ব্লগিং জগত থেকে উঠে আসা একজন জনপ্রিয় ফেসবুক অ্যাক্টিভিস্ট ‘নীল সালু’। নাম পরিচয় গোপন রেখে ফেসবুকে দুই কলম লিখতে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে যারা বেশ ভালো রকমের জনপ্রিয়তা পেয়েছেন, তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত বহাল তবিয়তে টিকে থাকা একজন এই নীল সালু। ফেসবুক সেলিব্রেটিদের সবচেয়ে পুরনো তালিকায় তার নাম পাওয়া যায়।
কে এই নীল সালু ? কিভাবে তার উত্থান? নীলসালুকে নিয়ে নানান রকমের সমালোচনা ও তার বিভিন্ন কর্মকান্ড আজও অনেককে এসব প্রশ্ন নিয়ে ভাবিয়ে তোলে। আমরা চেষ্টা করেছি এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করার। নীতিমালা অনুযায়ী আমরা সাক্ষাৎকার নিতে পারিনা। তাই আমাদের একজন প্রতিবেদক আহমেদ অরিত্র ব্যক্তিগতভাবে নীল সালু’র সাথে কথা বলেছেন। অরিত্রর লেখা থেকে চলুন জেনে আসা যাক নীল সালু সম্পর্কিত সেইসব প্রশ্নের উত্তর, যা নিয়ে সমালোচনায় মুখর সোশ্যাল মিডিয়া !
একজন নীল সালু এবং কয়েকটি প্রশ্ন
ছারপোকা ম্যাগাজিন : অনলাইন এক্টিভিটির শুরুটা কিভাবে?
নীল সালু : অনলাইন এক্টিভিটির শুরুটা মূলত স্কুল জীবনের শেষের দিক থেকে। রম্য কবিতা লেখার একটা অভ্যাস ছিলো, এক কাজিনের দেখে দেখে কয়েকটি জনপ্রিয় বাংলা ব্লগে একাউন্ট তৈরি করি। মাস কয়েক লেখার পর খেয়াল করলাম প্রচুর রেসপন্স পাচ্ছি সবার থেকে। প্রথমসারির ইউজারদের তালিকায় নিজের নাম উঠে আসতে দেখে আর থামিনি, অনুপ্রানিত হয়ে সেই থেকেই চালিয়ে যাচ্ছি লেখালেখি।
ছারপোকা ম্যাগাজিন : নীল সালু জামাত-শিবির পন্থী, শুনতে কেমন লাগে?
নীল সালু : শুনতে হাস্যকর লাগে। কারণ আমি কখনোই কোন রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত ছিলাম না। এখনোও নেই। তবে হ্যাঁ, যেহেতু আমি সামাজিক বিষয় বস্তু নিয়ে লেখালেখি বেশি করি, সেহেতু অনেক সময় অনেক লেখা হয়তো অনেক রাজনৈতিক দলের অনুকূলে চলে যায়, তখন বিপরীত পক্ষ ভাবে আমি ওই দলপন্থী। সেটি যে কোন দল হতে পারে।
ছারপোকা ম্যাগাজিন : ২০১৩ সালে যখন পুরো বাংলাদেশের তরুণ সমাজ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগে গনজাগরণ মঞ্চে স্লোগান তুলেছিলো, তখন আপনি গনজাগরণ মঞ্চকে বিতর্কিত করতে সতেষ্ট ছিলেন। এই সময় এসে কোনো আফসোস কিংবা অপরাধবোধ কাজ করে না?
নীল সালু : এই তথ্যটিতে সামান্য ভুল করেছেন আপনি। আমি আমার কোন এক্টিভিটি দ্বারা গনজাগরণ মঞ্চকে বিতর্কিত করতে চাইনি এবং সেটি করা উচিতও হতো না। কারণ গনজাগরণ মঞ্চ তৈরি হয়েছিল ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে। আমিও চাই আমাদের দেশের সকল যুদ্ধাপরাধীর বিচার হোক। এত বছর পরেও এই সময়ে এসে একজন বাংলাদেশী হিসেবে আমার নিজের মাঝে আফসোস এবং অপরাধ বোধ কাজ করে এই কারণেইক যে, এখনো আমাদের দেশে অনেক কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী এই বাংলার আলো-বাতাস গ্রহণ করে এবং নিজেদের গাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা ব্যাবহার করে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
ছারপোকা ম্যাগাজিন : নীল সালু কেনো? লাল সালু কিংবা হলুদ সালু না কেনো?
নীল সালু : নীল আমার প্রিয় রঙ। তবে আমি এই নামটি সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহর লালসালু উপন্যাসের মজিদের চরিত্রের একটি বিপরীত চরিত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্য নিয়েই সিলেক্ট করেছিলাম।
ছারপোকা ম্যাগাজিন : অ্যানোনিমাস আইডির আড়ালে থেকে একদল উগ্রভক্তদের দিয়ে মানুষকে হ্যারাসমেন্ট করার অভিযোগও তো উঠেছিলো? কেনো?
নীল সালু : দেখুন, প্রতিটি মানুষের পেছনেই আলোচনা এবং সমালোচনা থাকে, আমার এক্টিভিটি যাদের পছন্দ হয়না, আমাকে নিয়ে যারা খুব বেশি জেলাস এবং আমার কারণে এক শ্রেণীর মানুষের অনেক ধরনের অসুবিধা হয়, তাই তারা নানা সময়ে নানা ভাবে আমাকে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে এসেছে। এখনোও করে। বাস্তবে এসব অভিযোগের কোনই ভিত্তি নেই। বুঝেনই তো, শত্রু বানানোর জন্য আপনাকে মারপিট করতে হবেনা, আপনি ভালো কাজ করুন, এমনিই হয়ে যাবে।
ছারপোকা ম্যাগাজিন : অ্যানোনিমাস আইডি কেনো? পরিচয় প্রকাশ হয়ে গেলে মুখোশ পরা এই ইমেজ ভেঙে পড়বে, এই ভয়ে? নাকি অন্যকিছু?
নীল সালু : জনপ্রিয়তার লোভ আমার মাঝে কখনোই কাজ করেনি, যদি করতো তাহলে ১১ বছর ধরে নিজেকে এভাবে আড়ালে রাখতাম না। মূলত আড়ালে থেকে সামাজিক উন্নয়নমূলক ভালো কাজগুলো করতে আমার ভালো লাগে। নিজের মাঝে একটা অন্যরকম আত্মতৃপ্তি কাজ করে। তাই আড়ালে থেকেই ভালো কাজ করি, আড়ালে থেকেই সবার ভালোবাসা আদায় করি।
ছারপোকা ম্যাগাজিন : সামাজিক সমস্যাগুলো নিয়ে আপনি কাজ করেন। এমনটা প্রায়ই দেখা যায়। কি কারণে ‘নিজের গাটের টাকা’ ঢেলে সমাজসেবা করেন?
নীল সালু : দেখুন, আমাদের সমাজে প্রচুর সমস্যা। যে সমস্যা গুলো আমরা আমাদের নিজেদের জায়গা থেকে সোচ্চার আর সচেতন না হলে সমাধান করা সম্ভব নয়। আমি আমার সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে এগিয়ে এসে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী চেষ্টা করি কাজ করার, আমি সব সময় আশাকরি আমাকে দেখে অন্যরাও এগিয়ে আসবে।
ছারপোকা ম্যাগাজিন : বাংলাদেশিজম প্রজেক্টের সাথে আপনার সম্পর্ক কি?
নীল সালু : বাংলাদেশিজম প্রজেক্ট এর সাথে আমি শুরু থেকে ছিলাম না, বছরখানেক আগেই যুক্ত হই। ওরা সমাজের নানা অসংগতি গুলো নিজেদের সাইটে তুলে ধরার উদ্যোগ হাতে নেয় আর তা দেখে খুব কাছের প্রিয় একজনের আমন্ত্রণে নিজেকে সেখানে যুক্ত করি। যুক্ত হবার পর মনে হয়েছে শুরু থেকেই একসাথে কাজ করতে পারলে বোধহয় আরো ভালো হতো।
ছারপোকা ম্যাগাজিন : পাকিস্তান নিয়ে মূল্যায়ন কি?
নীল সালু : সেন্সেটিভ প্রশ্ন। তবে ৭১ এর আগে জন্ম গ্রহণ করলে মনে একটা আক্ষেপ কাজ করতো, যা এখন করেনা।
ছারপোকা ম্যাগাজিন : মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাংলাদেশ কেমন চলছে? আপনার কাছে কেমন লাগছে?
নীল সালু : ভালোই চলছে। চারদিকে উন্নয়নের স্লোগান, শুনতে বেশ ভালোই লাগে। আচ্ছা, আমি আপনাকে একটা প্রশ্ন করি, US Bangla এয়ারলাইনস কেমন চলছে?
ছারপোকা ম্যাগাজিন : ভবিষ্যত নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কি? জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে দেশের মানুষের জন্য কি করতে চান?
নীল সালু : এখনো ছাত্রজীবনে আছি, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত একজন ব্যাক্তি হিসেবে গড়ে তোলার পর ইনশাআল্লাহ দেশের জন্য আরো ভালোভাবে কাজ করবো। যে লাখ লাখ মানুষের ভালোবাসার কারণে আমি আজকের নীল সালু, এই নামটির মালিক একা আমি নয়, ওরা সবাই। সুতরাং এটিকে তাদের জন্যই অতীতে কাজে লাগিয়েছি, ভবিষ্যতেও লাগাবো। আমরা সবাই মিলেই গড়ে তুলবো একটি সুন্দর সোনার বাংলাদেশ।
ছারপোকা ম্যাগাজিন : বছরখানেক আগে কিছু জনপ্রিয় গায়ক-গায়িকা ও মিডিয়া তারকাদের সাথে আপনার ফেস ব্লার করা ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যায়। আপনি অ্যানোনিমাস হলে তারা আপনাকে পেলো কিভাবে? কি সম্পর্ক আপনার তাদের সাথে?
নীল সালু : বেশ সুন্দর প্রশ্ন করেছেন। ওই ছবি ভাইরাল হবার পরে এই প্রশ্নটি আমার জন্য একটা কমন প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আসলে ওদের বেশিরভাগের সাথেই সোস্যাল ওয়ার্ক করার কল্যাণে পরিচয় হয়েছে। আবার কারো কারো সাথে ফেসবুকেই পরিচয়, তারপর বন্ধুত্ব। আমরা সেলেব্রিটি কিংবা মিডিয়া পারসনদের নিয়ে অনেক বিদ্রুপ ধারনা করি। কিন্তু সবাই যে এক রকম নয় তা ওদের সাথে কাজ না করলে আসলেই বুঝতাম না। ওরা অনেক সাপোর্টিভ এন্ড হেল্পফুল।
ছারপোকা ম্যাগাজিন : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কোন কোন জনপ্রিয় ব্যক্তিকে আপনার ভালো লাগে?
নীল সালু : আসলে বলতে গেলে তো অনেক নামই চলে আসবে, বলে শেষ করা যাবেনা। আগে অনেকেই লেখালেখি করতো, সোস্যাল ওয়ার্ক করতো। তাদের অনেককেই এখন আর খুজে পাওয়া যায় না। তবে কিছু ইউজারের লেখা আমার সব সময় ভালো লাগবে। যেমন, আরিফ আহমেদ, আরিফ আর হোসেন, জুনায়েদ ইভান ইত্যাদি। এছাড়াও ইউটিউবার হিসেবে তাহসিনেশন -কে আমার সবার চাইতে বেশি ভালো লাগে।
ছারপোকা ম্যাগাজিন : বর্তমানে অনলাইনে কোথায় কোথায় আপনি সক্রীয় আছেন?
নীল সালু : ফেসবুকে আমার শুধুমাত্র একটি পেজ (Facebook.com/neelsalubd) এবং একটি একাউন্ট আছে। যদিও অনাকাঙ্ক্ষিত কারণে আমার একাউন্টটি আপাতত বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও ইন্সটাগ্রামেও একটি একাউন্ট আছে (Instagram.com/neelsalu)।
ছারপোকা ম্যাগাজিন : আপনি কোথায় থাকেন?
নীল সালু : পড়াশুনার উদ্দেশ্য সুদূর ইউরোপে পাড়ি জমালেও, বর্তমানে বাংলাদেশে আছি।
ছারপোকা ম্যাগাজিন : আপনার প্রকৃত নাম কি?
নীল সালু : আহা! কিছু কথা থাকনা গোপন…….
লেখকের মতামত
ব্যক্তিগতভাবে তাকে আমি পছন্দও করিনা। আবার অপছন্দও করিনা। যতটা সম্ভব তার প্রোফাইল থেকে দুরে থাকি। কোনো একটা কারণে তার নামটা আমি নিতে পারিনা। বিব্রত হই। যদিও এই প্রশ্নগুলো করতে গিয়ে তার সাথে যে দুইঘন্টা কথা হয়েছে, তাতে আমার কাছে তাকে খুব একটা খারাপ মনে হয়নি। তবে রাজনৈতিকভাবে তিনি কতটা নিরপেক্ষ বা নির্দলীয়, তা নিয়ে আমার ছোট্ট মস্তিস্কে প্রশ্নটা ঘোলাটে হয়ে থেকেই যাচ্ছে। কারণ জামাতশিবির এবং রাজাকারদের পক্ষ নেয়া কোনো রাজনৈতিক দলকে আমি বাংলার মাটিতে দাঁড়িয়ে সমর্থন করতে পারিনা। আমার বিবেকে বাধে। নীল সালু একজন ফেসবুক সেলিব্রেটি। তাকে লাখো মানুষ ফলো করেন। পত্রিকার প্রতিবেদক হিসেবে নয়, একজন সাধারণ মানুষ হিসেবেই আমি নীলসালু’কে বলতে চাই, স্বাধীনতাবিরোধী কোনো শক্তিকে যেনো তিনি সমর্থন না করেন। মানুষের মনে তাকে নিয়ে যে ভুল ধারণাগুলো রয়েছে, আশা করি তা অচিরেই মুছে যাবে।
ধন্যবাদ নীল সালু, বিভিন্ন সময় সামাজিক সমস্যাগুলো সমাধানের উদ্যোগ নিয়ে তরুণদের অনুপ্রাণিত করার জন্য…