হযরত খিজির (আঃ) তাঁর সম্পর্কে কমবেশি সকলেই জানেন। তাঁর সম্পর্কে বিভিন্ন হাদীস, বই ও অনলাইন রিসোর্স ঘাটাঘাটি করে খুব কম তথ্যই পাওয়া যায়। প্রকৃতপক্ষে উনার সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে তেমন বেশি তথ্য নেই বললেই চলে। সবচেয়ে বড় বিষয়টি হচ্ছে, উনি কি আজও জীবিত আছেন কি না, তা নিয়েই রয়েছে বড় সংশয় !
হযরত খিজির (আঃ) কে ছিলেন, সে বিষয়ে ওলামাদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। কোনো কোনো ওলামার মতে তিনি ফেরেশতা ছিলেন, তবে জমহুর ওলামাগন এ মতের বিরোধীতা করেছেন। জমহুরের মতে তিনি মানুষ ছিলেন তবে কোনো কোনো ওলামা বলেন তিনি মানুষ ছিলেন এবং আল্লাহর ওলী ছিলেন। আর জমহুর এর অধিকাংশের মতে তিনি আল্লাহর নবী ছিলেন। এবং তিনি এখনও জীবিত আছেন। তিনি মৃত্যু বরণ করেননি। যদিও অন্যান্য নবীগনের উপর কিছুক্ষনের জন্য হলেও মৃত্যু এসেছে। তবে ঈসা (আঃ), ইদরিস (আঃ), ইলিয়াস (আঃ), খিযির (আঃ) – এই ৪ জন নবীর উপর মৃত্যু সংগঠিত হয়নি। সুতরাং হযরত খিজির (আঃ) আল্লাহর নবী ছিলেন এবং এর পক্ষে কোরআন ও হাদীস শরীফের দলিলও রয়েছে…
যারা বলেন, খিজির (আঃ) জীবিত, তাদের বক্তব্য ব্যক্ত করা হলো :-
বুখারী শরীফের সহীহ্ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, হযরত খিজির (আঃ) জীবিত এবং তিনি মানুষের সাথে মিলিতও হন, নবী করিম (সাঃ) এরশাদ করেছেন, খিজির (আঃ) আল্লাহর হকুমে আবে হায়াত পান করেছেন, সুতরাং তিনি কেয়ামত পযন্ত জীবিত থাকবেন। তিনি মানুষের সাথে মানুষের সুরতে উপস্থিত হয়ে মুলাকাত করে থাকেন। কোনো কোনো সময় নিজের পরিচয় দিয়ে থাকেন। বলেন, আমি হলাম খিজির ! আর কোনো কোনো সময় অনেকে উনার সাথে মিলিত হয়ে যান, সাক্ষাৎপ্রাপ্ত হন, কিন্তু তারা বুঝতেও পারে না যে উনি খিজির (আঃ)।
দামেস্কের একটি মসজিদ, যে মসজিদের নামই হল মসজিদে খিজির, যাকে জামে মসজিদে দামেশকও বলা হয়। হাদীস শরীফে আছে সে মসজিদের মিনারে ফজরের নামাজের সময় হযরত ঈসা (আঃ) আসমান থেকে নেমে আসবেন। যখন ফজর নামাজের একামত দেয়া শেষ হবে। বনি উমাইয়ার একজন বাদশাহ নাম অলিদ বিন আবদুল মালিক তিনি বাদশাহ থাকাকালীন সময় এ মসজিদে তশরীফ নিয়ে আসেন। তিনি আসার পর সৈন্যদের বলে দেন তোমরা আমি মসজিদে থাকাকালীন কাউকে প্রবেশ করতে দিও না আমি একাকীই নামাজ আদায় করব। তিনি একাকী নামাজ পড়তে লাগলেন কিন্তু কিছুক্ষন পর দেখলেন তার অদুরে অন্য একজন লোক নামাজ আদায় করছেন, তখন তিনি খুব রাগতভাবে নামাজ আদায় করলেন মনে মনে বলত লাগলেন আমি সিপাহিদের বলে দিয়েছি আমি থাকাকালীন মসজিদে যেন কেউ প্রবেশ না করে কিন্তু এ লোকটিকে তারা প্রবেশ করতে দিল কেন? এসব চিন্তা করতে করতে তিনি নামাজ শেষ করলেন আর শেষ করে তিনি সে লোকটিকে আর মসজিদে দেখতে পেলেন না। তবুও বাদশাহ সিপাহিদের প্রশ্ন করল তখন সিপাহিরা উত্তর দিল হযরত যিনি আপনার পাশে নামাজ পড়েছেন তিনি কোন সাধারন লোক না তিনি হলেন হযরত খিজির (আঃ)। এভাবে খিজির (আঃ) এর সাথে অনেকেরই সাক্ষাৎ হয়ে থাকে।
অপর দল লোকজন বলে থাকেন :-
হযরত খিজির (আঃ) নবী ছিলেন ঠিক আছে। কিন্তু তিনি যে বর্তমানেও জীবিত আছেন তা ঠিক না। এ বিষয়ে যে সব হাদীস রয়েছে তার কোনোটি দূর্বল, কোনোটির রাবি সন্দেহযুক্ত, কোনটি বাতিল, তাদের দলিল হল ইমাম আহমদ (রাঃ)। তার মুসনাদে জাবির ইবন আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন ৷
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যে পবিত্র সত্তার হাতে আমার প্রাণ, তাঁর শপথ, যদি মুসা (আঃ) আমার যমানায় বেঁচে থাকতেন, তাহলে আমার অনুসরণ ব্যতীত তার কোনো উপায় থাকত না।
এ হাদীস শরীফ দ্বারা তারা যুক্তি প্রদশন করেন যে যদি নবীগণ রাসুলুল্লাহ (সা)-এর যমানায় জীবিত থাকতেন, তাহলে তারা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর অনুসারী হতেন এবং তার নিষেধের আওতাধীন থাকতেন ৷ যদি খিজির (আঃ) জীবিত থাকতেন তাহলে তিনি মুহাম্মাদ (সঃ) এর উম্মত ও তাঁর শরীয়তের অনুসারীদের অন্তর্ভুক্ত হতেন ৷
অপর একটি যুক্তি হল তাও বুখারী শরীফের হাদীস , একদিন নবী করিম (সাঃ) সাহাবীদের বলেন ১০০ বছর পর তোমাদের মধ্যে হতে কোনো মানুষ বেঁচে থাকবেনা । এ থেকে বুঝা যায়, খিজির (আঃ) ও যেহেতু মানুষ সুতরাং তিনিও বেঁচে থাকার কথা নয়। তিনি যদি আমাদের নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর জামানায়ও বেঁচে থাকেন, তবুও তিনি তখন থেকে ১০০ বছরের মধ্যে ইন্তেকাল করেছেন।
সুতরাং যারা বলে খিজির (আঃ) জীবিত, হজ্ব করেন মদীনায় মানুষের সাথে মোলাকাত করেন মুসাফিরদেরকে সাহায্য করেন। মনে রাখা উচিৎ, এমন কোনো কথা সহীহ্ নয়, খিজির (আঃ) একজন নবী ছিলেন, তিনি ইন্তেকাল করেছেন।
খিজির (আঃ) ইন্তেকাল করেছেন বলে যারা অভিমত পেশ করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন, ইমাম বুখারী (রঃ), ইবরাহীম আল হারবী (রঃ), আবুল হুসায়ন ইবনুল মুনাদী (রঃ), ইবনুল জাওযী (রঃ)৷ ইবনুল জাওযী (রঃ) এ ব্যাপারে অধিকতর ভুমিকা নিয়েছেন। এ সম্পর্কে তিনি একটি কিতাব লিখেছেন। এতে বিভিন্ন প্রকারের দলিল রয়েছে। সে দলিলসমুহের একটি হল আল্লাহর বাণী :-
“আমি তোমার পূর্বেও কোনো মানুষকে অনন্ত জীবন দান করিনি।” – (সুরা আম্বিয়াঃ ৩৪)
সুতরাং খিজির (আঃ) মানুষ হয়ে থাকলে তিনিও অবশ্যই এই সাধারণ নিয়মের অন্তর্ভুক্ত হবেন ৷ আর বিশুদ্ধ দলীল ব্যতীত তাকে ব্যতিক্রম বলে গণ্য করা যাবেনা। সাধারণ নিয়ম হচ্ছে ব্যতিক্রম না থাকা যতক্ষণ না নবী কারীম (সাঃ) থেকে তাঁর সাপেক্ষে কোনো দলীল পাওয়া যায়। খিজির (আঃ) এর ক্ষেত্রে এরুপ কোনো ব্যতিক্রমের প্রমাণ পাওয়া যায় না।