প্রাণের শহর ঢাকা, জাদুর শহর ঢাকা। বাংলার ৪০০ বছরের রাজধানী ও হাজার বছরের বাণিজ্যকেন্দ্র বলে খ্যাত ছিলো এই ঢাকা। আর আজকের ঢাকা শহরটা পরিচিত বাংলাদেশের রাজধানী ও বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ শহর এবং বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবে। আমাদের এই ব্যস্ততাময় ঢাকাকে বলা হয় বাংলাদেশের লাইফলাইন। ঢাকা অচল মানে একরকম পুরো বাংলাদেশটাই অচল। তাই একজন নাগরিক হিসেবে ঢাকাকে বাঁচানোর কথা ভাবা আমার আপনার অবশ্য কর্তব্য !
দিনকে দিন ঢাকা আরো বিরক্তিকর হয়ে উঠছে মানুষের কাছে। যেখানে অন্য জেলার মানুষরা একসময় লাল-নীল বাতি আর উঁচু দালানকোঠায় ঘেরা আধুনিক শহর দেখতে ঢাকা আসত, সেই মানুষরাই এখন একবার ঢাকায় এসে দ্বিতীয়বার আর আসতে চায় না। বিদেশি পর্যটকরা ঢাকার ভাঙাচোরা হিজিবিজি পথঘাট আর জায়গা বেজায়গায় স্তুপ করা আবর্জনার ছবি তুলে নিয়ে যায়। দেখার কেউ নেই ! অথচ শহরটা আমাদের। সবার আগে আমাদেরই উচিত এই শহরের দেখাশোনা করা, শহরটাকে পরিচ্ছন্ন রাখতে মাসে অন্তত একটা দিন হাতে নিয়ে উঠেপরে নামা।
একজন নাগরিক হিসেবে আমার প্রিয় শহরটাকে নিয়ে আমি এমনই কিছু ভাবছি। ভাবা উচিত আপনারও। ‘ঢাকা’ রক্ষায় কার্যকরী ভূমিকা রাখবে, এমন কিছু ভাবনার কথা বলছি আমার ব্যক্তিগত মতামত থেকে…
ঢাকা বাঁচাও : একটি নাগরিক ভাবনা
- ঢাকার প্রবেশপথ বাড়ানো উচিত। এতে ঢাকার ৩ প্রবেশ পথের উপর চাপ কমবে। ফলে যানজটও অনেকাংশে কমে যাবে।
- ঢাকায় বোটানিক্যাল গার্ডেন, বলধা গার্ডেন এর মত আরো কিছু উদ্যান বানানো উচিত। টিভি, কম্পিউটার, ফেসবুকে বাড়তি সময় না দিয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এসব জায়গায় সুন্দর বিকেল কাটানোর ব্যাপারে শহরবাসীদের উৎসাহিত করা উচিত। এতে শহরের অক্সিজেন ঘাটতি পূরণ হওয়ার পাশাপাশি নগরবাসীর ঘুরাঘুরি ও মানসিক প্রশান্তি লাভ সম্ভব হবে। শিশুদের মানসিক বিকাশ ঘটবে।
- ঢাকার অফিস পাড়াগুলোতে যাদের অস্থায়ী কার্যালয় রয়েছে, তাদের কার্যালয়গুলো তুলনামূলক ফাঁকা এলাকায় সরিয়ে নেয়া উচিত।
- ঢাকাকে বিকেন্দ্রিকরণের অংশ হিসেবে ঢাকার বাইরে বা পাশ্ববর্তী এলাকাগুলোয় “প্রক্সি টাউন” বানানো উচিত !
- ঢাকায় আরো খাল ও রিজার্ভার বানানো উচিত। বন্যা প্রতিরোধ ও অগ্নি দুর্ঘটনা প্রতিরোধে এসব খাল ও রিজার্ভারের পানি ব্যবহার করা যাবে।
- ঢাকার বাইরে কুমিল্লার মত কিছু গুরুত্বপূর্ণ জেলায় বিমানবন্দর বানালে ঢাকা বিমানবন্দরের উপর অনেকাংশে চাপ কমবে। প্রবাসীরাও আরামে বাড়ি যেতে পারবে। এই বাড়তি চাপটা কমার পাশাপাশি ঢাকা শহরের যানজটও কিছুটা কমবে। (এ সম্পর্কিত একটি লেখা পড়ুন- যেসব কারণে কুমিল্লায় বিমানবন্দর বানানো উচিত)
- ঢাকার বুড়িগঙ্গাকে ‘টেমস নদী’ বানানো এখন সময়ের দাবী। যদিও তা বেশ কঠিন এবং সময়সাপেক্ষ কাজ। তবে সরকার সহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবক সংস্থাগুলো চাইলে মাত্র একবছরের মাঝেই এটা বাস্তব করা সম্ভব।
- ঢাকাকে বিকেন্দ্রীকরণের অংশ হিসেবে বিভিন্ন ধরণের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যস্থান ঢাকার ভেতর নির্মাণ করতে না দেয়াটাই উচিত।
- ঢাকা শহর ও নগরবাসীর নিরাপত্তায় “সিটিজেন আর্মি” নামে একটি বিশেষ বাহিনী গঠন করা যেতে পারে। এরা ২৪ ঘন্টা শহরের রাস্তায় ‘একটিভ’ থাকবে। এতে করে শহরের চুরি, ছিনতাই, রাহজানি, ডাকাতি, ইভটিজিং, ধর্ষণ ইত্যাদি কমবে।
- ঢাকা শহরের সব ফিটনেসবিহীন গাড়ি অবিলম্বে রাস্তা থেকে তুলে দেয়া উচিত। ড্রাইভার ব্রেক মারবে যাত্রাবাড়ী মোড়ে, গাড়ি গিয়ে থামবে সায়দাবাদ। এরকম পরিবহণ ব্যবস্থা নিয়ে দুর্ঘটনা তো থামানো যাবেই না, বরং মাঝখান দিয়ে জনগণ বাড়তি ভোগান্তির শিকার হবে।
- ট্রাফিক আইন যথাযথভাবে মানতে বাধ্য করা উচিত। ‘যারা ট্রাফিক আইন লংঘন করবে, তাদের শাস্তি থেকে রেহাই দেয়া যাবেনা’ – আইন শৃংখলা বাহিনীর মধ্যে এমন মনোভাব থাকতে হবে।
পরিশেষে বলবো, ঢাকা আমার শহর, আপনার শহর। এই শহর ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া মানে আপনি-আমিই ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া। তাই এখনই ঢাকার ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে হবে। অন্যথায় এই শহর একদিন আপনার কাছে বিষতুল্য হয়ে যাবে।
‘ঢাকা বাঁচাও’ নিয়ে ছারপোকা ম্যাগাজিনের বিশেষ এই সিরিজ। ঢাকা বাঁচাতে আপনার পরিকল্পনাগুলো কমেন্টে লিখে জানাতে পারেন আমাদেরকে। আপনার লেখাগুলো আমরা তুলে ধরবো আমাদের “ঢাকা বাঁচাও” এর বিশেষ প্রতিবেদনে !