্র তরঙ্গের শব্দও আঁচ করতে পারে, যা মানুষ শুনতে পায় না।
মৌমাছিরা অতিরিক্ত পরিশ্রম করে
মৌমাছিরা আগেই বুঝতে পারে যে বৃষ্টি হতে চলেছে এবং তারা প্রস্তুতির জন্য খাদ্য মজুদ করতে থাকে। বিজ্ঞানীরা ৩০০ মৌমাছির ওপর এক মাসেরও বেশি সময় ধরে নজর রাখেন এবং মজার কিছু আবিষ্কার করেন: বৃষ্টি হওয়ার আগের দিন মৌমাছিরা স্বাভাবিকের চাইতে বেশি কাজ করে, কারণ বৃষ্টিতে তারা বাইরে বের হতে চায় না।
বাতাসের গন্ধের পরিবর্তন হয়
বৃষ্টি নামার আগে বাতাসে একটি নির্দিষ্ট গন্ধ তৈরি হয়। আপনার নাকে যে সতেজ সুবাস ধরা পড়ে তা ওজন স্তর থেকে আসে। যখন ঝড় আসে তখন নিম্নগামী বায়ু ওজোন স্তরের মলিকিউলাসকে ভূপৃষ্ঠের দিকে চাপ দেয়। ফলে তা আপনার নাকে এসে পৌঁছায়।