নানান কারণে বিভিন্ন সময়ে কিছু হত্যাকান্ড চাঞ্চল্যকর অবস্থা সৃষ্টি করে। শারমিন রীমা হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ছিলো এরকমই এক হত্যাকাণ্ড, যা পুরো দেশটাকে নাড়িয়ে দিয়েছিলো ! রীমা হত্যা ঘটনায় শোকে আর ঘৃণায় স্তব্ধ হয়ে গেছিলো পুরো জাতি। কে এই রীমা? কেনো তাকে হত্যা করা হলো? কি হয়েছিলো তার সাথে? চলুন অল্প কথায় বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক…
১৯৮৯ সালের ৮ই এপ্রিল। খ্যাতনামা এক ডাক্তার দম্পতির ব্যবসায়ী ছেলে মুনির হোসেন তার সদ্য বিবাহিত স্ত্রী শারমিন রীমাকে নৃশংস ভাবে হত্যা করে। নিহত রীমা ছিলেন শহীদ সাংবাদিক নিজামউদ্দিন আহমেদের (১৯৭১-এ ইত্তেফাকে কর্মরত) ছোটো মেয়ে।
ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল এই রীমা হত্যা মামলাটি। সাংবাদিক নিজাম উদ্দিন আহমেদের পরিবারে একাত্তর থেকে শোকগাথা শুরু। প্রথমে পাকিস্তানি হানাদারদের হাতে শহীদ হন পরিবারকর্তা নিজাম উদ্দিন। এরপর স্বামীর পরকীয়ার বলি হন শারমিন রীমা…
১৯৮৯ সালের ৮ এপ্রিল শুক্রবার ভোর রাতে। বিয়ের বছর না ঘুরতেই খুন হন তিনি। বিয়ে হয়েছিল সম্ভ্রান্ত ডাক্তার পরিবারে। রীমা ছিল পরিবারের ছোট মেয়ে। অনেক আদর-ভালোবাসায় বড় হয়েছিলেন। ডাক্তার পরিবারে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল তার সুখ হবে ভেবে। কিন্তু রীমা সুখী হতে পারেননি। স্বামীই তাকে দেয়নি সুখী হতে।
১৯৮৮ সালের ১১ ডিসেম্বর রীমার বিয়ে হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজের সাবেক প্রিন্সিপাল এবং ডাক্তারদের সংগঠন বিএমএর সাবেক সভাপতি ডা. আবুল কাশেম এবং ডা. মেহেরুন্নেছার ছেলে মুনির হোসেন সুরুজের সঙ্গে। রীমা তখন ছিলেন ধানমণ্ডির কিন্ডার গার্টেনের শিক্ষিকা। ডাক্তার দম্পতি পুত্র মুনির সৎ চরিত্রবান জেনে রীমাকে তার বিধবা মা মুনিরের সঙ্গে বিয়ে দেন। যাতে তার মেয়ে দাম্পত্য জীবনে সুখী হয়। কিন্তু এটা ছিল তাদের ভুল ধারণা। মুনির ছোটবেলা থেকেই ছিল চরিত্রহীন, লম্পট ধরনের। সচ্ছল পরিবারের সন্তান হিসেবে টাকা-পয়সার কোনো অভাব না থাকায় খুব ছোটবেলা থেকেই সে হয়ে ওঠে বেপরোয়া, মদ্যপ। নারী-সঙ্গ তার জীবনে ছোটবেলা থেকেই নিত্য সঙ্গী ছিল। অবস্থার পরিবর্তন আর ছেলেকে কুপথ থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য তার বিয়ের ব্যবস্থা করেন সুন্দরী ভদ্র তরুণী রীমার সঙ্গে। কিন্তু বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই মুনির তার পুরনো কার্যকলাপ শুরু করে, গভীর রাতে মদ্যপ অবস্থায় বাসায় ফেরে, কথায় কথায় রীমার ওপর চালায় অকথ্য শারীরিক নির্যাতন। এরই মধ্যে মুনিরের পরিচয় হয় মধ্যবয়সী মহিলা হোসনে আরা খুকুর সঙ্গে। পঞ্চাশের কাছাকাছি খুকু ছিলেন চট্টগ্রাম পোর্টের ইন্সপেক্টর আবু জাফরের স্ত্রী। আবু জাফর প্যারালাইজড হয়ে ঢাকায় এসে ভর্তি হন একটি ক্লিনিকে। অসুস্থ স্বামীকে চিকিৎসা করাতে এসে ক্লিনিকের মালিকের ছেলে মুনিরের সঙ্গে পরিচয়, টুকটাক আলাপ, চিকিৎসার ব্যাপারে সহায়-সহায়তা ইত্যাকার আলাপের এক পর্যায়ে খুকুর সঙ্গে মুনিরের ভাব জমে যায়। উভয়ে উভয়কে কামনা করে। শুরু হয় স্বামীকে হাসপাতালে রেখে খুকুর পরকীয়া। এক পর্যায়ে ওরা ঢাকা ছেড়ে চট্টগ্রাম ও বিভিন্ন জেলায় ঘুরে বেড়ায়। খুকুর সঙ্গে গড়ে ওঠে দৈহিক সম্পর্ক। স্বামীর খোঁজখবর জানতে চাইলে নির্যাতনের শিকার হন রীমা। রীমার ওপর মধ্যযুগীয় নির্যাতন করতে থাকে মুনির। মুনির খুকুর সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে মিলিত হতেন। আরও কাছে পেতে লালমাটিয়া এলাকায় বাসা ভাড়া পর্যন্ত করেন খুকুর জন্য। সেখানেই তারা মিলিত হতেন নিয়মিত। খুকু ছাড়াও মুনিরের সঙ্গে বয়স্ক সব পতিতাদের নিয়মিত সম্পর্ক ছিল। সব জেনেশুনে মুখ বুজে সহ্য করতে থাকেন রীমা।
বিয়ের মাত্র তিন মাসের মাথায় স্বামীর সাথে চট্টগ্রাম বেড়াতে গিয়ে খুন হন শারমিন রীমা। ৭ই এপ্রিল ঢাকা থেকে রওনা হয়ে যাওয়ার দুদিন পরে ফেরার পথে স্বামী মুনির হোসেন তাকে হত্যা করে নারায়ণগঞ্জের মিজমিজি গ্রামের কাছে ফেলে রেখে আসে।
মনির হোসেন গ্রেফতার হওয়ার পর ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেটের কাছে ১৯৮৯ সালের ২৭ এপ্রিল যে জবানবন্দী দেয় তার পূর্ণ বিবরণ উল্লেখ করছি –
“আমার নাম মনির হোসেন, পিতা-ডাঃ আবুল কাশেম, বাড়ি নং-৫, রোড নং-৫, ধানমন্ডি, ঢাকা-৫, বয়স ৩০ বছর। আপনার জিজ্ঞাসাবাদে জানাইতেছি যে, আমি আমেরিকায় উইসকনসিন ইউনিভার্সিটিতে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ডিগ্রী নেই। তারপর আমি বাংলাদেশে ফিরিয়া আসি। বিদেশ থেকে আসার পর ১৯৮১ সালের মে মাসের দিকে আমি ব্যবসা শুরু করি। প্রথমে আমি বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ডাইরেক্ট সাপ্লাই এন্ড ইন্সপেকশন ঢাকাতে সরবরাহ করি। ১৯৮৪ সনে আমি একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরী চালু করি। ফ্যাক্টরির নাম ন্যাশনাল এ্যাপারেল কোং লিঃ এবং সরবরাহ কোং নামে ন্যাশনাল ট্রেডিং হাউজ, মোস্তাক সাহেব ন্যাশনাল ট্রেডিং হাউজের ম্যানেজার ছিল, উনাকে আমি বিশ্বাস করিতাম। উনি আমার সামান্য কিছু জানিত। মোস্তাক আমার নিকট খুব বিশ্বাসী ছিল। আমি উনার উপর সমস্ত ব্যাপারে নির্ভরশীল ছিলাম।
১৯৮৬ সালে আমি খুকুর সাথে ভালোবাসায় পরিণত হই। আমার গুলশানের নির্মীয়মান বাড়িতে খুকুর সাথে আমার প্রায়ই সাক্ষাৎ হতো। আমার নির্দেশে মোস্তাক খুকুর জন্য লালমাটিয়াতে একটি বাড়ি ভাড়া করে। সেটা ছিল জুন মাস ১৯৮৭। গুলশানের বাড়িতে দু’এক রাত খুকুর সাথে রাত্রি যাপন করিয়াছি। লালমাটিয়ার বাসায় খুকু আমার সহিত মাঝে মধ্যে রাত্রি যাপন করিত। আমার বিয়ের পূর্ব পর্যন্ত অর্থ্যাৎ ডিসেম্বর ১৯৮৮ পর্যন্ত খুকুর সাথে আমার ভালবাসার সূত্রপাত সুন্দরভাবে অতিবাহিত হইতেছিল। ১৯৮৮ সলের নভেম্বর মাস হইতে আমার আব্বা-আম্মা আমাকে বিবাহ করাইতে ইচ্ছুক হয়। ডিসেম্বর ১৯৮৮-তে রীমার আম্মার অনুমতিক্রমে আমার সহিত রীমার বিবাহ হয়। প্রথম দিকে আমাদের দাম্পত্য জীবন সুন্দরভাবে কাটিতেছিল। কিন্তু ১ মাস পরে অর্থাৎ বিবাহের ১ মাস পর আমি বুঝিতে পারি যে, রীমা আমার পছন্দমত স্ত্রী নয়। তারপর আমি আমার খুকুর সাথে লালমাটিয়াতে ঘন ঘন দেখা করি। কোন এক রাত্রিতে রীমা আমার ধানমন্ডির বাসায় আমার শার্টের কলারে লিপস্টিকের চিহ্ন পায়। সে আমার সাথে এটা নিয়ে চিল্লাচিল্লি করে। ফলে রীমার পাছায় আমি তিনটা লাথি দেই। সেই রাত্রিতে আমি রীমাকে ছাড়িয়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই।
এ ব্যাপারে আমি মোস্তাক সাহেবকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ এবং নিয়মকানুন জানার জন্য ঢাকা কোর্টে পাঠাই। আমার পরিবারের এবং রীমার পরিবারের বাড়াবাড়ির জন্য আপাতত রীমাকে না ছাড়িয়া দেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেই। অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমি এই সিদ্ধান্ত নেই, কিন্তু এই সিন্ধান্তে আমি খুশি ছিলাম না। ১৯৮৯ সালের এপ্রিল মাসে সকালে আমি রীমাকে খুশী রাখার জন্য বলি যে খুকুকে আমি আমার মত হইতে ছাড়িয়া দিব। তাহার সাথে আমি আর সম্পর্ক করিব না। আমি মোস্তাকের দ্বারা খুকুর নিকট ঐদিনই টেলিফোন করাই। ঐ দিন বিকেল পাঁচটা তিরিশ মিনিটের সময় মোস্তাক খুকুকে নিয়া আমার গার্মেন্টেস ফ্যাক্টরীতে আসে। সেখানে রীমা খুকুকে বাধা দে। যাহাতে খুকু আমার সাথে আর মেলামেশা না করে। খুকু আমার থেকে এ ব্যাপারে জানিতে চায়। আমি তখন নিশ্চুপ অবস্থায় থাকি। তখন খুকু আমাকে চিটার বলে এবং কাঁদিতে কাঁদিতে খুকু চলিয়া যায়। যাবার সময় খুকু রীমাকে বলে যে, আমি তোমাকে উচিত শিক্ষা দিব এবং দেখিব কে জিতে?
খুকুর এই সামান্য দৃশ্যে আমার খুকুর প্রতি আরো বেশী ভালোবাসার চেতনা দেয়। তারপর অর্থ্যাৎ ঐ রাত্রিতে রীমার বাড়িতে ইস্কাটনে রাত্রি যাপন করি। পরের দিন সকালে ১৯৮৯ সালের ৪ এপ্রিল রীমা এবং আমি মৌচাকের নিকটে যাই। সেখান হইতে রীমা দুইটা ফটো ফ্রেম কিনে এবং তাহার দুইটা ফটো ফ্রেমে লাগায়। একটি ন্যাশনাল ট্রেডিং হাউজে রাখি, অপরটি আমার শ্যামলী গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে রাখি। তারপর ধানমন্ডির বাড়িতে আমরা ফেরত আসি। দুপুর আড়াইটার সময় আমরা দুইজনে খাইতে বসি। আমি খাই কিন্তু রীমা খায় নাই। ঐদিন সাড়ে তিনটায় রীমার বাড়ীতে ফেরত যাই এবং আমরা দু’জন চিটাগাং যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই হানিমুনের জন্য। আমার এবং রীমার পাসপোর্ট আমার শাশুড়ীর কাছে দেই। সন্ধ্যা সাতটা তিরিশ মিনিটের সময় চিটাগাং আমার পাজেরো জীপ নিয়া রওয়ানা দেই। তারপর দিন সকালে আমরা চিটাগাং-এ হোটেল সৈকত-এ উঠি।
১৯৮৯ সালের ৮ এপ্রিল তারিখে সকাল বেলায় রীমা যখন তাহার বোনের সাথে টেলিফোনে কথা বলিতেছিল সেই সময় রীমার থেকে আমি ফোন নিয়ে তাহার বোনকে বলি আমরা এই রাত্রিতে ঢাকায় ফিরিব এবং তোমাদের বাসায় রাত্রিযাপন করিব। ঐ রাত্রিতে ৭টা ৩০ মিনিটের সময় চিটাগাং হইতে ঢাকার পথে রওনা হই। আসার পথে আমি রীমাকে খুন করার কথা চিন্তা করি। আমি রীমাকে গাড়ি থেকে ফেলে দেওয়ার চান্স খুঁজছিলাম। তাহা সম্ভব হয়ে ওঠে নাই। পরে আমি চান্স পাই। মুক্তি সরণীর নিকট বিশ্বরোডে মিজমিজি গ্রামে যাওয়ার কাঁচা রাস্তার মোড়ে (মৌচাক সরণী) আমার গাড়ি খানা থামিয়ে ফেলি। তখন রাত্রি সোয়া দুইটা বাজে। তারিখ ৯-৪-১৯৮৯।
আমি গাড়িখানার স্টার্ট বন্ধ করি। গাড়ীতে রীমাকে খালি কোকাকোলার বোতল দিয়ে রীমার ঘাড়ে ও মাথায় আঘাত করি। তখন সে একটু অচেতন অবস্থায় ছিল। তখন আমি তাকে চুলে ধরিয়া গাড়ির ড্রাইভিং সিট এর নিকট থেকে বাহির করি। তারপর আমি তাহাকে কয়েকবার মাটিতে ফেলিয়া বোতল দিয়া আঘাত করি। তারপর আমার গাড়িতে থাকা ছুড়ি দিয়া তাহাকে পেটে আঘাত করি। ছুড়ি দিয়া তাহাকে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করি। ইহার পাশে একটা খাল ছিল। আমি তাহাকে ঐ খালে ফেলিয়া দেই। তারপর আমি গাড়িখানা মেইন রোডে উঠাই। মেইন রোড দিয়ে কিছুদূর এসে গাড়িখানা থামাই। নিকটস্থ ডোবায় রক্তমাখা আমার শরীর ধুইয়া ফেলি। রক্তমাখা কাপড় চোপড় আমি উক্ত ডোবাতে ফেলে দেই। শুধুমাত্র রক্তমাখা একটি হাতাওয়ালা গেঞ্জি গাড়িতে রাখিয়া দেই।
তখন আমি একটি লঙ্গী ও একটি গেঞ্জি পরিধান করিয়া ডোবার থেকে কিছুদূরে যাই। অর্থাৎ মেইন রোড দিয়া গাড়ি চালাইয়া ডোবার থেকে কিছুদূরে যাই। গাড়িখানা চলন্ত অবস্থায় রক্তমাখা ছুরিখানা গাড়ির জানালা দিয়ে সজোরে নিক্ষেপ করি। তারপর গাড়িখানা সায়দাবাদ বাস টার্মিনালের উল্টো দিকে গাড়িখানা তালাবদ্ধ করিয়া রাখি। তারপর কিছু দূর হাটিয়া একটা রিকশা নেই। ধুপখোলা মাঠ পর্যন্ত রিকশায় যাই। সেখানে আমার এক বন্ধু দীন মোহাম্মদ থাকে। তাহার বাড়ির সামনে এসে আমি দীন দীন করে ডাকি। কিন্তু কোনো উত্তর না পেয়ে উক্ত স্থানে একটি মহিলা সুইপার দেখি এবং তাহাকে আমি তাহার বাড়ীতে রাত কাটানোর জন্য আবেদন করি। সুইপার তাহার ছেলে নিয়া রাস্তায় কাজ করিতেছিল। তারপর তাহার ছেলে এবং মহিলা সুইপার আমাকে সুইপার কলোনীতে নিয়ে যায়। সেখানে আমি কিছুক্ষণ বিশ্রাম করি। আমি মহিলা সুইপারের নিকট আমার স্ত্রীকে হত্যা করিয়াছি তাহা তাহার নিকট ব্যক্ত করি। তারপর মহিলা সুইপার আমাকে অন্যত্র চলিয়া যাইতে বলে। যাওয়ার পূর্বে আমি সুইপার মহিলার নিকট সমস্ত চাবি দিয়া অন্যত্র চলিয়া যাই।
ভোর পাঁচটা হইবে। বাহির হইয়া এক আব্দুল জলিলের সাথে আমার দেখা হয়। সে আমাকে হোটেল ‘বদরে’ নিয়ে যায়। সেখানে হোটেলের দারোয়ান আলী হোসেন গেট খুলে আমাকে ২০৩ নং রুমে নিয়ে যায়। আমাকে আলী হোসেন পরিচয় জিজ্ঞেস করে। আমি বললাম আমি ডাঃ মেহেরুন্নেসার ছেলে। তারপর সে বলে যে, আপনার বাড়ি ছেড়ে হোটেল বদরে এসেছেন কেন? তাহাদের কথার জবাবে আমি বলি যে, আমি আমার স্ত্রীকে হত্যা করিয়াছি। সেই জন্য এখানে আসিয়াছি। আমি জলিলকে পড়ে দেখা করিতে বলি। সে সকাল ৮টা ৩০ মিনিটের সময় আমার সাথে সাক্ষাৎ করে। আমি তাকে একটি শার্ট এবং একটি লুঙ্গী এবং এক প্যাকেট সিগারেট কিনার জন্য ২০০ টাকা দেই। সকাল ১০টা ৩০ মিনিটের সময় উহা কিনিয়া নিয়া আসে। আমি দুপুরে নিজেকে আত্মহত্যা করার জন্য বিছানার চাদর গলায় বেঁধে উপরে ফ্যানের সাথে ফাঁস দেই। আমার রুমের জানালা দিয়ে বাহিরের লোকেরা আমার এই অবস্থা দেখে আমার রুমের দরজা ভেঙ্গে লোকজন ভিতরে প্রবেশ করে আমাকে ফাঁসি হইতে উদ্ধার করে। আমাকে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে আমি আমার মায়ের সাথে ফোনে আলাপ করি এবং একজন আইনজীবী নিয়া হাসপাতালে আসিতে বলি।
কিছুক্ষণ পর আমার মা আসে। তারপর পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করে। পুলিশ যে ছুরিখানা উদ্ধার করিয়াছে এটা আমাকে পুলিশ দেখাইয়াছে। এই ছুরিই হত্যাকান্ডের ছুরি। রক্তমাখা আমার পরনের প্যান্ট থানা পুলিশ উদ্ধার করিয়া আমাকে দেখাইয়াছে। এটাই ছিল হত্যার সময় পরনে থাকা প্যান্ট। খুকুকে পরিচয় করাইয়া দেয় সেলিম সাহেব। সেলিম সাহেব আমার সাথে যে খুকুর মেলামেশা হইয়াছে তাহা সেলিম সাহেব জানিত না। দীন মোহাম্মদের সাথে খুকুর পরিচয় ছিল। এই আমার জবানবন্দী।”
জেরা, শুনানীর পর আদালত মৃত্যুদন্ড দেয় মুনির ও খুকুকে। এই চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার রায় ঘোষিত হয় ১৯৯০ সালের ২১ মে। মোট ৬৬ জন সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়। হাইকোর্ট মুনিরের ফাঁসির আদেশ অব্যাহত রাখে। খুকুকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়। সুপ্রিম কোর্টে আপীল করা হয়। ১৯৯৩ সালের মাঝামাঝিতে মুনিরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। এর আগে মুনিরের প্রাণ রক্ষার জন্য প্রেসিডেন্টের কাছে পুনঃআবেদন করা হলেও প্রেসিডেন্ট তা খারিজ করে দেন।
তখনকার দিনে রীমা হত্যা থেকে শুরু করে মুনিরের ফাঁসির ঘটনা ছিলো পুরো দেশের আলোচিত ঘটনা। জানা যায়, অনেকেই তখন ঘৃণায় তাদের সন্তানদের নাম মুনির বা খুকি রাখতেন না। অনেকেই তাদের আগের নাম মুনির ও খুকি পরিবর্তন করে ফেলে বলেও তৎকালীন পত্রপত্রিকা ঘেটে জানা যায় !