ফেসবুকের সুবাদে এবার সবচেয়ে অদ্ভুত নির্বাচনী প্রচারণা দেখলাম। আমাদের সময় বেশ সুদর্শন, হ্যান্ডসাম একজন নায়ক ছিলো, হেলাল খান। সিনেমায় খুব একটা নাম করতে না পারলেও আইয়ুব বাচ্চুর প্লেব্যাকে “সাগরিকা” নামের একটি গানে তার হাত পা ছুঁড়ে নাচা সবাইকে মুগ্ধ করেছিলো। অনেকের কাছে এখন বেখাপ্পা মনে হলেও তখনকার সময় এই হাত পা ছোঁড়াছুড়িটাই আমাদের কাছে অনেক বেশি কিছু ছিলো। প্রেমে পরে গিয়েছিলাম এ গানের। সাথে হেলাল খানের দুর্দান্ত ফ্যাশন সেন্সের তারিফ না করলেই নয়…
হেলাল খান এবার নির্বাচন করছেন। বিএনপি থেকে মনোনয়ন নিয়েছেন। শুনেছি ফেসবুকে নির্বাচনী প্রচারণায় নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। তাই সরাসরি কেউই তার দলের জন্য প্রচারণা চালাচ্ছে না। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ভিন্নভাবে নিজেদের পেজের প্রমোশন চালাচ্ছেন। চালাতেই পারেন, এটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে যে যাই বলুক, আমি মনে করি নির্বাচনী প্রচারণা এখনো অনেকাংশে সোশ্যাল মিডিয়া নির্ভর হয়ে পরে রয়েছে। তারই কিছুটা প্রমাণ মিললো হেলাল খানের পেজে…
কে হয়ত তাকে বুদ্ধি দিয়েছে, “ফেসবুকে ক্রেডিট কার্ড লাগিয়ে ফ্যানপেজের পোস্ট বুস্ট করা যায়। সিনেমার দুই তিনটা সিন ক্রপ করে পেজে দেন, আর হিট দেখে একটা গানে এক-দেড়শ ডলার বুস্ট দেন। লাখখানেক ভিউয়ার এসে যাবে। সুন্দর প্রমোশন হবে” !
ব্যস, শুরু হয়ে গেলো প্রমোশন। যাকে এই জেনারেশনের ছেলেমেয়েরা চিনে না, তাদেরকে অডিয়েন্স বানিয়েই বুস্ট করা হলো। অচেনা লোককে নায়করুপে হাত পা ছুঁড়তে দেখে পোলাপানও পেয়ে বসছে। ফলাফল, হেলাল খানের পেজের অবস্থা এখন শোচনীয়। কমেন্টে হাজার হাজার গালির সম্ভার। দেখে মনে হবে, হেলাল খানের পেজ খুঁজতে গিয়ে ভুল করে খান হেলালের পেজে চলে এসেছি…
নিচে এরকমই কিছু অশ্রাব্য কমেন্টের স্ক্রিনশট দেয়া হলো –
মজার ব্যাপার হচ্ছে, এখন পর্যন্ত একটা বাজে কমেন্টও ডিলেট করা হয়নি। এই ব্যাপারটা আমাকে অবাক করেছে। আমি নিজেও একটা ভেরিফাইড পেইজ চালাই। কেউ আজেবাজে মন্তব্য করলে সচরাচর আমার ভক্তরা তার ভুল ধরিয়ে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে শাসন করে দেয়। বা আমার পেজের মডারেশন টিমের লোকেরা কমেন্ট রিমুভ করে দেয়। হেলাল খানের পেজ থেকে এরকম কোনো পদক্ষেপই নেয়া হয়নি !
One mistake can destroy everything.
ছোটবেলা থেকে এই প্রবাদ শুনতে শুনতে বড় হয়েছি। তবে এখন বোধহয় নতুন আরেকটা প্রবাদ বেরিয়েছে, পলিটিশিয়ানদের জন্য –
Making mistake is a lot better than not doing anything…
এবার অনেক তারকারা নির্বাচন করছেন। নির্বাচনে গিয়ে অনেকেই বিপক্ষ দলের ভক্তদের ভালোবাসা হারাচ্ছেন। অনেকে ভুলভাল নিয়মে ফেসবুকে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। অনেকে আবার নির্বাচনী প্রচারণা করতে গিয়ে ফেসবুকে আক্রমণেরও শিকার হচ্ছেন। জানিনা সোশ্যাল মিডিয়ায় এই নির্বাচনী প্রচারণার বিষয়টা কিভাবে, কি নিয়মে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। আমার মতে, এগুলো ভালোভাবে মনিটরিং হওয়া উচিত…
আর নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীদেরও উচিত ফেসবুক ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া। এইটা এলাকার পঞ্চায়েত নয় যে ছেলেমেয়েরা মুরব্বিদের শাসন মেনে চলবে। আপনি এখানে হিরো হবেন, নাকি হিরো আলম হবেন, তা নির্ভর করে আপনার এক্টিভিটিজের উপর…
… ভুলভাল নিয়মে নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ হোক ! আমরা যাদেরকে সম্মান করি, তারা সম্মানের জায়গাটা ধরে রাখুক। এই সম্মানটা কারো না যাক !
হেলাল খান আমার অত্যন্ত পছন্দের অভিনেতা। উদাহরণ হিসেবে তাকে দেখাতে আমার খুবই খারাপ লেগেছে। কিন্তু কিছু করার নেই। এটুকুই বলতে চাই, স্যার আপনাকে আমাদের জেনারেশনের প্রত্যেকেই অনেক সম্মান করে। নতুন প্রজন্ম আপনার সম্পর্কে অবগত না। তাদের কাছে আগে আপনার নতুনরুপে পরিচিত হওয়া উচিত। এভাবে সিনেমার ক্লিপগুলো পোস্ট দিয়ে মানুষের সামনে ছোট হয়েন না। এগুলো মেনে নিতে আমাদেরই খারাপ লাগছে…
আপনি বিএনপি হন, আর আওয়ামীলীগ হন, আমরা আপনাকে ভালোবাসি। ঠিক যেমন আমাদের ভালোবাসা সবসময়ই একইরকম থাকবে মাশরাফির জন্য…