কুমিল্লা বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী ও অন্যতম বাণিজ্যকেন্দ্র। এই কুমিল্লার রয়েছে হাজার বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য। কুমিল্লায় আছে সবই। আছেন অনেক মহৎ ব্যক্তিত্ব,অনেক গুনীজন। আছে রসমালাই, আরো আছে লালমাই পাহাড়। কিন্তু এতকিছুর পরও নেই একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ! যুক্তিগত দিক থেকে কুমিল্লায় একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ এখন সময়ের দাবী ! কিভাবে? চলুন জেনে নেয়া যাক…
যেসব কারণে কুমিল্লায় বিমানবন্দর বানানো জরুরী
প্রথমত, কুমিল্লায় রয়েছে বিপুলসংখ্যক প্রবাসী। বর্তমানে প্রবাসে জীবন কাটানো সবচেয়ে বেশি মানুষই কুমিল্লার। এই প্রবাসীগণ বিমানযোগে ঢাকায় নামেন। তাতে ঢাকা শহরের প্রতিদিনকার ব্যস্ততার মাঝে কেবল বাড়তি কিছু ‘গ্যাঞ্জাম’ই বাড়ে। লাভের লাভ কিছুই হয়না। মাঝখান দিয়ে ছিনতাইকারী এবং ভাড়ায় চালিত ক্যাবগুলো সমানতালে প্রবাসীদের পকেট কাটে। তাই কুমিল্লায় বিমানবন্দর বানানো হলে প্রবাসীদের ভোগান্তি অনেকটা কমবে। সেইসাথে ঢাকা শহরের কমবে অবাঞ্ছিত ঝামেলা।
দ্বিতীয়ত, কুমিল্লায় রয়েছে অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও কলকারখানা। এসব কারখানার আমদানি-রপ্তানির সুবিধাগত কারণগুলো বিবেচনা করে হলেও কুমিল্লায় বিমানবন্দর থাকা প্রয়োজন।
তৃতীয়ত, কুমিল্লা বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন এলাকা। কুমিল্লায় সেরা পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে শালবন বৌদ্ধ বিহার, ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি, বীরচন্দ্র গণপাঠাগার ও নগর মিলনায়তন, উটখাড়া মাজার, বায়তুল আজগর জামে মসজিদ, কবি তীর্থ দৌলতপুর (জাতীয় কবি কাজী নজরুলের স্মৃতি বিজড়িত স্থান) এসব জায়গায় প্রতিদিন সারাদেশ থেকে অসংখ্য মানুষ ভ্রমণে যায়অ। তাই ভ্রমণবিলাসী ও বিদেশি পর্যটকদের কথা বিবেচনায় রেখে কুমিল্লায় বিমানবন্দর বানানো যেতে পারে।
চতুর্থত, বিভাগীয় শহর হিসেবে একটি বিমানবন্দর থাকা কুমিল্লাবাসীর ন্যায্য পাওনা !
কুমিল্লায় আগেও একটি এয়ারপোর্ট ছিলো !
১৯৪০ সালে কুমিল্লায় একটি বিমানবন্দর (Comilla Airport) স্থাপন করা হয়েছিলো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে অনেকটা তড়িঘড়ি করেই এই বিমানবন্দর স্থাপন করে আমেরিকা। এই বিমানবন্দরে আমেরিকার কিছু যুদ্ধ বিমান উঠানামা করত জাপানি বিমানকে পাহারা দেয়ার জন্য। ইতিহাস ঘেটে জানা যায়, “১৯৫০ সাল থেকে শুরু করে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত এই বিমান বন্দর হতে তেজগাঁও পুরান বিমানবন্দরে অভ্যন্তরীন বিমান চলাচল করত। তারপর ঢাকার জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্থাপিত হওয়ার পর থেকে কুমিল্লা এয়ারপোর্টের কার্যক্রমও শেষ হয়ে যায়। অর্থাৎ একরকম অজ্ঞাত কারণেই বন্ধ হয়ে যায় প্রাচীন এই বিমানবন্দর। তবে এই তথ্যের সাথে দ্বিমত পোষনকারী তথ্যও রয়েছে। আরেকটি সুত্রমতে, “দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বৃটিশদের উদ্যোগেই এই এয়ারপোর্ট স্থাপিত হয়েছিলো এবং সেখানে বৃটিশ আর্মির ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছিলো।”
কুমিল্লার নিকটবর্তী বিবাড়িয়া, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ইত্যাদি এলাকায় প্রচুর সংখ্যক ব্যবসায়ী ও প্রবাসী রয়েছেন। এদের কথা বিবেচনায় রেখে বিমানবন্দর বানানো যেতে পারে। এসব এলাকায় প্রচুর সংখ্যক কল কারখানা রয়েছে। তাই যাতায়াত ও আমদানি-রপ্তানির কথা বিবেচনায় রেখে কুমিল্লায় একটি বিমানবন্দর বানানো উচিত।
আর তাছাড়া বিভিন্ন জেলায় যাতায়াতের সময় কুমিল্লার উপর বাসগুলোর যাত্রাবিরতি চলাকালে টয়লেট ব্যবহার করা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় যে পরিমাণ ট্রল হয়, এসব ট্রলের জবাব দিতেও কুমিল্লাবাসীদের জন্য একটি বিমানবন্দর প্রয়োজন !
তাই মাননীয় অর্থমন্ত্রী জনাব আ হ ম মোস্তফা কামাল স্যারের প্রতি আমার খোলা অনুরোধ, তিনি যেনো কুমিল্লায় একটি বিমানবন্দর নির্মাণে উদ্যোগী হন !