বদলেছে শিক্ষামন্ত্রী। পরিচিত মুখ নুরুল ইসলাম নাহিদের জায়গায় এখন ঝুলছে দীপু মনি’র নাম। দায়িত্বরত সময়ে নাহিদ স্যারকে অনেক আলোচনা সমালোচনার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। আলোচনা থেমে নেই আজকেও। শুধু বিষয়টা বদলেছে। নতুন বিষয়টা হচ্ছে, শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে নাহিদের জায়গায় দীপু মনি কতটা উপযুক্ত? চলুন দেখে নেয়া যাক…
অনেকেই ডাঃ দীপু মনিকে চিনেন সাবেক পররাষ্ট্রমম্পন্ত্রী হিসেবে এবং বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে। কিন্তু কয়জনই বা জানেন যে এর বাইরেও উনার আরো অনেক পরিচয় রয়েছে। উনি একাধারে চিকিৎসক ও আইনজীবী !
সংক্ষেপে দীপু মনি’র পরিচয় :
Dr. Dipu Moni, MP
- MBBS (DMC), LLB (NU), LLM (London) MPH (Johns Hopkins)
- Former Foreign Minister of Bangladesh (January 2019 – November 2013)
- Joint General Secretary of the Bangladesh Awami League.
- Physician and draws upon advanced qualifications in Public Health and Law and is an Advocate of the Bangladesh Supreme Court.
- Trustee, Asian University for Women.
কি বুঝলেন? নিশ্চয়ই কিছুটা হলেও অবাক হয়েছেন !
অবাক করার মতনই উনার শিক্ষাগত যোগ্যতা ! ডিএমসি থেকে MBBS, তারপর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে LLB ও LLM লন্ডন থেকে ! MPH করেছেন বিশ্বখ্যাত জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমঝোতা ও দ্বন্দ্ব নিরসন এর ওপর একটি কোর্স সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের একজন আইনজীবী।
… কি হিংসে হয়?
২০০৮ সালে আওয়ামীলীগের জয়লাভের পর বাংলাদেশের প্রথম মহিলা পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তিনি নিয়োগ পান। আর এখন নিয়োগ পেয়েছেন প্রথম নারী শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে।
দীপু মনির জন্ম ৮ ডিসেম্বর ১৯৬৫, চাঁদপুর জেলায়। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং ভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র লীগের প্রথম কাউন্সিল নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক এম.এ ওয়াদুদের কন্যা। তিনি হলি ক্রস কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন।
দীপু মনি চাঁদপুর-৩ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রতিবেশী দেশসমূহের সাথে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করে। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ সমুদ্রসীমা জয় করে। এতে করে বাংলাদেশ সরকার প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার এবং ভারতের সাথে প্রায় চার দশকের সমুদ্র সীমা সংক্রান্ত অমীমাংসিত বিষয়টি আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তির উদ্যোগ গ্রহণ করে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে তিনি কমনওয়েলথ মিনিস্ট্রেরিয়াল অ্যাকশন গ্রুপ এর প্রথম নারী এবং দক্ষিণ এশীয় চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হন।
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের এ্যাডভোকেট তৌফীক নাওয়াজ দীপু মনি’র স্বামী। তিনি আন্তর্জাতিক একটি ল’ফার্মের প্রধান। তিনি উপমহাদেশের দু’ হাজার বছরের ঐতিহ্য মন্ডিত ধ্রুপদী সঙ্গীতের উৎস হিসেবে পরিচিত ‘আলাপ’ এর একজন শিল্পী। তাঁদের রয়েছে দু’সন্তান। পুত্র তওকীর রাশাদ নাওয়াজ ও কন্যা তানি দীপাভলী নাওয়াজ।
তিনি বেশ ভ্রমনপিপাসু ! বিভিন্ন দেশে ঘনঘন সফর করার কারণে তিনি সংবাদ মাধ্যম দ্বারা সমালোচিত হয়েছেন। সাড়ে চার বছরে তিনি ১৮৭ বার বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন এবং ৬০০ দিন পার করেছেন।
দীপু মনি একাধারে লেখালেখি, শিক্ষকতা, পরামর্শদাতা, গবেষণা, এ্যাডভোকেসি কর্মসূচি পরিচালনা করেন এবং দক্ষ ও অভিজ্ঞ চিকিৎসকদল নিয়ে গঠিত ফ্রি স্বাস্থ্যসেবা ক্লিনিকের মাধ্যমে দুঃস্থ ও স্বাস্থ্যসুবিধা বঞ্চিত মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার কাজ করেন। তিনি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে আইন প্রণয়নে জনমত গড়ে তোলার কাজেও নিয়োজিত।
সেরা অর্জন হিসেবে দীপু মনি মাদার তেরেসা আন্তর্জাতিক পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছিলেন…
বুঝতেই পারছেন, শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দীপু মনি আসলেই একদম উপযুক্ত একজন মানুষ। তবে হ্যাঁ, তার মানে এই নয় যে নুরুল ইসলাম নাহিদ উপযুক্ত না। একটা কথা আজ আপনি মানুন আর না মানুন, একদিন ঠিকই স্বীকার করবেন, নুরুল ইসলাম নাহিদের মত শিক্ষামন্ত্রী গত একশ বছরেও আসেনি। আগামী একশ বছরেও হয়ত আসবেনা। অনেক কিছু বদলে দেয়ার চেষ্টা করেছেন এই মানুষটি। এবার তাকে নিয়ে ট্রল করা বন্ধ করে তাঁকে তার মত থাকতে দিন…
সবশেষে বলবো, ডাঃ দীপু মনি চাঁদপুরের সন্তান। আর চাঁদপুর হলো ভদ্রলোকদের জায়গা। চাঁদপুরের সন্তানরা যেখানেই যায়, নিজের যোগ্যতা ও কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে আসে। আমরা আশা রাখি ও দোয়া করি যে, তিনি েএ সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখবেন…
আরো পড়ুনঃ