ভেটেরান অভিনেতা আবুল হায়াত ! অভিনয়গুণে চিরকাল শুধু সুনামই কামিয়েছেন। বাংলা নাটক শব্দটি মুখে নিতেই সবার প্রথমে যার নামটি মাথায় আসে, তিনি আজিজুল হাকিম নন, তিনি আবুল হায়াত। এমন একটা দিন নেই, যেদিন আমরা আবুল হায়াতকে দেখিনি। নাটক সিনেমা না হোক, অন্তত একটা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে হলেও প্রতিদিন একটিবারের জন্য এই সুপরিচিত মুখটি আমাদের দেখতে হয়। তাঁর এই অভিনেতা মুখমন্ডলের আড়ালে লুকিয়ে থাকা আরেকটি মুখ নিয়ে আজ আমরা কথা বলবো। টেনে বের করে তাঁর ভেতরের আরেকটি স্বত্বা, তুলে ধরবো এই স্বত্বার গর্ভে জন্মে নেয়া এমন কিছু সৃষ্টির কথা, যা আমাদের দেশের সিংহভাগ মানুষেরই এখনো অজানা !
আবুল হায়াত শুধু একজন অভিনেতাই নন। তিনি একজন সাহিত্যিকও বটে। ১৯৯১ সাল থেকে শুরু। সেই থেকে এখন পর্যন্ত নিজের কালো কলমটি চালিয়েই যাচ্ছেন গুণী এই ব্যক্তি। প্রকাশ করেছেন নিজের লেখা ২৬, মতান্তরে ২৮টি বই ! এ পর্বে আমরা আবুল হায়াতের লেখা “একগুচ্ছ নীপবনের জোকস্” বইটি সম্পর্কে জানবো।
একগুচ্ছ নীপবনের জোকস্
জোকস লেখা আবুল হায়াতের শখ। রম্য রসিকতায় ডুবে থাকা এ মানুষটি ছোটবেলা থেকেই কৌতুক লিখতে পছন্দ করতেন। এ প্রসঙ্গে বইয়ের শুরুতেই আবুল হায়াত লিখেছেন –
“ছোটবেলা থেকে চুটকী শুনতে আর বলতে আমার ভালো লাগতো। চুটকী বলার জন্য আমি স্কুল কলেজের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতাম। চুটকী সংগ্রহ করা একসময় আমার নেশায় পরিণত হয়। প্রথম আলো পত্রিকায় ‘এসো নীপবনে’ শিরোনামে কলাম লিখতে গিয়ে এ কাজে অভ্যস্ত হয়ে যাই। পাঠকরা এসব জোকস করে আমাকে নানান ভাবে উৎসাহ জোগাতে থাকেন আমার সংগ্রহগুলোকে বই আকারে প্রকাশ করার জন্য। লিখে ফেললাম নীপবনের জোকস্ । বইটির সফলতার পর আবারো নতুন করে এবার ‘একগুচ্ছ নীপবনের জোকস্’ নিয়ে হাজির হলাম পাঠকদের খুশি করার জন্য।”
অর্থাৎ এই বইয়ের জোকসগুলো আবুল হায়াত নিজে লিখেছেন কিনা, তা কুয়াশার চাদরেই আচ্ছন্ন রয়ে গেছে। হতে পারে, কিছু জোকস তিনি নিজেই লিখেছেন। এবং বাকি জোকসগুলো তার পছন্দের জোকস হিসেবে সংগ্রহশালা থেকে আনিত !
চলুন দেখা নেয়া যাক, এই বই থেকে পাওয়া আবুল হায়াতের কয়েকটি জোকস –
বইয়ের রিভিউ
এই বইটি আমাকে এক মুহুর্তের জন্য শৈশবে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে। ১৯৯৮ সালে একবার বাসে বমি করতে করতে চাঁদপুর থেকে ঢাকা ফিরছিলাম। কুমিল্লায় বাস থামানোর পর কিছু হকার চকলেট চুইংগাম ও কৌতুকের বই নিয়ে বাসে উঠেন। আমি বাবার কাছে আবদার করে ১০টাকা দিয়ে একটি জোকসের বই কিনি। আবুল হায়াতের একগুচ্ছ নীপবনের জোকস্ বইটি আমাকে শৈশবের সেই আগুনঝড়া দিনগুলোয় ফিরিয়ে নিয়ে গেছে। কোথায় যেনো একটা মিল পাচ্ছিলাম। খুব সম্ভবত এই বইয়ের কোনো একটি জোকস কপি করে বেনামে পাবলিশ করা হয়েছে।
একগুচ্ছ নীপবনের জোকস্ বইটি পড়ার পর আমি এই বইয়ের আরো ২৭টি কপি অর্ডার করি শুধুমাত্র আমার বান্ধবীদের কাছে পাঠানোর জন্য। বইটি পাঠানোর পর তাদের সাথে আমার সম্পর্ক আরো দৃঢ় হয়। আমার রুচিবোধ দেখে তারা আমাকে পছন্দ করতে শুরু করে এবং সন্ধ্যার পর থেকেই ম্যাসেঞ্জারে আমার সাথে চ্যাট করতে চায়।
কেনো এই বইটি পড়া উচিত?
আমরা জানি, রসবোধ জিনিসটা সবার মধ্যে থাকেনা। উন্নত হাস্যরসাত্মক কৌতুক পড়তে পড়তেই একটা মানুষের মস্তিস্কে হিউমারের বিকাশ হয়। আমার মনে হয়েছে, এই বইটি পড়ার মাধ্যমে আমার মাথা খুলে গেছে। এখন আমি অনেক সুন্দর সুন্দর জোকস বলে মানুষকে হাসাতে পারি। এমনকি এই বইটি পড়ে আমি নিজেও অনেক হেসেছি। হাসি থামানোই আমার জন্য হয়ে দাঁড়িয়েছিলো চ্যালেঞ্জিং একটা বিষয়…
এই বইটি কাদের জন্য?
এই বইটি সবার জন্য। বইটি পড়া শেষে আপনি আপনার আব্বু আম্মুর রুমে নিয়ে রেখে আসতে পারেন। তাদের পড়া শেষ হলে বইটি আপনার বোনের শ্বশুড়বাড়িতে দুলাভাইয়ের নিকট উপহারস্বরুপ পাঠাতে পারেন। অথবা বিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষককে বইটি উপহার দিতে পারেন। আর আপনার ঘরে যদি একটি ফুটফুটে সন্তান থাকে, তাহলে তার অনাগত ভবিষ্যতের কথা ভেবে বইটি রেখে দিন। কাজে আসবে…
এই বই পড়লে কি আমার বাচ্চাটা নষ্ট হয়ে যাবে?
না, এই বই পড়লে আপনার বাচ্চার চরিত্র নষ্ট হবেনা। বরং তার সেন্স অব হিউমার হাজারগুণে বেড়ে যাবে। বড় হয়ে আপনার সন্তান ইউটিউবার হতে পারে। মজার মজার কথা বলে ভিডিও বানাতে পারবে। এডসেন্সের বিজ্ঞাপন দ্বারা ভিডিও মনিটাইজ করে প্রতিমাসে আয় করবে লক্ষ লক্ষ টাকা।
তাছাড়া সারাদিনের পড়ালেখার চাপ ও অবসরের বিষন্নতা কাটাতে এ বইটি আপনার সন্তানকে ব্যাপকভাবে সহযোগিতা করবে। বইটি হাসি ফোটাবে আপনার সন্তানের মুখে, নিশ্চিত থাকুন।
দাম কত এই বইয়ের?
মাত্র ১৩৫ টাকা 🙂
অনলাইনে বইটির পিডিএফ পাওয়া যাবে?
লেখকের অনুমতি ছাড়া অনলাইনে পিডিএফ আকারে বই প্রকাশ করা একটি দন্ডনীয় অপরাধ। তাই পিডিএফ না খুঁজে কষ্ট করে রকমারী ডটকম বা অন্য কোনো অনলাইন বুক শপে ভিজিট করুন। সার্চ বক্সে “একগুচ্ছ নীপবনের জোকস্” লিখে এন্টার চেপে কিনে ফেলুন আপনার বহুল প্রত্যাশিত বই !
পরিশেষে, গুণী অভিনেতা আবুল হায়াত স্যারের জন্য শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাচ্ছি। স্যার, চিরকাল বেঁচে থাকুন। আমাদেরও ভালো রাখুন। আপনার লেখার মাধ্যমে, আপনার অভিনয়ের মাধ্যমে, আর আপনার সৃষ্টির মাধ্যমে…
আরো পড়ুনঃ