ঐতিহ্য ধরে রাখায় চট্টগ্রামের জুড়ি নেই। নানান রকমের ঐতিহ্যবাহী খাবারের জন্য চট্টগ্রাম বিখ্যাত। যেমন – মধুভাত, মেজবান। তেমনই আরেকটি ঐতিহ্যবাহী খাবার হচ্ছে চট্টগ্রামের বেলা বিস্কুট ! বেলা বিস্কুটের বিশেষত্ব হচ্ছে, এটি মাটির তন্দুরে বানানো হয়। শুধুমাত্র মাটির তন্দুরে বানালেই বিস্কুটের আসল স্বাদ ও গুণগত মান ঠিক থাকে।
বেলা বিস্কুটের ইতিহাস নিয়েই আমাদের আজকের এই প্রতিবেদন…
চট্টগ্রামের বেলা বিস্কুট
বলা হয়ে থাকে, যার হাত ধরে এই বিস্কুটটির উৎপত্তি হয়েছিলো, তাঁর নাম আব্দুল গণি সওদাগর। প্রচলিত প্রথায় সওদাগররা বড় বড় পানসি নৌকা নিয়ে দূরদূরান্তে বাণিজ্য করতেন। গণি সওদাগরও সেভাবেই বাণিজ্য করতেন। অন্যান্য ব্যবসার সাথে তাঁর বিস্কুটের ব্যবসাও ছিলো। কোন দুর্বোধ্য কারণে তিনি বিস্কুটের ব্যবসা শুরু করেছিলেন, তা কারো জানা নেই। তখনকার দিনে এ অঞ্চলে বিস্কুট বলে কিছু ছিলো। বিস্কুট জিনিসটা পর্তুগিজদের হাত ধরে এসেছিলো ভারতীয় উপমহাদেশে। আর চাটগাঁ ছিলো তাদের একটা বড় কলোনি। সে হিসেবে বিস্কুটের ব্যবহার সর্বপ্রথম চাটগাঁ অঞ্চলে হয়েছিলো। গণি সওদাগরও সেখান থেকে অণুপ্রাণিত হয়ে বিস্কুটের ব্যবসা শুরু করেন। তাঁর বানানো বেলা বিস্কুট সর্বপ্রথম জনপ্রিয় হয়েছিলো চট্টগ্রাম অঞ্চলে। আর এটা এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিলো যে, এখনো বেলা বিস্কুট না খেলে ওই অঞ্চলের মানুষের নাকি পেটের ভাত হজম হয়না, এমনটা প্রায়ই অনেককে বলতে শোনা যায় !
১৯৭৩ সালে গণি সওদাগর মারা যান। শোনা যায়, তিনি ১০০ বছর পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন। তাঁর কোনো সন্তান ছিলো না। তিনি মারা যাওয়ার পর তার ভাইয়ের ছেলে দানু মিয়া সওদাগর এই ব্যবসা চালিয়ে নেন। এরপর তার ছেলে জামাল উদ্দিন ব্যবসার হাল ধরেন। বংশ পরম্পরায় জামাল উদ্দিনের ছেলে এহতেশাম এখনো বেলা বিস্কুটের ব্যবসা পরিচালনা করছেন বলে জানা যায়।
লেখক ও অধ্যাপক আবুল ফজল তাঁর রেখাচিত্র গ্রন্থে লিখেছেন, “চন্দনপুরার বেলায়েত আলী বিস্কুটওয়ালার নাম অনুসারে বেলা বিস্কুটের নামকরণ হয়েছে”।
চট্টগ্রামের বেলা বিস্কুটের খ্যাতি এখন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে গেছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় বেলা বিস্কুট রপ্তানি করা হচ্ছে। এটি চট্টগ্রামের অত্যন্ত মুখরোচক একটি খাবার। সকালে ঘুম থেকে উঠে চায়ের সঙ্গে কিংবা বিকেলের আড্ডায় বেলা বিস্কুটের বিকল্প নেই চট্টগ্রামবাসীর কাছে।
চট্টগ্রামের চন্দনপুরা কলেজ রোডে ঐতিহ্যবাহী বেলা বিস্কুটের দোকান। সেখানে গণি বেকারী শপিং কর্নার নামক দোকানটিতে পাওয়া যায় চট্টগ্রামের প্রসিদ্ধ এই বিস্কুট। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব ও সিটি কর্পোরেশনে এখনো ‘বেলা বিস্কুট-চায়ের মেহমানদারী’ প্রচলিত !