ইসলাম প্রচার ও প্রসারের জন্য প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে বাংলাদেশে ওয়াজ মাহফিল হয়ে থাকে। এখানে ‘ইসলামে স্কলার’ তথা মওলানারা ওয়াজ করে থাকেন। তবে বেশ কবছর ধরে বাংলাদেশে এই ওয়াজ মাহফিল ভিন্ন আংগিকে প্রকাশ হচ্ছে। এখন শুধু ওয়াজ মাহফিলে পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোচনা হয় না। বরং কোরআন ও হাদিসের আলোচনার চেয়ে সমসাময়িক বিষয়, কৌতুকপূর্ণ কথা, অশ্লীল ইংগিত এবং কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা নিয়েই আলোচনা হয়ে থাকে।
যারা বর্তমান ওয়াজ মাহফিলে আলোচনা করে থাকেন, তাদের নামের বাহারও ভিন্ন ভিন্ন রকমের। প্রায় সবার নামের আগেই আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন, আলহাজ্জ্ব, কোকিলকণ্ঠী, হযরত, শায়খ, আল্লামা বিশেষণ জুড়িয়ে দেওয়া হয়। আর নামের শেষে জিহাদী, ইরানী, মাইজভান্ডারি, শরিয়তপুরী সহ বিভিন্ন আকর্ষনীয় উপমা জুড়ে দেওয়া হয়।
এগুলো বাদে আবার নতুন করে হাজির হয়েছে একঝাঁক শিশু বক্তা। যাদের কোলে করে এনে চেয়ারে বসিয়ে দেওয়া হয়, তারপর মুখস্থ কিছু কথা বলে আবার অন্যের কোলে চড়ে মঞ্চ ত্যাগ করে ! এদের অনেকেই ঠিকমত কথাও বলতে পারেনা। কোরআনের শুদ্ধ তেলাওয়াত করতে পারেনা !
এরকম কয়েকজন বক্তাকে নিয়েই আজকে আমরা কথা বলবো…
মাওলানা ইলিয়াছুর রহমান জিহাদী : ব্যাঙ্গাত্মক, কুরুচিপূর্ণ কথা এবং অশ্লীল অঙ্গভঙ্গিতে সবার চেয়ে এগিয়ে ইলিয়াছুর রহমান জিহাদী। নিজেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জামাই বলে পরিচয় দেয়। এবং ওয়াজে প্রধানমন্ত্রীকে শাশুড়ি বলে সম্মোধন করেন। ওয়াজ মাহফিলে বিড়ি খাওয়ার বিভিন্ন স্টাইল দেখান। জেমস, আইয়ুব বাচ্চুর গানও প্রায় ওয়াজে গাইতে শোনা যায়। তিনি এমনও বলে তার সাথে হিরো আলমের নিয়মিত কথা হয়।
গোলাম রাব্বানী : ধর্মের চেয়ে সাম্প্রতিক টপিক মানে ফেসবুকের ভাইরাল হওয়া বিষয় নিয়ে গোলাম রব্বানী বেশি কথা বলে। মমতাজ থেকে শুরু করে ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া সব গান ওয়াজ মাহফিলে গেয়ে শোনান তিনি। এমনকি হিন্দি গানও গান। বাদ যায় না, বিয়ের গীত।
মাওলানা আমীর হামজা : জামায়াতপন্থী এই বক্তা তার বক্তব্যে কুরুচিপূর্ণ কথা বেশি বলেন। বাংলা গানের জনপ্রিয় সুরকার, গীতিকবি, গায়ক, মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল মারা যাওয়ার পর মাওলানা আমীর হামজা বলেন, “কিছুদিন আগে একজন ওলি মইরা গেছে। বুলবুল, শয়তান কবরে এখন আপেল খাচ্ছে।” গনজাগরণ মঞ্চ নিয়েও কুরুচিপূর্ণ কথা বলেছিলেন তিনি। শাহবাগ আন্দোলনকে ইংগিত করে মাওলানা আমীর হামজা বলেন – “কিছু কুলাঙ্গার, যাদের জন্মের ঠিক নেই। এসব মানুষ বাংলাদেশের একটা গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে দাঁড়িয়ে মঞ্চ তৈরি করে নর্তকীকে সঙ্গে নিয়ে ম-তে অমুক, ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই। তাদের নামের সঙ্গে আমার নবীর নামের মিল আছে, কিন্তু উল্টাপাল্টা কাজ করে। নাম পাল্টান। নাম হওয়া দরকার রবীন্দ্রনাথ।”
মাওলানা আবুল হাসান শরিয়তপুরী : তিনি ওয়াজ শুরু করেন এভাবে – “খেলা দেখবা ব্যাটা? আজকে খেলা দেহামু” ! সেলফি তোলার নানান স্টাইল ওয়াজে দেখান, যেটা ফেসবুকে ধর্মীয় বক্তাদের নিয়ে হাসি-তামাশার সৃষ্টি করেছে। আইয়ুব বাচ্চু মারা যাওয়ার পর শরীয়তপুরী বলেন, “আম্মাজান আম্মাজান, শিল্পীর নাম বুদবুদ করতেছে আপনাদের মনে। ওইদিন মারা গেলো আইয়ুব বাচ্চু, ওইদিন মারা গেলো আল্লামা হাবিবুর রহমান। এই পর্যন্ত হাবিবুর রহমানকে সংবর্ধনা দিলো না। আইয়ুব বাচ্চু মারা গেছে, একশ্রেণীর ভদ্রলোক, শিক্ষিত শয়তান, (আরও জোরে শ্রোতাদের বলতে বলেন) শিক্ষিত শয়তান। আইয়ুব বাচ্চুর এলাকায় মুসলিম হল, নাম পরিবর্তন করতে চায় তার নামে। মুসলিম নাম পরিবর্তন করলে হাতের কব্জি কেটে দিতে রাজি আছে মানুষ।”
গিয়াস উদ্দিন তাহেরী : তার “বইসা যান” ইতিমধ্যেই ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। নানান সূরে এবং গান গেয়ে গেয়ে তিনি ওয়াজ করে থাকেন। তার ভিডিও নিয়েই সবচেয়ে বেশি হাসিঠাট্টা হতে দেখা যায়। তিনি এবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন।
পরিশেষে,
ওয়াজ মাহফিল যেখানে ইসলাম প্রচার এবং সঠিক ইসলাম জানানোর সুন্দরতর মাধ্যম, সেখানে এই বক্তাগণদের কারণে আজ ওয়াজ মাহফিল মানুষের কাছে হাসির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা মঞ্চটাকে যাত্রার মঞ্চ বানিয়ে ফেলেছে। তারা যতটুকু না ইসলাম নিয়ে কথা বলেন, তারচেয়ে বেশি কৌতুক করেন।
এছাড়া ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দেয়া আর হিংসা ছড়ানো তো আছেই ! যেখানে কোরআন হাদিসের সাথে সেসব কথার কোনো সম্পর্কই নেই…