বলা হয়ে থাকে, রাতের বার্বাডোস অনেক পর্যটকেরই ঘুম হারাম করে দেয় কয়েকদিনের জন্য! এতটাই সুন্দর বার্বাডোসের রাত। পৃথিবীর একমাত্র দুটো দেশ থেকে সাবমেরিনে চড়ে সাগরতলের প্রবালপ্রাচীর দেখা যায়, যার মধ্যে একটি দেশ হচ্ছে বার্বাডোস। দিনের বেলায় সাগরতলের প্রবালপ্রাচীর আর রাতের বেলায় সাগরতলের জ্বলন্ত চোখওয়ালা মাছ, এই দুইয়ে মিলে সত্যিই অনেক পর্যটকদের বহুল কাঙ্খিত সেই স্বপ্নের জগতে পৌঁছে দিয়েছে। আর সেই সাথে উড়ন্ত মাছের ব্যাপারটা তো রয়েছেই ! চলুন অসাধারণ এই বার্বাডোস দেশটি সম্পর্কে আরো চমৎকার কিছু তথ্য জেনে নেয়া যাক…
ক্যারিবীয় সাগরে পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের একটি দ্বীপ-রাষ্ট্র এই বার্বাডোস। প্রায় তিন শতাব্দী ধরে দেশটি একটি ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল। ১৯৬৬ সালে এটি যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। অ্যাংলিকান গির্জা থেকে শুরু করে জাতীয় খেলা ক্রিকেট পর্যন্ত দেশটির সবকিছুতেই ব্রিটিশ ঐতিহ্যের ছাপ একদম স্পষ্ট। বার্বাডোসের বর্তমান অধিবাসীদের বেশিরভাগই সুগার বা চিনির প্ল্যান্টেশনে কাজ করানোর জন্য নিয়ে আসা আফ্রিকান দাসদের বংশধর ! দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত ব্রিজটাউন দেশটির বৃহত্তম শহর, প্রধান বন্দর ও রাজধানী। আঁখ তাদের অর্থনীতির প্রধান পণ্য।
বার্বাডোস সম্পর্কে কিছু চমকপ্রদ তথ্য
১. বার্বাডোস একমাত্র সাদা বালুর দেশ, যেখান থেকে পর্যটকরা সাবমেরিনে চড়ে সমুদ্রের তলদেশে গিয়ে নিজচোখে Coral Reef বা প্রবাল প্রাচীর দেখতে পারেন !
২. দেশটি প্রতিবছর সারাবিশ্বে প্রায় ৫৭ মিলিয়ন ডলারের রাম (একপ্রকারের মদ) রপ্তানি করে, যার দ্বারা ভারতীয়দের সিংহভাগ মদের চাহিদা পূরণ হয় !
৩. পুরো দেশটিতে হোটেলের সংখ্যা মাত্র ২০টি !
৪. উড়ন্ত মাছের দেশ বার্বাডোস। পৃথিবীতে উড়ন্ত মাছের মোট ১৩টি প্রজাতি বিদ্যমান রয়েছে। যারমধ্যে একটির (Hirundichthys affinis) দেখা পাওয়া যাবে বার্বাডোসে। ডানাবিশিষ্ট এই মাছগুলো এতটাই পাতলা যে, এরা ঘন্টায় ৭৫ কিলোমিটার বেগে প্রায় ৪৫ সেকেন্ড পর্যন্ত উড়তে পারে। অনেকের কাছেই এটা রুপকথার মত মনে হতে পারে। যদি এই রুপকথার চাক্ষুস সাক্ষী হতে চান, তাহলে চলে আসুন বার্বাডোসে !
৫. এটাই পৃথিবীর একমাত্র দেশ, যাদের দখলে ১৭টি ব্রিটিশ আয়রন ক্যানন বা লোহার কামান রয়েছে !
৬. ব্রিটিশরা ১৬২৫ সালে যখন এ দ্বীপটিতে এসে বসবাস শুরু করে, তখন এটি ছিলো বন্য শূকরে পরিপূর্ণ বসবাসের অনুপযোগী একটি জঙ্গল মাত্র।
৭. ১৮৪৫ সাল পর্যন্ত বারবাডোস ছিলো পৃথিবীর একমাত্র স্বাস্থ্যবান দেশ, যেখানে বছরে প্রতি ৬৬ জনে মাত্র একজন মারা যেত।
বার্বাডোসের অদ্ভুত খাবার
১. উড়ন্ত মাছ (Flying Fish): ফ্লাইং ফিশ বা উড়ন্ত মাছের কথা আগেই বলেছি। বার্বাডোসে এটি প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ব্যবহৃত হয়। শুধুমাত্র অত্যন্ত নরম ও থলথলে এ মাছটি খেতেই প্রতিবছর ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকা থেকে অসংখ্য পর্যটক এ দেশে আসেন। পেঁয়াজ, মরিচ, ক্যাপসিকাম ও রসুনের মিশ্রণে এ মাছটি কারি বানিয়ে স্টিমড রাইসের সাথে পরিবেশন করা হয়।
২. সামুদ্রিক ডিম (Sea Egg/Sea Urchin): সজারুর মত দেখতে সমুদ্রের নিচে জন্মানো একপ্রকারের জীবন্ত উদ্ভিদ এই সী এগ/ সী আরচিন। ডিমের মত খোলস বিশিষ্ট এই বস্তুটি মাঝখানে ফাটিয়ে ভেতরের ক্রিমের মত নরম অংশটি কাঁচা খাওয়া হয়। এটি অত্যন্ত দামী ও বিলাসবহুল একটি খাবার।
৩. পেয়ারা দিয়ে বানানো পনির (Guava Cheese): আরেকটি অদ্ভুত খাবার এই গুয়াভা চিজ। আমরা সচরাচর দুধ থেকে উৎপন্ন পনির খাই। কিন্তু বার্বাডোসই পৃথিবীর প্রথম দেশ, যারা পেয়ারা থেকে পনির উৎপন্ন করেছে। এবং এখন পর্যন্ত এরাই পৃথিবীর একমাত্র গুয়াভা চিজ উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে খ্যাতপ্রাপ্ত।