মহামতি গৌতম বুদ্ধ (আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ৫৬৩ বা ৪৮০ অব্দ অথবা আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ৪৮৩ বা ৪০০ অব্দ) বিশ্বের প্রথম ভাষা সৈনিক। বিশ্বে সর্বপ্রথম তাঁর হাতেই ভাষা আন্দোলনের প্রকৃত সূচনা ঘটে।
তৎকালে দেবভাষা হিসেবে পরিচিত সংস্কৃত ছাড়া অন্য কোনো ভাষায় ধর্মকর্ম করা ছিলো নিষিদ্ধ এবং মহা পাপের কাজ। সেকালে উত্তর ভারতে অঞ্চলভেদে প্রাকৃত সহ বিভিন্ন নামে প্রায় কাছাকাছি প্রকৃতির অনেকগুলো আঞ্চলিক, মৌখিক, কথ্য ভাষা প্রচলিত ছিলো। তন্মধ্যে বহুল প্রচলিত ছিলো প্রাকৃত ও পালি। এ ভাষাগুলোর বর্তমান রূপই হলো বাংলা। আধুনিক গবেষণায় প্রতীয়মান হয়েছে – পালি ও প্রাকৃত ভাষার মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষার উদ্ভব। অর্থাৎ পালি ও প্রাকৃতই হচ্ছে বাংলার আদি রূপ।
সংস্কৃত ছিলো ধর্মগ্রন্থ, ব্রাহ্মণ, রাজকীয় প্রশাসন এবং অভিজাতদের ভাষা। সাধারণ লোকের কাছে সংস্কৃত ছিলো রাজ দরবারের মতো অপ্রবেশ্য। সংস্কৃত ছাড়া অন্যভাষীদের বলা হত – অসূর, রাক্ষস ও ছোটোজাত। তাদের ভাষাকে তুলনা করা হত মুখ থেকে বের হয়ে আসা বিকট দুর্গন্ধের সাথে। অন্যসব গুণাবলি থাকা সত্ত্বেও কেবল ভাষার জন্য প্রাকৃতভাষী জনগণ হয়ে পড়েছিলো অস্পৃশ্য, ঘৃণ্য আর পাপিষ্ঠ।
গৌতম বুদ্ধ সংস্কৃতভাষীর এমন অত্যাচারের বিরুদ্ধে গড়ে তুলেন সমন্বিত ও বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিরোধ। তিনি সংস্কৃতির আগ্রাসন রোধ করে সাধারণ মানুষ ও তাদের মুখের ভাষাকে মর্যাদা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। গৌতম বুদ্ধ ভাষা নির্ধারণের জন্য সমগ্র উত্তর ভারত পরিভ্রমণ করেন। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের অধিবাসীর সর্বজন বোধ্যতা বিবেচনায় তিনি দেবভাষা বাদ দিয়ে অসূরের ভাষায় ধর্মগ্রন্থ রচনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
এ অবস্থায় গৌতমবুদ্ধ বাংলার পূর্বরূপ তথা পালি ভাষায় ধর্মীয়গ্রন্থ রচনা করে পৃথিবীতে প্রথম ভাষা আন্দোলনের সূচনা ঘটান। তিনিই বিশ্বের প্রথম ব্যক্তি, যিনি আদি বাংলায় ধর্মগ্রন্থ রচনা করে সাধারণ মানুষের মুখের ভাষাকে স্বর্গীয় ভাষায় পরিণত করেছেন। তাঁর এই সূচনা বায়ান্নের আন্দোলনে ত্যাগের প্রেরণা হয়ে সার্থকতা দিয়েছে বিজয়ে, ছড়িয়ে দিয়েছে সারা বিশ্বে পৃথিবীর সবচেয়ে সুমিষ্ট ভাষা বাংলাকে।
আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি পৃথিবীর প্রথম ভাষা সৈনিক মহামতি গৌতম বুদ্ধকে।
– শ্রদ্ধা ও স্মরণ
চর্যাপদের উৎসভূমি