২০১৪ সালে নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামে ‘হালাল পতিতালয়’ নামে একটি পতিতালয় চালু করা হয়েছিলো, যারা দাবী করে এ পতিতালয়টি নাকি মুসলিম খদ্দেরদের জন্য ধর্মীয় অনুশাসনের সীমারেখার মধ্যে রেখে পরিচালিত হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ একে ‘হালাল যৌনালয়’ বলে আখ্যা দিয়েছিলো। সেসময় বিশ্বব্যাপী বেশ আলোড়নও ফেলে অদ্ভুত এ পতিতালয়টি ! নেদারল্যান্ডসের রেড লাইট এলাকায় ‘হট ক্রিসেন্ট’ নামের একটি বার তাদের মুসলিম খদ্দেরদের জন্য এ ব্যবস্থাটির উদ্ভাবন ঘটিয়েছিলেন। হালালভাবে নেদারল্যান্ডসের যৌনবৃত্তি চরিতার্থ করার উপায় খুঁজে বের করতে তিনজন আধুনিকমনা মুসলিম ধর্মীয়নেতার পরামর্শও নিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছিলেন বারটির মালিক জনাথন সুইক।
যে কারণে তারা এর নাম দিয়েছেন হালাল পতিতালয়
- সেখানকার পতিতারা মাদক সেবন করেনা। এবং তাদেরকে মাদক সেবনে বাধ্যও করা হবেনা
- ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী তারা নাকি দিনে পাঁচবার নামাজও পড়বে।
- খদ্দেরদেরকেও তাদের সঙ্গে ইসলাম সম্মত ভাবেই যৌনসম্পর্ক স্থাপন করতে হবে।
কিন্তু বিয়ে ছাড়া নারী-পুরুষের শারীরিক সম্পর্ক তো ইসলাম সম্মত নয় ! তাহলে তাদের এই পতিতালয়ের কার্য পরিচালনার বিষয়টি হালাল হবে কিভাবে? হোটেল ব্যবসায়ী বুদ্ধিমান জনাথন নিজের মত করে এরও একটা সমাধান বের করে নিয়েছিলেন। ইসলামের শিয়া সম্প্রদায়ের মাঝে প্রাপ্তবয়স্ক যুগলের প্রণোদনার জন্য ‘মুতা বিয়ে’ নামের একধরনের অস্থায়ী বিয়ে প্রচলিত আছে। শিয়া সমাজে এধরনের চুক্তিভিত্তিক বিয়ে স্বীকৃত এবং ধর্মীয় আইনসিদ্ধ। হট ক্রিসেন্টের হালাল পতিতালয়ে যৌনসঙ্গী সরবরাহের ক্ষেত্রে মুতা বিয়ের (বিনোদনের জন্য বিয়ে) সেই নিয়মটিই অনুসরণ করা হয়েছে।
‘মুতা বিয়ে’র ক্ষেত্রে যুগলজীবনের সময়সীমা বিয়ের আগেই ঠিক করা হয় এবং সময় পার হওয়ার পর আপনা থেকেই বিয়ের সমাপ্তি ঘটে। তবে ইচ্ছানুযায়ী পুনরায় বিয়ে করা যায় এবং অর্থ প্রদানের বিষয়টিও ঘটতে পারে, যেমনটি একজন স্বামী তার স্ত্রীকে দেনমোহর হিসেবে দিয়ে থাকেন।
এই হালাল পতিতালয় আসলে কতটা হালাল ?
প্রশ্ন হচ্ছে, হালাল পতিতালয় আসলে কতটা হালাল বা ইসলাম সম্মত কিনা। সুন্নি অধ্যুষিত সৌদি আরবের ইসলাম গবেষকগণ বরাবরই এই মুতা বিবাহের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে এসেছেন। কিন্তু শিয়া অধ্যুষিত ইরানের নেতারা মুতা বিবাহের পক্ষে থাকলেও একজন পেশাদার যৌনকর্মীকে বিবাহ করাটা নিষিদ্ধ বলে দাবী করেন এবং এই ধরনের মহিলাদের বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হবার আগে অবশ্যই তওবা করে ‘ইদ্দা’ করতে হবে বলে দাবী করেন।
ইদ্দা হচ্ছে একটি ইসলামিক প্রথা, যেটা ডিভোর্সি কিংবা বিধবা মহিলাদের পালন করতে হয়। এই প্রথায় একজন মহিলাকে ডিভোর্স হবার কিংবা স্বামী মারা যাবার পর, নতুন কোনো পুরুষকে বিয়ে করার আগে একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে অপেক্ষা করতে হবে। ডিভোর্সি মহিলাদের ক্ষেত্রে ইদ্দা’র সময়সীমা ৩ মাস, অর্থাৎ ৯০ দিন। আবার বিধবা মহিলাদের স্বামী মারা যাবার পর ৪ মাস ১০ দিন ইদ্দা পালন করতে হয়। তবে ক্ষেত্রবিশেষে এই সময়সীমা বেশিও হতে পারে। যেমন, প্রেগন্যান্ট মহিলাদের ক্ষেত্রে শিশু জন্মদানের পর থেকে ইদ্দা পালনের সময়সীমা শুরু হয়।
ইদ্দা বিষয়ক প্রশ্নের জবাবে সেই ‘হালাল পতিতালয়’এর মালিক জনাথন বলেন, মুসলিমরা যখন বাজার থেকে মাংস কেনে তখন তারা সেটা হালাল ভেবে কেনে, কারণ দোকানী দাবী করে যে মাংসটা হালাল। যদিও মুসলিম ক্রেতারা কখনোই অনুসন্ধান করেনা মাংস কাটার পূর্বে পশুটিকে ইসলামি শরীয়াহ্ মোতাবেক জবাই করা হয়েছে কিনা। তাহলে আমার হালাল পতিতালয় নিয়ে কেনো এত প্রশ্ন? আমি বলেছি এটা হালাল, তোমাদের উচিৎ আমার দাবী চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করে নেয়া এবং জীবনটা উপভোগ করা !