অসংখ্য গান পাগল জনতার চিৎকারে চারদিক কাঁপছে। স্টেজে একে একে উঠে আসছে ব্যান্ড দলের নয়জন সদস্য, সাধারনত ব্যান্ডগুলোতে ৪-৫ জন সদস্য থাকলেও এই ব্যান্ডটি সবদিক থেকেই ব্যাতিক্রম। কারো চেহারাই মানুষ দেখেনি। সবাই মুখোশ পরে এসেছে। একই রকমের জাম্পসুট সবার গায়েই। মুখোশ ও প্রত্যেকের জামার ভিন্ন সংখ্যাটিই তাদের পরিচয়। জ্বী হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন। বলছিলাম বিশ্ব বিখ্যাত মেটাল ব্যান্ড স্লিপনট এর কথা…
আমেরিকান হেভি মেটালের নিউ ওয়েভ ঘরানার অন্যতম ব্যান্ড স্লিপনট। অল্টারনেটিভ মেটাল, হেভি মেটাল, গ্রুভ মেটাল – বিভিন্ন ঘরানার গান করলেও, মূলত তাদের জনরা নিও-মেটাল।
স্লিপনট এর সূচনা
স্লিপনট একটি মার্কিন হেভি মেটাল ব্যান্ড যা পারকাসনিস্ট শন ক্রাহান এবং বেসিস্ট পল গ্রে-র হাত ধরে ১৯৯৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া অঙ্গরাজ্যে গঠিত হয় । তৃতীয় সদস্য হিসেবে ব্যান্ডে যুক্ত হন ড্রামার জোয়ি জোর্ডিসন। শুরুর দিকে সদস্যদের যাওয়া-আসায় কিছুদিন বেশ বাজে অবস্থা যায় ব্যান্ডটির। তবে এরপরই নয় জনের এক বিশাল লাইন আপে এসে স্থির হয় ব্যান্ডটি। আর সে লাইন আপ টিকেছিল এক দশকেরও বেশি সময়। সে লাইন আপে উপরের তিনজনের সঙ্গে আরও ছিলেন – কোরি টেইলর, মিক থমসন, জিম রুট, ক্রেইগ জোন্স, সিড উইলসন এবং ক্রিস ফেন। ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে গিটারিস্ট ডনি স্টীল ব্যান্ডকে ছেড়ে বের হয়ে আসেন তার খ্রিস্টান ধর্ম বিশ্বাসের জন্য। তার বদলে দলে যোগ দেন ক্রেইগ জোনস। ডিজে সিড উইলসন ব্যান্ডটার প্রতি আগ্রহ ও সদস্যদের সন্তুষ্ট করে ব্যান্ডের যোগ দেন ১৯৯৮ সালে। ১৯৯৮ সালের ৮ই জুলাই ব্যান্ডটি রোডরানার রেকর্ডসের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। ২৮শে আগস্ট ২০০৮-এ ব্যান্ডের আইওয়া নামের ২য় অ্যালবাম বের হয়। এই অ্যালবাম বাণিজ্যিকভাবে সফল হয় বিলবোর্ডের ৩য় অবস্থানে গিয়ে ও ইংল্যান্ডে ১ম অবস্থানে পৌছে। ব্যান্ডটির সঙ্গীতের পেছনে মূল অনুপ্রেরণা ছিল মেটালিকা, হোয়াইট জোম্বি, লেড জেপলিন, জুডাস প্রিস্ট, ব্ল্যাক সাবাথ,স্লেয়ার, কর্ন, কিস ও বিস্টি বয়েজ। ২০১৩ সালে রহস্যজনকভাবে ব্যান্ডের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ হয় জোয়ি জোর্ডিসনের। ব্যান্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়, ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ব্যান্ড ছেড়েছেন জোর্ডিসন। আর জোর্ডিসন জানান, ১৮ বছর ধরে স্লিপনট-ই আমার জীবন। কাজেই ব্যান্ড ছাড়ার প্রশ্নই ওঠে না। কয়েক হাত ঘুরে এখন ব্যান্ডটিতে ড্রামস বাজাচ্ছেন জে ওয়েইনবার্গ, বেস বাজাচ্ছেন আলেসান্দ্রো ভেঞ্চুরেলা।
মুখোশের সূচনা
স্লিপনটের মুখোশগুলোর কিছু মজাদার ব্যাপার রয়েছে। তারা মুখোশগুলো নিজেরাই ডিজাইন করেন, মুখোশ গুলোতে অবশ্যই স্টিলের ব্যাবহার হয়। মুখোশ ধোয়া হবে না। যদিও কিছুদিন পর পরই নতুন করে মুখোশ বানিয়ে নেয়া হয়। দিন বদলের সাথে সাথে মুখোশ এও পরিবর্তন হচ্ছে। মুখোশ ব্যাবহারেরশ চিন্তাটা একদিন হঠাৎ করেই তাদের মাথায় আসে। সেদিন রিহার্সালে শন ক্রাহান একটা ক্লাউনের মুখোশ পরে এসেছিল। রিহার্সালের সময়ও সে মুখোশটা খুলল না। মুখোশ পরেই পারকাসন বাজাতে লাগল। প্রথম প্রথম সবাই ওর উপর বিরক্তই হচ্ছিল। কিন্তু একটু পরেই সবার চোখে সয়ে গেল। তখন সবাই বিষয়টা উপভোগ করতে লাগল। ওর মুখোশ-পরা মুখের জন্যই রিহার্সালে কেমন একটা গা ছমছমে অনুভূতি হতে লাগল। তখনই সবার মাথায় খেলে গেল চিন্তাটা। মুখোশ ও ড্রেসের ক্ষেত্রে একটি মজার তথ্য দেই , তা হচ্ছে এদের মোট ৫ টি এলবাম বেড় করেছেন এবং প্রতি এলবামের জন্য তাদের ড্রেস এবং মুখোশ চেঞ্জ হয়েছে। সেই যে মুখোশের মধ্যেই স্লিপনট আটকে গেলো , আজ পর্যন্ত মুখোশই স্লিপনট এর অনন্য বৈশিষ্ট্যের একটি। দীর্ঘদিন স্লিপনট সদস্যরা ছিল সকলের অচেনা , মুখোশের আড়ালের মানুষগুলো মানুষের সামনে প্রকাশ্যে এসেছে বেশ কিছু সময় পরে। যদিও মেটাল ব্যান্ড মাশরুম হেড অভিযোগ এনেছিলো মুখোশের কন্সেপট তাদের কাছ থেকে চুড়ি করা কিন্তু স্লিপনট অন্য সব মেটাল ব্যান্ড থেকে আলাদা তার প্রমান তারা বহুবার দিয়ে এসেছে।
অ্যালবাম
১) Slipknot (1999)
২) Iowa (2001)
৩)Vol. 3: (The Subliminal Verses) (2004)
৪) All Hope Is Gone (2008)
5) The Gray Chapter (2014)
৬) We Are Not Your Kind (2019)
অ্যাওয়ার্ড
একবার বেস্ট মেটাল ব্যান্ড হিসেবে গ্র্যামি এওয়ার্ড ২০০৬ সালে। এছাড়াও এই ব্যান্ডটি মনোনীত হয়েছে প্রায় ১০ বার। ফিউজ এওয়ার্ড একবার, কেরাং এওয়ার্ড সাতবার, মেটাল হ্যামার এওয়ার্ড চারবার, গোল্ডেন গডস পাচবার। এবং গিটার রিডার ৩ বার। এছাড়াও দর্শক জরিপ ও বিভিন্ন ট্রাভেল বোদ্ধাদের দেয়া জরিপের ভিত্তিতে স্লিপনট ও তাদের ব্যান্ড মেম্বারদের অবস্থান সেরাদের তালিকাতেই থাকে।
বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তারা কনসার্ট করতে গিয়েছে। বর্তমানে এসব কনসার্ট গুলোর নাম দেয়া হচ্ছে নটফেস্ট (knotFest), স্লিপনট শুধু যে মেটাল জনরার গানই গেয়েছে এমন কিন্তু নয়। সম্পূর্ন ব্যাতিক্রম হিসেবে তারা ধরা দিয়েছে Snuff, vermilion pt2 এর মত গানগুলোতে। অসাধারন ইন্সট্রুমেন্টাল ও কোরি টেইলর এর চমৎকার কন্ঠে স্লিপনট নিজেদের অবস্থান বেশ আগেই পাকা করে রেখেছে মেটাল গানের ইন্ডাস্ট্রিতে।