সাউথ আফ্রিকার একটি স্থলবেষ্টিত দেশ জাম্বিয়া ! পশুপাখিদের অভয়ারন্য হিসেবে পরিচিত এ দেশটির আরেকটি পরিচয় হচ্ছে এটি বিশ্বের সবচেয়ে লাজুক মানুষদের দেশ। পৃথিবীর সবচেয়ে লাজুক ও ভদ্র মানুষদের দেখা পাওয়া যায় এই জাম্বিয়াতে !
তবে জাম্বিয়া সম্পর্কে অদ্ভুত এবং মজার তথ্যগুলো এটুকুতেই শেষ নয়। জাম্বিয়ানরা কিভাবে মানুষকে আপ্যায়ন করে, খাবার পর কিভাবে হাত ধোয়, কিভাবে বৈচিত্রতার মাঝে তাদের দৈনন্দিন জীবন কাটে, তাও আপনাকে জানতে হবে। চলুন অল্প কথায় জেনে নেয়া যাক…
১. জিরো মিক্সড জেন্ডার এক্টিভিটি : জাম্বিয়াতে নারী ও পুরুষেরা একসাথে সম্মিলিত হয়ে বিছানায় যাওয়া ছাড়া আর কোনো কাজই করেন না। অর্থাৎ পুরুষরা পুরুষদের কাজ করে। নারীরা নারীদের কাজ করে। কেউ কারো কাজে হাত দেয় না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ধরুন একটি সুইমিং পুলে কয়েকটা ছেলে গোসল করছে। একটি মেয়ে এসে সেখানে ঝাঁপ দিলো। সাথে সাথে এক সেকেন্ড দেরী না করেই সব ছেলেরা পুল ছেড়ে উঠে চলে যাবে। এমনকি তারা স্ত্রীর সাথেও সুইমিংপুলে সাঁতার কাটতে নারাজ ! এতটাই লাজুক এ জাতি।
২. সাধারণ শুভেচ্ছা : জাম্বিয়ানরা যখন কারো সাথে দেখা করে বা অতিথিদের আমন্ত্রণ জানায়, তখন তারা সামান্য দুরত্ব বজায় রেখে হাত বাড়িয়ে হাত মেলায়। আমরা যেমন কারো সাথে দেখা হলে জড়িয়ে ধরে কোলাকুলি করি, জাম্বিয়ানরা সেটা করেনা। তাদেরকে কেউ জড়িয়ে ধরলে তারা বেশ বিব্রত হন এবং ক্ষেপে যান।
৩. বিশেষ অতিথির শুভেচ্ছা : জাম্বিয়ায় যদি কারো বাড়িতে আপনি বেড়াতে যান, তাহলে তারা আপনাকে দরজার সামনেই বিশেষভাবে শুভেচ্ছা জানাবে। কিন্তু এরপর ঘরে ঢুকে আপনি তাদের কোনো চেয়ারে বসতে পারবেন না। বসার জন্য তাদের চেয়ার আনার অপেক্ষা করতে হবে। ধোয়ামোছা করে তারা আপনার জন্য বিশেষ চেয়ার নিয়ে আসবে।
৪. সবার খাওয়া শেষ হবার জন্য অপেক্ষা করা : জাম্বিয়ার মূলখাবার হচ্ছে নশিমা (Nshima)। এই খাবারটি সবার সাথে আপনাকে খেতে হবে। সবার আগে যদি আপনার খাওয়া শেষ হয়, তবুও আপনি উঠে যেতে পারবেন না। সবার খাওয়া শেষ হবার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আপনাকে। তারপর একসাথে লাইনে দাঁড়িয়ে হাত ধুতে পারবেন।
৫. দুই হাতে খাওয়া যাবেনা : জাম্বিয়ানরা দুই হাত ব্যবহার করে খাওয়া অপছন্দ করেন। তাদের সামনে দুই হাতে খাওয়া মানে আয়োজককে অপমান করা।
৬. অপমানজনক/আক্রমনাত্মক প্রশ্ন : জাম্বিয়ার মানুষদের হিউমার খুবই কম। সাধারণ একটা উদাহরণ দিয়েই বুঝাচ্ছি। একজন জাম্বিয়ান যদি আরেকজন জাম্বিয়ানের বাসায় অতিথি হিসেবে যান, তাহলে তাকে ভুলেও জিজ্ঞেস করা যাবেনা, “আপনি কি ক্ষুদার্ত?” এধরণের প্রশ্ন করলে পেটে শত ক্ষুদা থাকলেও অতিথি সেটাকে অপমানজনক প্রশ্ন বিবেচনা করে খেতে অসম্মতি জানিয়ে উঠে চলে আসবেন। তাই জাম্বিয়ানদের কখনো খাবার সাধতে নেই, বা কিছু খাবে কিনা জিজ্ঞেস করতে নেই। সরাসরি তাদের হাতে খাবার তুলে দেয়াই ভালো।
৭. রেসিপি/খাবারের আইটেম জিজ্ঞেস না করা : জাম্বিয়ানদের বাসায় অতিথি হিসেবে গেলে খাবারের আইটেমে কি কি আছে, তা জিজ্ঞেস না করাই উত্তম। এতে তারা অপমানবোধ করেন।
৮. খাবার খেয়ে ধন্যবাদ না দেয়া : জাম্বিয়া তে কারো বাসায় বা কোনো রেস্টুরেন্টে খাবার খেয়ে আপনি বারবার ধন্যবাদ জানাতে পারবেন না বা খাবারের তারিফ করতে পারবেন না। খাবার শেষে একেবারে বের হয়ে যাবার সময় “Zikomo” বলে একটু ধন্যবাদ জানাতে পারেন শুধু। তা নাহলে তারা এটাকে খাবার দানের লজ্জা হিসেবে বিবেচনায় নিবে।
৯. খাবার একেবারে শেষ না করা : জাম্বিয়ায় খাবার খেয়ে আপনি পুরো প্লেট ফাঁকা করতে পারবেন না। সামান্য খাবার প্লেটে অবশিষ্ট রাখতে হবে। রান্নাঘরে যে শিশুটি প্লেট ধোয়ার কাজ করে, এই খাবারটি তার পেটে যাবে !
১০. নীরব থাকা : জাম্বিয়ানরা অতিরিক্ত কথা পছন্দ করেনা। বাড়তি কথা বলতে তারা খুবই লজ্জা পায়। তাই প্রয়োজনের বাইরে অন্য কথা বলা, রসিকতা বা হাসিঠাট্টার চেষ্টা করা থেকে বিরত থাকুন। নাহলে তাদের ক্রুদ্ধ চেহারা দেখার জন্য আপনাকে তৈরি হতে হবে !
আরো কিছু মজার তথ্য
- জাম্বিয়ার লেক কারিবা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মানবসৃষ্ট লেক। প্রথম দেখায় আপনি এটাকে সাগর ভেবে বসবেন।
- পুরো দেশটির টেলিফোন ডিরেকটরি মাত্র এক ইঞ্চি সমান পুরুও হবেনা !
- ভিক্টোরিয়া ফলসের কারণে জাম্বিয়ার পাশ্ববর্তী ফরেস্টে প্রতিদিন দিনরাত ২৪ ঘন্টাই অনবরত বৃষ্টি হতে থাকে।
- জাম্বিয়ানরা গল্প বলার মাধ্যমে সময় কাটাতে পছন্দ করেন। এছাড়া আর অন্য কোনো বিনোদন ব্যবস্থার দারস্থ তারা হন না।
- জাম্বিয়া পৃথিবীর অন্যতম সবচেয়ে দরিদ্র দেশ, যেখানে এখন পর্যন্ত এইডসের দেখা খুব একটা মেলেনি !