মৃত্যু সকলের জন্যই অবধারিত, এ কথা কারো অজানা নয়। জীবদ্দশায় মানুষ সুখী থাকুক বা অসুখী থাকুক, প্রত্যেকেই সুন্দরভাবে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে চান। প্রত্যেকের একটা বিশেষ কল্পনা থাকে নিজের মৃত্যু নিয়ে, যেভাবে মৃত্যু হলে তবেই তাকে বলা যাবে সুন্দর করে পৃথিবী ছেড়ে যাওয়া ! সেটা সম্ভব হলেই মৃত্যু সফল…
কিন্তু কার মৃত্যু কিভাবে হবে, তা কেউ জানেনা। তবে পৃথিবীতে যেহেতু স্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনাই বেশি, তাই কেবলমাত্র মৃত্যুর ঘটনা কিঞ্চিত ব্যতিক্রম হলেই তখন সেই মৃত্যু সবার নজর কাড়ে। আকস্মিক এবং ব্যতিক্রম ভাবে মৃত্যুবরণ করা এমন কয়েকজন মানুষের গল্প নিয়েই আজকের এই প্রতিবেদন। পড়ুন তাদের কথা…
নিয়মের অভিশাপে সুনন্দা কুমারীরত্ন’র নৌকাডুবি
রাজকীয় জীবন সবদিক থেকেই সমৃদ্ধ হওয়ার কথা। সেভাবে চলছিল থাইল্যান্ডের রাজা মোংকুট এবং রানী পিয়ামের কন্যা সুনন্দা কুমারীরত্নর জীবন। ১৮৬০ সালে আক্ষরিক অর্থেই সোনার চামচ মুখে জন্মান তিনি। বয়স বাড়তে থাকে, রূপ ও গুণে সবার মন জয় করতে থাকেন রাজকন্যা। আনন্দে কাটতে থাকে জীবন, পার করে ফেলেন ১৯টি বছর।
২০-এ যখন পা ফেললেন, তখন ১৮৮০ সাল। সপরিবারে আনন্দ উদযাপনের জন্য গ্রীষ্মকালীন প্রাসাদে যাচ্ছিলেন রাজকন্যা সুনন্দা। নদীর বুকে ভেসে চলেছিলো বজরা। সাথে ছিলেন তার মা। হঠাৎই ঘটে যায় দুর্ঘটনা। নৌকাডুবি হয়। সবার চোখের সামনে জলে তলিয়ে যান মেয়ে সুনন্দাকে নিয়ে রানী পিয়াম। কারণ কি ছিলো জানেন? রাজপরিবারের কারো দেহ সমগোত্রীয় বা সমান মর্যাদাসম্পন্ন না হলে স্পর্শ করা যাবেনা। দেহরক্ষীদের তাদের স্পর্শ করার অনুমতি ছিলো না। এই রাজকীয় নিয়ম পালন করতে গিয়ে তারা রানী আর রাজকন্যাকে উদ্ধার করতে পারেননি!
শখের দাড়ির কারণে প্রাণ হারান হ্যান্স সেইনিনগার
১৫৬৭ সাল, তখন গিনেস বুক অব রেকর্ড এর কোনো অস্তিত্ব ছিলো না। যদি থাকত, পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে লম্বা দাড়ি রাখার জন্য হ্যান্স সেইনিনগারের নাম অবশ্যই উঠে আসত। তার দাড়ি ছিল দেড় মিটার লম্বা। ওই দাড়ির জন্যই তার খ্যাতি এবং মৃত্যুও ! ইতিহাস বলছে, একবার আগুনের হাত থেকে পালাতে গিয়ে দাড়িতে পা জড়িয়ে পড়ে যান হ্যান্স। বেকায়দায় পড়ার ফলে ঘাড় ভেঙে যায়। ফলে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার। শখের দাড়ি পালতে গিয়ে বেচারা প্রাণ হারালেন।
শেষকৃতের সময় বেঁচে উঠেও মৃত্যু হয় ফ্যাগিলুর
২০১১ সাল পর্যন্ত স্বামী ফ্যাগিলির সঙ্গে রাশিয়ার কাজানে ফ্যাগিলু মুখামেতজিয়ানভের দাম্পত্য জীবন ভালোই চলছিল। সমস্যা দেখা দিলো এক রাতে, যখন বুকে ব্যথা শুরু হলো ফ্যাগিলুর। এক্ষেত্রে যা করণীয়, ৫১ বছরের স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যান স্বামী। ভর্তি করা হয় ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে। ১২ মিনিটের মাথায় ডাক্তাররা জানান, ফ্যাগিলু আর বেঁচে নেই।
শুরু হয় তার শেষকৃত্যের আয়োজন। কফিনে দেহ নিয়ে পরিজনরা পৌঁছান কবরস্থানে। মাটি খোঁড়া হয়। শুরু হয় অন্তিম প্রার্থনা। এই সময়ে সবাইকে অবাক করে কফিনের মধ্যে নড়েচড়ে ওঠেন ফ্যাগিলু। চোখ মেলে তাকান। শুনতে পান, ধর্মযাজক তার আত্মাকে এই পৃথিবী ছেড়ে ঈশ্বরের সান্নিধ্যে যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছেন। পুরো ব্যাপারটায় মহিলা এতটাই অবাক হন যে, এবার সত্যিই হার্ট অ্যাটাক হয়ে তার মৃত্যু হয়!
অভিনয়কালে গ্যারেথের মৃত্যু
১৯৫৮ সালের কোনো এক দুপুর। স্টুডিওতে শট নেওয়ার তোড়জোর চলছে। প্রোডাকশন হাউজের সবাই ব্যস্ত। ব্রিটিশ ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা গ্যারেথ জোন্স তৈরি হচ্ছেন শট দেওয়ার জন্য। চিত্রনাট্য অনুযায়ী গ্যারেথকে একটা হার্ট অ্যাটাকের দৃশ্যে অভিনয় করতে হবে। ক্যামেরা চললো। গ্যারেথ হৃদরোগে আক্রান্ত হবার শট দিলেন। কিন্তু আর উঠে দাঁড়ালেন না। জানা যায়, ক্যামেরা চলার সময়েই নাকি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় অভিনেতার ! জীবনের মঞ্চে সত্যি মৃত্যুটাই দেখিয়ে গিয়েছিলেন গ্যারেথ জোন্স…
জীবনের সেরা দৌড়েই ফ্রাঙ্ক হায়েসের মৃত্যু
নিউ ইয়র্কের ৩৫ বছরের ফ্রাঙ্ক হায়েস জীবনের একটা ঘোড়দৌড়েও জিততে পারেননি। অবশ্য, প্রশিক্ষিত জকি তিনি ছিলেনও না। তিনি দেখাশোনা করতেন সুইট কিস নামে এক ঘোড়ার। মাঝে মাঝে জকির কাজও করতেন। ১৯২৩ সালের ঘটনা কিন্তু বদলে দেয় সব হিসেব। সেবার ঘৌড়দৌড়ের মাঝপথেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় ফ্রাঙ্কের! আশ্চর্যের ব্যাপার, তার দেহ কিন্তু আটকে ছিল লাগাম ধরেই! ঘোড়ার পিঠে! এবং সে বার সুইট কিস-ও দৌড়ে জিতে যায়!
মৃত্যু নিয়ে আরেকটি ঘটনা…
১৮১৪ সালে লন্ডন দেখেছিল এক ভয়াবহ রাত। সেদিন বিয়ারের বন্যায় ডুবে মৃত্যু হয় ৮ জন কর্মীর ! লন্ডনের এক বিয়ার কারখানায় হঠাৎই এক বড়সড় বিস্ফোরণ হয়। ফেটে যায় বিয়ারের পিপে। পরিনতিতে ১৪ লাখ ৭০ হাজার লিটার বিয়ারের স্রোতে ভেসে যায় কারখানা থেকে পার্শ্ববর্তী সব এলাকা পর্যন্ত। সেই বিয়ারের স্রোত পথ বেয়ে নেমে আসে এলাকার বিভিন্ন বাড়ির বেসমেন্টে। বিয়ারে ডুবেই মৃত্যু হয় আরো এক পরিবারের…